১৯৭২ সালের এই দিনে কবি কাজী নজরুল ইসলাম ভারত থেকে ঢাকায় আগমন করেন এবং তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় কবির স্বীকৃতি দান করা হয়
আজকের এই দিনে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন নজরুল। কাজী নজরুল ইসলাম। আমাদের রণসংগীত যাঁর সৃষ্টি। তখন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি হয়নি। বেলা সাড়ে ১১টায় তেজগাঁও বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের বিমানটি অবতরণ করার পর আনন্দে উদ্বেল হাজার হাজার মানুষ স্বাগত জানাল প্রিয় কবিকে।
বর্ণাঢ্য জীবনে কত কিছুই না করেছেন নজরুল। কলকাতাই ছিল মূলত তাঁর কর্মস্থল। তবে কর্মক্ষম থাকা অবস্থায় তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, সিলেটে এসেছেন। ১৯৪২ সালের শেষের দিকে কবির অসুস্থতা ধরা পড়ে। সে অসুস্থতা আর কাটেনি। সেভাবেই তিনি ছিলেন কলকাতায়। অবশেষে তিনি এলেন বাংলাদেশে।
১৯৭২ সালের ২৪ মে অসুস্থ কবি দেখলেন স্বাধীন বাংলাদেশকে। কবির সঙ্গে ছিল কবির পুরো পরিবার। বড় ছেলে কাজী সব্যসাচী ও তাঁর স্ত্রী উমা কাজী, ছোট ছেলে কাজী অনিরুদ্ধ ও তাঁর স্ত্রী কল্যাণী কাজী এবং তাঁদের সন্তানেরা এসেছিলেন কবির সঙ্গে। কবির ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডি কে রায়ও এসেছিলেন সঙ্গে।
এর আগে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের কলকাতায় গিয়ে দেখে এসেছিলেন কবিকে। তাঁকে দেশে আনার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। ধানমন্ডি ১৮ নম্বর সড়কে একটি ভবন নির্ধারণ করা হলো ‘কবি ভবন’ নামে। সে বাড়ির দিকেই রওনা দিয়েছিল কবিকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি। কবিকে রাখা হয়েছিল রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়।
কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি বলি আমরা। একই সঙ্গে প্রেমের কবিতার জন্যও তাঁর দ্বারস্থ হতে হয়। গানের জগতে নজরুলের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন খড়্গহস্ত।
নাটক ও চলচ্চিত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে নজরুলের গান। অনেকেরই নিশ্চয় মনে পড়ে যাবে শচীন সেনগুপ্তের সিরাজদ্দৌলা নাটকটির কথা। ‘নদীর একূল ভাঙে, ওকূল গড়ে এই তো নদীর খেলা’ কিংবা ‘পথহারা পাখি কেঁদে ফিরি একা’ গান দুটো কার না ভালো লাগে। রক্তকমল নাটকেও ছিল নজরুলের গান। ছিল মধুমালা নাটকে। ১৯৩১ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। পাহাড়ী সান্যাল ও কানন দেবী অভিনীত দুটো ছবি বিদ্যাপতি ও সাপুড়ের সংগীত পরিচালক ছিলেন নজরুল। পরিচালক হিসেবেও নজরুল কাজ করেন ধ্রুব চলচ্চিত্রে। সে ছবিতে নারদের ভূমিকায় অভিনয়ও করেন।
ধানমন্ডির এই বাড়িতে কবি ছিলেন বছর তিনেক। প্রতিদিন তাঁকে দেখতে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমাত এই বাড়িতে। দর্শনার্থীদের ভিড় সামলানো কঠিন হয়ে পড়ত। ১৯৭৫ সালের ২৩ জুলাই কবিকে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (এখন যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি করা হয়। তিনি ছিলেন ১১৭ নম্বর কেবিনে। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মারা যান।
তথ্যসূত্র: নজরুল-জীবনী, রফিকুল ইসলাম, নজরুল জীবনকথা, মোরশেদ শফিউল হাসান
এবি/টিআর