চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি (উপ-সচিব) বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর নারী-পুরুষ সকলের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন, কর্মজীবি ল্যাকটেটিং মাদার ও তাদের সন্তানদের সুচিকিৎসা প্রদান ও নারীর ক্ষমতায়নসহ উন্নয়নমুখী কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। একটা সমাজকে পরিবর্তন করতে নারীরাই অগ্রনী ভূমিকা পালন করে থাকে। সংসারের যাবতীয় কাজ মায়েদের করতে হয়। কর্মজীবি ল্যাকটেটিং মাদারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তিন বছর মেয়াদী প্রকল্প গ্রহণ করে প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে ভাতা প্রদান অব্যাহত রেখেছে সরকার। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রেখে শিশুকে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দেয়ার অধিক দায়িত্ব মায়েদের। জন্ম নেয়ার পর পর শিশুকে বুকের শাল দুধ খাওয়াতে হবে। কারণ শাল দুধ শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করে। একটি শিশু সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে মায়ের দুধের বিকল্প নেই। পাশাপাশি আতংকিত না হয়ে ও কোন ধরনের গুজবে কান না দিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য নিজের বাসা-বাড়ী ও আঙ্গিনা সবসময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পাড়া-মহল্লাবাসীকে এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। আজ ৭ আগষ্ট ২০১৯ ইং বুধবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল কর্মসুচীর আওতায় ২০১৮-২০১৯ চক্রের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় উপকারভোগী মায়েদের নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে অনুষ্টিত আলোচনা সভা ও ৫দিন ব্যাপী হেলথ্ ক্যাম্পের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে উপ-পরিচালকের কার্যালয় অনুষ্টানের আয়োজন করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. জি.এম তৈয়ব আলী বলেন, শিশুকে সুস্থ সবল রাখতে হলে জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এটা শাল দুধ ও বাচ্চার প্রথম টিকা। জন্মের পর ৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ ছাড়া অন্য খাবার দেয়া যাবেনা। এর পর দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য সুষম ও পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। তাহলে শিশু সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে। দুধের বিকল্প হিসেবে প্রচারনা চালিয়ে যে সব দুধ বাজারে বিক্রয় করা হয়, সেগুলো শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবেনা, কোন অসুবিধা হবেনা। ডেঙ্গু জ্বরে আতংকিত হওয়ার কিছুই নেই। জ্বর, রক্তক্ষরণ, তীব্র মাথা ব্যাথা ও চোখে ফ্যাকাশে দেখালে দ্রুত হাসপাতালে চলে যেতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিজের বাসা-বাড়ী, আঙ্গিনা ও কর্মস্থল নিয়মিত পরিস্কার রাখতে হবে। যেকোন পাত্রে বা জায়গায় জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে। এয়ার কন্ডিশনার, ফ্রিজ, ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, ড্রাম,পরিত্যক্ত টায়ার, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, নারিকেলের মালা, কন্টেইনার, মটকা, ব্যাটারী শেল ও পরিস্কার পানিতে এডিস মশা ডিম পারে। এগুলো সবসময় পরিস্কার রাখতে হবে। যে কোন উপায়ে এডিস মশা ধ্বংস করে আমাদেরকে জয়ী হতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর জেসমিন পারভীন জেসি বলেন, পরিকল্পিত পরিবার গঠন, নারীদের অবস্থান সুদৃঢ়করণ ও বর্তমান প্রজন্মের সন্তানদের যত্ন নিয়ে আগামীতে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে নারী-পুরুষ উভয়কে এগিয়ে আসতে হবে। যারা কর্মজীবি মহিলা তাদেরকে সব সময় স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অঞ্জনা ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন সফল নারী। তিনি উন্নয়নের রোল মডেল। নারীদের বাদ দিয়ে এদেশ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। তাই নারী-পুরুষ সকলকে সরকারের উন্নয়নের মহাসড়কে সামিল হতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে যতদিন থাকবে দেশ, পথ হারাবেনা বাংলাদেশ।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অঞ্জনা ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে ও স্বাগতা বড়ুয়া নদীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও হেলথ ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. জি.এম তৈয়ব আলী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জেসমিন পারভীন জেসি ও ইলমা’র প্রধান নির্বাহী নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু। বক্তব্য রাখেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম অফিসার নীতা চাকমা, সমাজ উন্নয়ন সংস্থা-সমতা’র সভানেত্রী মোমেনা আক্তার নয়ন ও সবুজের যাত্রা’র সভানেত্রী সায়রা বেগম। অনুষ্টানে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মচারী ও নারী উন্নয়নমুলক বেসরকারী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। শেষে ফিতা কেটে ৫দিনব্যাপী হেলথ্ ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি (উপ-সচিব)সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। এর পর শিশুসহ দুই জন মহিলাকে চিকিৎসা-সেবা প্রদানের মাধ্যমে হেলথ্ ক্যাম্পের আনুষ্টানিক কার্যক্রম শুরু করেন জেলা সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. জি.এম তৈয়ব আলী। ৫দিন ব্যাপী হেলথ্ ক্যাম্পে সিটি কর্পোরেশন এলাকার মোট ৩ হাজার উপকারভোগীকে চিকিৎসা-সেবা প্রদান করা হবে। উদ্বোধনী দিনে মোট ৭শ’ জন ল্যাকটেটিং মাদার ও তাদের শিশুকে চিকিৎসা-সেবা প্রদান করেন সরকারী মেডিকেল অফিসার ডাঃ মনোয়ারা সুলতানা রোজী, ডাঃ দেবারতী চৌধুরী ও ডাঃ মিথিলা কানুনগো। এ সময় ল্যাকটেটিং মাদারদের সাথে থাকা শিশুদের মাঝে প্রসাধনী ও খাবার সামগ্রী বিতরণ করেন ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি (উপ-সচিব)। আগামীকাল ৮ আগষ্ট ২০১৯ ইং বৃহস্পতিবার নগরীর নাসিরাবাদস্থ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কার্যালয়ে ৫’শ জন ও আরো ১ হাজার ৮’শ জন উপকারভোগীকে পবিত্র ঈদ-উল আযহার পরে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসা-সেবা প্রদান করা হবে।