করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় অঘোষিত লকডাউনের কারণে বিপাকে থাকা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় কৃষকদের পাকাধান কেটে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
রমজানের রোজা রেখে তীব্র রোদের ভ্যাপসা গরমে মাঝে ধান কেটে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে ছাত্রলীগ। এতে শ্রমিক সঙ্কটে থাকা কৃষকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রাঙ্গুনিয়ার কৃষকদের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিতে নির্দেশনা দেন নিজের নির্বাচনী এলাকার উপজেলা ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের।
উপজেলা ছাত্র লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম রাসেল জানান, তথ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাঙ্গুনিয়ায় ইউনিয়ন ভিত্তিক টিম গঠন করা হয়েছে। তারা প্রতিদিন রাঙ্গুনিয়ার কোন না কোন বিলে নেমে কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছে সামাজিক দুরত্ব মেনে। ইতিমধ্যে রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া, পোমরা, পদুয়া, চন্দ্রঘোনাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে যে সমস্ত বিলে বোরা ধান পেকেছে সেইসব এলাকার দরিদ্র কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ি ধান কেটে দিচ্ছে নেতাকর্মীরা।
শনিবার (২ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের টিম ধান কেটেছে উপজেলার চন্দ্রঘোনা কদমতলি ইউনিয়নের গুমাইবিল অংশে। আধুরপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক আবুল কাশেমের ২৫শতক জমির ধান কেটে ছাত্রলীগ কর্মীরা কৃষকের ঘরে পৌঁছে দেন। উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শিমুল গুপ্তের নেতৃত্বে ধান কাটায় অংশ নেন চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রনি খাঁন, ইমাম গাজ্জালী কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রনি দাশ, ছাত্রলীগ নেতা লাভলু, ছোটন, অনুপ, ইলিয়াছ ইমন, সজিব, সৈকতসহ প্রায় ১৫জনের টিম।
এরআগে শুক্রবার পোমরা ইউনিয়নের মো. শফি নামের এক কৃষকের ২০ শতক জমির ধান কেটে দিয়েছে পোমরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগ। একইদিন পারুয়া ইউনিয়নের হাজারি বিলের কৃষক লেদু মিয়ার ৪৪ শতক জমির ধান কাটেন উপজেলা ও পারুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগনেতা রাকিবুল হাসান বাবুর নেতৃত্বে ১৫ জনের টিম। গত ২৬ এপ্রিল পদুয়া ইউনিয়নের সাপলেজাপাড়া বিলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কৃষক আবদুল কাদেরের ৩৫ শতক জমির ধান কেটে ঘরে তুলে দেন ছাত্রলীগ নেতা আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে টিম। এভাবে রাঙ্গুনিয়ার যেসমস্ত বিলে ধান পেকেছে এবং ধানকাটা শ্রমিকের অভাবে দরিদ্র কৃষকরা ধান কাটতে পারছেনা তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ছাত্রলীগ।
পারুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান বাবু বলেন, রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচিত সাংসদ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নির্দেশে পারুয়া ইউনিয়নে যেসমস্ত কৃষক শ্রমিক কিংবা অর্থ সংকটে পাকা ধান কাটতে পারছেননা তাদের সাহায্য করা হবে জানিয়ে ফেসবুকে নাম্বার দিয়ে একটি পোষ্ট দেওয়া হয়। কৃষক নুর মোহাম্মদ যোগাযোগ করলে আমরা তার পাশে দাঁড়াই।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শিমুল দাশ গুপ্ত বলেন, চট্টগ্রামের শস্য ভান্ডারখ্যাত গুমাই বিলসহ রাঙ্গুনিয়ার বিস্তির্ণ এলাকায় বেরো ধান পেকেছে। প্রতিবছরের ন্যায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এবার ধান কাটা শ্রমিকরা আসতে পারছেনা। কৃষকের এই সঙ্কটে তথ্যমন্ত্রী ছাত্রলীগসহ নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন দরিদ্র কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিতে। রাঙ্গুনিয়ার যেসমস্ত কৃষক শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে বিপাকে পড়বে তারা যোগাযোগ করলেই ছাত্রলীগের টিম পৌঁছে যাবে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রামের শস্য ভান্ডারখ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলের কৃষক আবুল কাশেম জানান, আমি দুই কানি জমিতে বোরা ধানের চাষ করেছি, ধানও পেকেছে। দেশের সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে বাজারে শ্রমিক না পেয়ে যখন আমার কপালে ভাঁজ পড়ে তখন ছাত্রলীগের ভাইয়েরা এসে আমার জমির ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়ে গেলেন। এই সময়ে তারা কৃষকের পাশে এসে দাঁড়ানোয় রাঙ্গুনিয়ার অনেক দরিদ্র কৃষকের চিন্তামুক্ত হবে বলে জানান তিনি।
কৃষিবিদরা জানান, এ দুঃসময়ে চাষাবাদের মাধ্যমে একমাত্র কৃষকই আমাদের রক্ষা করতে পারেন খাদ্য সংকট থেকে বাঁচাতে। ঝড় বাতাসে যাতে ক্ষতি করার আগেই মাঠে থাকা সোনালী ধান ঘরে তুলতে হবে।