নিম্নোক্ত লেখাটি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ফেসবুকে শেয়ার করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের একজন কর্মকর্তা। লেখাটি পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।
গতকাল রাত আনুমানিক ৮.৪৫ মিনিট, বাকি সড়কে চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলাম। হঠাৎ এক জায়গায় মানুষের হট্টগোল দেখতে পেলাম। ঘটনা কি তা দেখার জন্য আমার এক সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঠালাম। কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু লোক ২৫-৩০ বছর বয়সী একজন লোককে টেনে-হিচড়ে আমার সামনে নিয়ে আসলো। ঘটনা জানতে চাইলাম।
একজন বললো, ‘স্যার, লোকটা চোর, চুরি করে পালাচ্ছিল’। পাশে লোকটাকে শক্ত করে ধরে রাখা এক সিকিউরিটি গার্ড আমাকে বললো, ‘স্যার, লোকটা স্বপ্ন সুপার শপ থেকে চুরি করে পালাচ্ছিল’।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি চুরি করেছে? সিকিউরিটি গার্ড বললো, ‘স্যার, সে এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিল’। আমার খটকা লাগলো,আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘দুধ’? তখন সিকিউরিটি গার্ড অতি উৎসাহ নিয়ে বলল, ‘স্যার বাচ্চাদের ন্যান দুধের প্যাকেট’। আমি লোকটার দিকে তাকালাম। আমার বয়সেরই হবে। দেখতে ভদ্রলোকই মনে হলো। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চুরি করলেন কেন? সে কেঁদে ফেলল। তারপর বললো, “স্যার, তিনমাস হল চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই।”
সাথে সাথে আমার ছেলের চেহারা মনে পড়ল!! মনে হল কতটা নিরুপায় হলে একজন বাবা এই কাজ করতে পারে!! ওর জায়গায় আমি থাকলেও হয়তো একই কাজ করতাম। সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, দুধের প্যাকেটের দাম কত? সে বললো, ৩৯০ টাকা স্যার। আমি তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিল রাখতে বললাম এবং লোকটিকে ছেড়ে দিতে বললাম।
আজ আমাদের দেশের এক অসহায় বাবা তার বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করে। কত মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোঁচাতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে? হয়তো আমি ভালো চাকরি করে আজ ভালো আছি, কিন্তু সমাজের কত মানুষ আজ এই বাবার মত নিরূপায়! এর দায়ভার কার?
লেখক: জাহিদুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
এবি/সবুজ/পূজন