জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের প্রতি মুহূর্তের নিষ্ক্রিয়তা মানবজাতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে নতুন প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকালে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে ‘অ্যাকশন ফর সারভাইভাল: ভালনারেইবল নেশন্স কপ-২৫ লিডার্স’ শীর্ষক সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে আমাদের শিশুরা ক্ষমা করবে না। আমাদের (বিশ্ব নেতাদের) প্রতি মুহূর্তের নিষ্ক্রিয়তা পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের জীবিত মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কাজ করার এখনই সময়।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের জন্য এক নির্মম বাস্তবতা। এটি এখন মানবজীবন ও পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আছি আমরা, সম্ভবত আমাদের সময়টা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ সময়।

তিনি বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন প্রতিটি দেশের অস্তিত্বের ওপর হুমকিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব আক্রান্ত দেশগুলো।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে অভিবাসী সংকট মোকাবিলায় একটি যথাযথ কাঠামো তৈরি করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, কার্যকর অভিযোজন কৌশল অনুযায়ী অভিবাসীদের মাইগ্রেশন হলে আমরা অবশ্যই এর প্রশংসা করবো। আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের স্থানান্তর ও সুরক্ষা নিশ্চিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে মনোযোগ দেওয়া দরকার। জলবায়ু পরিবর্তনে বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রয়োজনে আমাদের একটি উপযুক্ত কাঠামো তৈরি নিয়ে আলোচনা শুরু করা দরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা সর্বজনস্বীকৃত যে জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুতর প্রভাব মানব অভিবাসনের ওপর পড়ছে। সহিংস সংঘাতের চেয়েও চরম আবহাওয়ার বেশি মানুষকে স্থানচ্যুত করছে।

ধীরে ধীরে সমুদ্র-স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি ও মরুকরণের মতো ঘটনার দিকে বিশ্বের মনোযোগ কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ভারসাম্যহীনতা সংশোধনে আমাদের অবশ্যই একত্রে কাজ করতে হবে।

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে আছি যেখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের দাবি রাখে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তারা তা পাচ্ছে না।

সিভিএফ এবং ভি-২০ দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ত্রিভুজাকারী সহযোগিতার দুর্দান্ত উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বর্তমান অর্জনগুলোকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের ১.১ মিলিয়ন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্য পরিবেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ ধ্বংসের সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, ঝুঁকি, প্রভাব ও মোকাবিলার সক্ষমতা অভাবের ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা মানদণ্ড ঠিক করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রধান দূষণ বা কার্বন নির্গমনকারীরা দূষণ কমাতে চরম অনিহা দেখাচ্ছে যা আন্তর্জাতিক জলবায়ু শাসনব্যবস্থা ধ্বংস ও বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে আরও বিপদের ঝুঁকিতে ফেলবে। সুতরাং, নিষ্ক্রিয়তার জবাবদিহিতা চেয়ে আমাদের দ্বিধা করা উচিত নয়।

২০২০ সালে নেদারল্যান্ডস-এ ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশসন সামিটে অভিযোজন প্রচেষ্টা আরও শক্তিশালী হবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সদস্য দেশগুলো সম্মত হলে বাংলাদেশ জলবায়ু ভালনারেবল ফোরামের প্রেসিডেন্সির দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোকাবিলার সক্ষমতার অভাব, বিশেষ করে ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধ্বংসযজ্ঞে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর দায় খুবই নগণ্য বা কোনো অবদানই নেই। এটি গুরুতর অন্যায় একথা বিশ্ব সম্প্রদায়কে স্বীকার করতে হবে।

ইউএনএফসিসিসির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ইউএনএফসিসিসি (ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ) খুবই ধীর ও অত্যন্ত অপ্রতুল। আমাদের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো অভিযোজনের সহায়তায় কদাচিতই উদ্যোগ নেওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here