বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে নভেম্বর মাসের ঝড়গুলোই বেশি ভয়ংকর ছিল। ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় বাদে ছোট-বড় মিলিয়ে অসংখ্য ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে হিসাব কষে দেখা গেছে নভেম্বর মাসে আঘাত হানা প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়েই জান-মালের বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশ।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ধেয়ে আসায় মোংলা ও পায়রা বন্দরসহ উপকূলীয় এলাকায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছেন আবহাওয়া অধিদফতর। নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের।

শনিবার (৯ নভেম্বর) মধ্যরাত নাগাদ ঘূর্ণিঝড় বুলবুল উপকূলীয় ৯ জেলায় আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশের সব থেকে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্নিঝড়টি ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় গোর্কী। যে ঝড়ে ছয় লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। যেটিকে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় বলেও আখ্যায়িত করা হয়।

এরপর ১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বরের ঝড়। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে দেশে যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সর্বনাশা বন্যা হিসেবে পরিচিত। ওই সময়ে প্রায় আট হাজার মানুষ প্রাণ হারান। বাংলাদেশের ৭০ ভাগ ফসল নষ্ট হয়। এছাড়া ৭০ হাজার গবাদিপশু, ১৫ হাজার হরিণ আর রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মৃত্যু হয়।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর আরেকটি বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের নাম সিডর। এটি ২৬০ কিলোমিটার বেগে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে। এতে আবারও লণ্ডভণ্ড হয় বাংলাদেশ। সিডরে সাড়ে ৩ হাজার মানুষ নিহত হন। জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যায় বেড়িবাঁধ, ভাসিয়ে নিয়ে যায় প্রায় ৭০ হাজার বাড়িঘর, বিনষ্ট হয় ৩৭ হাজার ৬৪ একর জমির ফসল।

নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়গুলো ছাড়া ১৯৯১ সালে ২৯ এপ্রিল বঙ্গোপসাগরের উপকূলে আঘাত হানা ৫ ক্যাটাগরির ম্যারিঅ্যান ঘূর্ণিঝড়টি ছিলো ৭০-এর গোর্কী’র পর সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়। প্রায় ৬শ কিলোমিটার ব্যাসের ঘূর্ণিঝড়টি ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে বাংলাদেশে। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ২০ থেকে ৩০ ফুট। প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। ১০ লাখ মানুষ ঘরহারা হন। ক্ষতিগ্রস্ত হন ১ কোটি মানুষ।

৩০০ কিলোমিটার ব্যাসের আইলা ঘূর্ণিঝড়টির গতি ছিলো সিডর থেকেও বেশি। ২০০৯ সালের ২১ মে আইলা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাংশ ও ভারতের দক্ষিণ পশ্চিমে আঘাত হানে। ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে উপকূল অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড়টি। এতে নিহত হন ১৯৩ জন। মারা যায় ২ লাখ গবাদি পশু। ৭১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙে। প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ স্থায়ীভাবে এবং অস্থায়ীভাবে সাড়ে চার লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।

২০০৮ সালের অক্টোবরে ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার বেগের বাতাস নিয়ে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রেশমিতেও প্রাণহানি ঘটে।

২০১৩ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’-এ প্রাণ হারান ১৭ জন। এরপর ২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র আঘাতে মারা যান চট্টগ্রামের ২৬ জন অধিবাসী।

নভেম্বর মাসে সংঘঠিত ঘূর্ণিঝড়গুলোর বিষয়ে আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘সাধারণত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের ঘূর্ণিঝড় অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী হয়। এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে না পারলে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণও বেশি হয়।’

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here