দক্ষতার গল্প

তিনি ছিলেন মানবতার সর্দার। জগতের সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। নবীকুল শিরোমণি। তারপরও তিনি বিনম্র ও বিনয়ী পথপ্রদর্শক ছিলেন। নিজ সঙ্গী-সাথীদের সাথে মিশে যেতেন। তাদের কাছেই থাকতেন। যখন যেখানেই চাইত যে কোনো সাথী, তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে পারত। কোনো দারওয়ান ছিল না। সাক্ষাতের কোনো নির্ধারিত সময় ছিল না।
.
বাদশা ছিলেন না তিনি এবং হতেও চাইতেন না। আসুন! এ প্রসঙ্গে সহিহ হাদিসের আলোকে একটি ঘটনা পড়ি। ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন হযরত আবু হুরাইরা রা.।
.
ফেরেশ্তাদের সর্দার হযরত জিবরিল আ. আল্লাহর রাসূল সা.এর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন। এরমধ্যেই তিনি আসমান থেকে জনৈক ফেরেশ্তাকে আসতে দেখলেন। জিবরিল আ. বললেন,
-যখন থেকেই ওই ফেরেশ্তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, ইতিপূর্বে কখনো এই ফেরেশ্তা জমিনে অবতীর্ণ হয়নি।
ওই ফেরেশ্তা জমিনে আসার পর বলল,
-মুহাম্মদ সা.! আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এই পয়গাম দিয়ে পাঠিয়েছেন যে, আপনি কি বাদশা-নবী হতে চান নাকি বান্দা-নবী হতে চান?
.
বড় কঠিন প্রশ্ন ?! তাই না পাঠক! বাদশা-নবীরও তো নজির আছে ইতিহাসে। ওই যে সুলায়মান আ.। বাদশা-নবী ও বান্দা-নবী.. উভয়েরই উদাহরণ আছে নবীদের ইতিহাসে। তা হলে কী জবাব দেয়া যায় এমন প্রশ্নের ?! সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেন জিবরিল আ.।
.
জিবরিল আ. আল্লাহর রাসূল সা.কে পরামর্শ দিলেন,
(تواضع لربك)
-“আপনার রবের সামনে বিনয়কে নির্বাচন করুন।”
আল্লাহর রাসুল সা. ওই ফেরেশ্তার উত্তরে বললেন,
(لا بل عبدا رسولا)
-“নাহ্; বরং বান্দা রাসূলই হতে চাই আমি।”
.
সম্মানিত পাঠক! এই কারণেই আল্লাহর রাসূল সা. প্রায়শ একটি দুআ করতেন, -(اللهم أحيني مسكينا) “হে আল্লাহ! আমাকে দুঃস্থ ও মিসকিন অবস্থায় জীবিত রেখো।” (وأمتني مسكينا) “এবং আমাকে মিসকিন অবস্থায় মৃত্যু দাও।” (واحشرني في زمرة المساكين يوم القيامة) “আর কিয়ামতের দিন আমাকে তুমি দুঃস্থ ও মিসকিনদের দলে পুনরোজ্জীবিত করো।”
.
একদা আল্লাহর রাসুল সা. এই দুআটি করছিলেন। আম্মাজান আয়েশা রা. দুআর এই শব্দগুলো শুনেন। আরজ করলেন,
– “আল্লাহর রাসুল! আপনি এমন দুআ কেন করছেন?”
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করলেন,
-“আয়েশা! (إنهم يدخلون الجنة قبل أغنيائهم بأربعين خريفا) “এসব দুঃস্থ ও মিসকিন লোক অবশ্যই ধনীদের চেয়ে চল্লিশ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
.
তারপর মিসকিনদের মহব্বতকারী, গরিবের বন্ধু, নবীয়ে রহমত আয়েশা রা.কে একটি উপদেশ করেন। বললেন,
-“দুঃস্থ-মিসকিন লোককে কখনো শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিয়ো না। অর্ধেক খেজুর হলেও দাও। হে আয়েশা! মিসকিনদেরকে ভালোবেসো। তাদের কাছে টেনো। আল্লাহ কিয়ামতের দিন তোমাকে কাছে টেনে নিবে।”
.
আল্লাহর রাসূল সা. কত বিনয়ী ছিলেন। আসুন, তার একটি উদাহরণ এখানে পড়ি। সাহল ইবন হানিফ রা. বর্ণনা করেন,
(كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يأتي ضعفاء المسلمين ويزورهم ويعود مرضاهم ويشهد جنائزههم)
“আল্লাহর রাসুল সা. দুর্বল মুসলমানদের কাছে যেতেন। তাদের সাথে সাক্ষাত করতেন। তাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ থাকলে তাকে দেখতে যেতেন। কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার নামাযে জানাযা পড়াতেন এবং দাফনে অংশ নিতেন।”

এবি/টিআর

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here