প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, আগামী বছরের শুরুতেই সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বইয়ের পাশাপাশি স্কুল ড্রেসের জন্য দেয়া হবে দুই হাজার টাকা। শনিবার ৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের স্বপ্নকুঁড়ি সম্মেলন কক্ষে কুড়িগ্রামে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যালয়গুলোকে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিকায়নের পাশাপাশি আকর্ষণীয় করে সাজানো হচ্ছে ক্লাসরুম। আনন্দঘন পরিবেশে পাঠদান নিশ্চিতে সরকারের এতসব আয়োজন। খবর বাংলানিউজের।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। তাই মেধাবী জাতি গঠনে প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কারণ আজকের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ২০৪১ সালে যুবক হবে। যারা নেতৃত্ব দেবে উন্নত রাষ্ট্রের।
জাকির হোসেন বলেন, সরকারের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পে যারা দুর্নীতি করছেন, তারা কেউ মাফ পাবেন না। তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। মনে রাখবেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছেন।
জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বদরুল হাসান বাবুল, রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক আব্দুল ওহাব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম, প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, তৌফিকুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক, লস্কর আলী প্রমুখ।
সভায় জেলার সব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী উপজেলা ইন্সট্রাক্টর, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর, উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পিটিআই সুপারসহ প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সব কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী বিকেল ৩টায় কুড়িগ্রাম পৌরসভার এক নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চতকরণে পরীক্ষামূলকভাবে এক শিফটের বিদ্যালয়ের সময়সূচির (ক্লাস রুটিন) উদ্বোধন করেন।
আনন্দপূর্ণ পাঠদান কার্যক্রম চালু করার লক্ষ্যে এ বিদ্যালয়ে এখন থেকে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে শরীরচর্চা ও ১০টায় ক্লাস শুরু হবে। ৪৫ মিনিট ক্লাস করার পর ১৫ মিনিট বিরতি।
এসময় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের খেলার ছলে পড়াবেন। আর ছুটি হবে বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে।
উদ্বোধনকালে জাকির হোসেন বলেন, আনন্দপূর্ণ পাঠদান কার্যক্রম চালু করার লক্ষ্যে পরীক্ষামূলক চারটি স্কুল বাছাই করা হয়েছে। স্কুলগুলো হলো- কুড়িগ্রাম পৌরসভার এক নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রৌমারী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নেত্রকোনার ৩৬ নম্বর বালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাগুরা জেলার হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সফলতা পেলে সব বিদ্যালয়ে একইসময় সূচি চালু করা হবে।
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ৩০ মিনিটের বিশ্রামের সময় পাবেন। প্রতিক্লাস শেষে ১৫ মিনিটের বিশ্রামের সময় খেলার ছলে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতীয় দিবস পালনের জন্য সরকার এ প্রথম (১৫ আগস্ট উপলক্ষে) সব বিদ্যালয়কে অনুষ্ঠান বাবদ দুই হাজার টাকা করে দিয়েছে। আগামী বছর থেকে এ টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা করা হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পিডিইপি প্রকল্পের আওতায় দেশের তিন ও ছয় ক্লাসরুমের স্কুলগুলোকে পর্যায়ক্রমে নয় ক্লাসরুমের স্কুলে পরিণত করা হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। এরপর ২৮ বছর প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সালে একসঙ্গে ২৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ‘আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার মান হবে পৃথিবীতে রোল মডেল’। আর এজন্য তিনি সব শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের অতিরিক্ত দুই ঘণ্টা বেশি কাজ করার আহ্বান জানান। কারণ স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে।