নারায়ণগঞ্জে ইতোমধ্যে ১০টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন পর্যায়ের ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত। সিভিল সার্জনসহ একজন ডাক্তারের পরিবারের অন্য তিন সদস্যও আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিদিন বাড়ছে এ সংখ্যা। এতে জেলার চিকিৎসা ব্যবস্থায় নেমে এসেছে এক ধরনের স্থবিরতা। যোগ দিচ্ছেন না নতুন ডাক্তাররাও।
জানা যায়, সম্প্রতি জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম, সদর জেনারেল হাসপাতালের একজন ডাক্তার, একজন নার্স, একজন ওয়ার্ড বয়, একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক, খানপুর ৩শ শয্যা হাসপাতালের একজন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের পিএ, হাসপাতালের আরো ১০ থেকে ১৫ জন হোম কোয়ারেন্টিনে, শহরের পলি ক্লিনিকের মালিক ও বিএমএ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ডা. শাহনেয়াজসহ শহরের অনেকগুলো ক্লিনিক-হাসপাতালের চিকিৎসক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। তারা সবাই চিকিৎসাধীন। এ অবস্থায় কিছুটা স্থবিরতা চলে এসেছে জেলার স্বাস্থ্যসেবায়।
নারায়ণগঞ্জ শহরের বেশ কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার কর্মীরা করোনা আক্রান্ত হওয়ায় ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে যেগুলো চালু রয়েছে সেগুলোও বন্ধ হওয়ার পথে বলে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোর মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, শহরে প্রায় ৪২টি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা (হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার) প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০টির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় সম্প্রতি সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সবশেষ পাওয়া তথ্যমতে, শহরের মেডিপ্লাস ডায়গনস্টিক সেন্টারের একজন ডাক্তার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, পলি ক্লিনিকের ওটি বয় করোনা পজিটিভ হয়ে একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, এ ক্লিনিকের আরো চারজন কর্মীর স্যাম্পল কালেক্ট করা হয়েছে করোনা টেস্টের জন্য, শহরের ডিআইটি এলাকার আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন করোনা পজিটিভ হয়ে ঢাকার কুর্মিটোলায় চিকিৎসাধীন, শাহীন জেনারেল হাসপাতালের ম্যানেজার ইতোমধ্যে আইসোলেশনে, একতা ডায়গনস্টিক সেন্টারের সব কর্মী হোম কোয়ারেন্টিনে। এছাড়া করতোয়া মেডিক্যালসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেরও একই অবস্থা। এসব কারণে ইতোমধ্যেই এই ক্লিনিক হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোর কয়েকটি লকডাউন (বন্ধ) ঘোষণা করা হয়েছে।
এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত তারা করোনা আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্ন টেস্ট করতে গিয়ে, তাদের নানাভাবে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়েই আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকেই রোগ গোপন করে চিকিৎসাসেবা নিতে এসে এ বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দেন তাদের। এ অবস্থায় হাসপাতালগুলোকে আইসোলেট না করে সব ধরনের রোগীদের হয়তো আর সেবা দিতে পারবেন না তারা। করোনার চিকিতসায় মূলত প্রয়োজন আইসোলেশন হাসপাতাল।
বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল ও ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক শাহীন মজুমদার বলেন, আমাদের এখানে ৪২টির মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১০টি ইতোমধ্যে লকডাউন হয়ে গেছে। এদের কর্মীরা কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত আবার কয়েকজন কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। আমরা তো খোলা রাখতে চাচ্ছি। কিন্তু কর্মীরা যদি আক্রান্ত হয়ে পড়ে তাহলে তো আমাদের পক্ষেও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।
তিনি আরো বলেন, করোনা আক্রান্ত বা যারা করোনার উপসর্গ নিয়ে আসেন তাদের যদি আমরা টেস্ট করতে না পারি কিংবা তাদের যদি আইডেন্টিফাই করতে না পারি সে ক্ষেত্রে তাদের সংস্পর্শে এসে কর্মীরা শঙ্কায় পড়ছেন। যদিও আমাদের কর্মীরা গ্লাভস, মাস্ক এসব ব্যবহার করছেন।
‘করোনার রোগীদের যেখানে রাখা হবে বা যে পথে তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে সেপথে অন্য সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হলে তারাও করোনা আক্রান্তের হুমকির মুখে পড়বেন। এ অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরণ করে আমরা দ্রুত সবগুলো ক্লিনিক হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টার খুলতে চেষ্টা করবো, এজন্য সংশ্লিষ্টদের সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।’
জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০৭ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনজন ও মারা গেছেন ৯ জন। দেশে মোট আক্রান্ত ৬২১, মৃত্যু ৩৪।