স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের নাম আজীবন জড়িত থাকবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে পুলিশের অবদান ইতিহাসে সবসময় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। পুলিশ বাহিনী প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সাহসিকতা ও দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। পথচারীসহ সবার চলাচলে ট্রাফিক পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।

আজ রবিবার (৫ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশ লাইন্স মাঠে পুলিশ সপ্তাহ-২০২০ উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের পুলিশ বাহিনীর প্রতি জনগণের বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জিত হয়েছে। গণতন্ত্রের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় পুলিশ সাহসিকতার ভূমিকা পালন করছেন। পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকা মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে জনগণ তাৎক্ষণিক সুবিধা পাচ্ছেন। ফায়াস সার্ভিস কর্মীরাও বিশেষ ভূমিকা রাখছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি তারাই ২১ বছর সরকারে ছিল। এ সময় তারা দেশের উন্নয়ন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকারে এসে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে কাজ শুরু করে। এ সময় পুলিশের প্রত্যেকটি কাজে সাহসিকতা ও দক্ষতা দেখেছি। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতায় পুলিশের ২৯ জন সদস্য নিহত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি পুলিশ সদস্য এ সময় নিজের জীবনবাজি রেখে এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করেছে। এ জন্য আমি পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই।

বাংলাদেশ পুলিশকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা পুলিশে ব্যাপক পদোন্নতির ব্যবস্থা করেছি। পুলিশের সেবা বাড়িয়েছি। এমনকি মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায়ও পুলিশ কাজ করছে। পুলিশের আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।

তিনি বলেন, শুধু তাই নয় জাতিসংঘে বাংলাদেশে পুলিশের সংখ্যা বেড়েছে। এ ছাড়া পুলিশে নারীদের নিয়োগও বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের কল্যাণের লক্ষ্যে কল্যাণ ফান্ড গঠন করা হয়েছে। পুলিশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যাতে পুলিশ সদস্যরা সহজে ঋণ নিতে পারেন। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য আজীবন রেশনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।

এর আগে অনুষ্ঠানে সকাল সাড়ে ৯টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ছালাম জানানো হয় এবং একই সঙ্গে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খোলা জিপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) স্টল পরিদর্শন করেন এবং পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কল্যাণ প্যারেডে অংশগ্রহণ করেন।

প্রতিবারের মতো এবারও শুরু হয়েছে পুলিশ সপ্তাহ। এবারের পুলিশ সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’। আজ থেকে শুরু হওয়া ৬ দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহের নানা কর্মসূচি চলবে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) পর্যন্ত। এ

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট এবং পতাকাবাহী দলের নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন।

এবারের পুলিশ সপ্তাহে প্যারেড অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন পুলিশ সদর দফতরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. ছালেহ উদ্দিন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত প্যারেডে অংশ নেন সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য।

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ২০১৯ সালে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৪ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ২০ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দমন, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৮ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম-সেবা)’ এবং ৫৬ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা)’ দেয়া হয়। সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই-নিরস্ত্র) মরহুম মো. আক্তার হোসেনকে বিপিএম (মরণোত্তর) পদক দেয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here