অনলাইন ডেস্ক
বইছে নির্বাচনী হাওয়া। রাষ্ট্রের স্বার্থে নিজের ভোট প্রদানের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সরকার নির্বাচিত করা প্রত্যেক সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ভোটাধিকারও এক ধরণের মানবাধিকার। এই মানবাধিকার আদায়ের দায় রাষ্ট্রের সকল ভোটারের। একজন ভোটার ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেন। সেই জনপ্রতিনিধি ভোটারের নিরাপত্তা, অধিকার, সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেন। রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য কাজ করেন। নাগরিকদের তাই ভোটের সময় থাকে বাড়তি কিছু দায়িত্ব। তবে শুধু কি ভোটের সময়েই সীমাবদ্ধ একজন নাগরিকের দায়িত্ব? অবশ্যই নয়।
সচেতন নাগরিককে রাষ্ট্রের কল্যাণ ও নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলেই হবে না। তাকে তার রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বশীলতার প্রকাশও ঘটাতে হবে। সুনাগরিক হিসেবে নিজের দায়িত্বশীলতা অনুধাবনের উপযুক্ত সময় নির্বাচন। এই সময় কিছুটা হলেও ভোটার এডুকেশনের চর্চা করা হয়। আর ভোটার এডুকেশনের চর্চার এই সময়ে নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করার সামান্য এই আয়োজন। লিখেছেন ফাতিন আহমেদ।
ভোটাধিকার প্রয়োগে সচেতন
একজন ভোটার কাকে ভোট দেবেন? তা তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা দ্বারা নির্ধারিত হওয়ার কথা। তবে আমাদের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় ভিন্নচিত্রই দেখা যায়। অনেক প্রার্থী শুধু নির্বাচনী পোস্টার বা তার এলাকার কোনো চেনা রাজনীতিককে দেখেই ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এমনটি করা ঠিক নয়। নির্বাচনের সময় উপযুক্ত প্রার্থীকে যাচাই-বাছাই করার অন্যতম বড় দায়িত্ব ভোটারের। ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের আইনপ্রণেতা কেমন হবেন তা বিচার করেই তাকে প্রার্থী বাছাই করতে হয়। এজন্য নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের ক্যাম্পে গিয়ে খোঁজ নিতে হয়, প্রার্থীর রাজনৈতিক মনীষার বিষয়ে খোঁজ নিতে হয়।
শুধু তাই নয়, প্রার্থীর হলফনামাও যাচাই-বাছাই করতে হয়। একজন নাগরিককে রাষ্ট্রের অন্য খুঁটিনাটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা জরুরি। ভোটের সময় এই জ্ঞান অনেক কাজে আসে। এমনকি অন্য কাউকে পরামর্শ দেওয়া বা ভোটের গুরুত্ব বোঝাতেও সহযোগিতা করে। কারো ভোট দেওয়ার ভাবনাকে জোর করে প্রভাবিত করার সুযোগ আমাদের নেই। তবে কেউ সচেতন হলে অন্যকেও ভোটাধিকার প্রয়োগে বিচক্ষণ হওয়ার বিষয়ে সচেতন করতে পারে। এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত কর দেওয়া
রাষ্ট্রের সুবিধাভোগী হিসেবে প্রত্যেককেই কর দিয়ে হয়। আয়কর তার একটি। আবার অনেক জরুরি কাগজের জন্যও করের হিসেব জমা দিতে হয়। রাষ্ট্রীয় কর ও কর রিটার্নের এসব বিষয়ে আপনাকে ধারণা রাখতে হবে। নাহলে আপনি পরবর্তীতে সমস্যায় পড়তে পারেন। একদিকে নাগরিকের স্বার্থ তো রয়েছেই সঙ্গে রয়েছে সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ।
রাষ্ট্রের সংবিধান জানুন
একটি সংবিধান একটি দেশে একসাথে বসবাসকারী মানুষদের দ্বারা গৃহীত আইন লেখা থাকে। সংবিধান সরকার ও নাগরিকদের মধ্যে আস্থা ও সমন্বয় তৈরি করে। এটি একটি দেশের জন্য সরকারের প্রকার এবং এটি কীভাবে কাজ করা উচিত তা নির্দিষ্ট করে বলে দেয় এবং সরকারের ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ করে দেয়।
সংবিধানে রাষ্ট্রে একজন নাগরিক কি কি করবেন তা বলে দেওয়া থাকে। তাকে কি কি নিয়ম মেনে চলতে হবে, তিনি কি কি সুযোগ-সুবিধা পাবেন তাও বলে দেয়া থাকে। আবার নাগরিক হিসেবে সরকার আপনার কাছে কি কি বিষয়ে জবাবদিহি করবে তাও বলা থাকে। তাই প্রতিটি নাগরিককে সংবিধান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা উচিত। শুধু সংবিধানের দোহাই দিয়ে অনেকে অনেক সময় জটিলতা তৈরি করেন। জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে নাগরিকদের সংবিধান সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।
রাষ্ট্রীয় সুবিধা সম্পর্কে জানুন
রাষ্ট্র নাগরিকদের জন্য নানা সুবিধা দেয়। নানা সেবা কিংবা সুযোগের মাধ্যমে নাগরিকদের কর্মসংস্থান, পেনশন, বৃত্তি, ভাতা, আইনি সুবিধা দিয়ে থাকে। এসব রাষ্ট্রীয় সুবিধা সম্পর্কে জানুন। খোঁজ নিন। আপনি জানলে অন্যদের জানানোও সহজ হবে।
সংবাদপত্র পড়ুন
সংবাদমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সংবাদপত্রের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের নানা তথ্য আমরা জ্ঞাত হই। এই তথ্যের সঠিক ব্যবহার করে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজ সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়। সংবাদমাধ্যম পড়লে একাধিক ভাষা শেখার সুযোগ রয়েছে। বিশেষত অধিকাংশ পত্রিকা বাংলায় হওয়ায় বাংলা ভাষায় পারদর্শী হওয়ার সুযোগ আছে। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানলে চাকরির পরীক্ষায় সাহায্য হয়। রাজনীতি সচেতন হওয়ার বিষয়টিও কাজ করে। সবচেয়ে বড় কথা, সুনাগরিক হওয়ার জন্য রাজনীতি সচেতন হওয়া জরুরি। পত্রিকা আমাদের রাজনীতি সচেতন হওয়ার সুযোগ করে দেয়। নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের সম্পর্কে বা সার্বিক নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতেও সংবাদমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।