করোনা মোকাবিলায় বিধবাভাতা, বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধীভাতা, ভিজিএফসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সুরক্ষার জন্য যেসব ভাতা বা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তা চালু থাকবে। এর বাইরে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, চায়ের দোকানদার, দিনমজুরের মতো খেটে খাওয়া মানুষ, যারা ভাতা পান না, কিন্তু করোনায় কাজ বন্ধ হয়ে গেছে, এমন অভাবী নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তদের ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়া হবে। এ জন্য ১০ টাকা কেজি চালের রেশনকার্ড দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময় এই নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের উদ্যোগে খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় এ কাজ বাস্তবায়ন করবে। স্থানীয় প্রশাসন, নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে এ কাজ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না, কাজ করে খেতে পারছে না, জীবন-জীবিকার পথ অনেকটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো। যারা চাকরিজীবী বা বেতন পাচ্ছেন, তাদের কথা আলাদা। প্রতিদিন যারা দিন আনি দিন খাই, সেই ধরনের ছোটখাট ব্যবসা-বাণিজ্য করে যারা খেত, সামান্য কিছু টাকা উপার্জন করত, তাদের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। এভাবে বহু লোককে কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। আমাদের সাধ্যমতো আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা ১০ টাকায় চাল বিতরণের ব্যবস্থা করেছি। আমরা বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। সেই ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। আমাদের সামাজিক সুরক্ষামূলক যে কাজগুলো, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধীভাতাসহ- এমন ভাতাগুলো অব্যাহত থাকবে। ১০ টাকার চালের যে রেশনকার্ড আছে, সেটাও অব্যাহত থাকবে। এর বাইরে যারা হয়তো ভাতাপ্রাপ্ত না কিংবা যারা অনুদান নেবে না, কিন্তু তারা কিনে খেতে চায়, তাদের জন্য চালের ব্যবস্থা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যারা দৈনন্দিন কাজ করে খেত, এখন সেই উপায় বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের খুঁজে বের করে তালিকা করতে হবে। আমার অফিস থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং দুর্যোগ মন্ত্রণালয়কেও নির্দেশ দিতে হবে। যারা এ ধরনের একেবারে নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তের মধ্যে পড়ে, তাদেরও ১০ টাকা কেজি চালের রেশনকার্ড করে দিতে হবে।’

কীভাবে দেয়া হবে তা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু আমরা যদি রেন্ডমলি দিতে থাকি, আমাদের কিছু মানুষের এত অভ্যাস খারাপ আছে, দেখা যাবে এগুলো কিনে নিয়ে নয়-ছয় করে ফেলেছে। ঠিক সুনির্দিষ্ট লোকটার কাছে পৌঁছাচ্ছে না। এখন যদি তাদের জন্য কার্ড তৈরি করে দিই, সবারই আইডি কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) আছে। আমরা যদি কার্ড করে দিই, কার্ডের মাধ্যমেই সকলের কাছে আমরা স্বল্পমূল্যে খাদ্য পৌঁছে দিতে পারব। যে তালিকাটা থাকলে সুবিধা হবে যে, তাদের আমরা জানতে পারব এবং সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে দিতে পারব।’

সার্বিক ব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই ক্ষেত্রে আমাদের প্রশাসন উদ্যোগ নেবেন। আমাদের জনপ্রতিনিধিরাও থাকবেন প্রত্যেক এলাকার। পাশাপাশি আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা থাকবে। আমাদের যারা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আছেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আছেন, অর্থাৎ এমপি, চেয়ারম্যান, মেয়র, কমিশনার- যারাই আছেন, সকলের কাছে আমার অনুরোধ, সকলকে মিলে কমিটি করে দিতে হবে। প্রত্যেকটা ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি থাকবে। আমরা সামাজিক সুরক্ষার যেসব ভাতা দিই, সেগুলো অব্যাহত থাকবে। এর বাইরে যে শ্রেণিটা, যারা হয়তো নিজেরা খেটে খেত, রিকশাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা থেকে ছোট দোকানদার বা চায়ের দোকানদার- এ রকম অনেক মানুষ জীবিকা করে খেত। তাদের একটা তালিকা করতে হবে। অনেকে হাতপাততে আসবে না, অনেকে চাইতে পারবে না, তাকে মুখ বুজে কষ্ট সহ্য করতে হবে। তারা যেন কষ্টে না থাকে। তাদের বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here