★ চট্টগ্রামের ছেলে জাফরুল্লাহর বাবার শিক্ষক ছিলেন স্বয়ং বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন।
★ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করার পর ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। ছাত্র থাকা অবস্থাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজের দুর্নীতির বিরুদ্ধে করেছিলেন সংবাদ সম্মেলন।
★ ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এম. বি. বি. এস শেষ করার পর ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ অব সার্জনস থেকে FRCS প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু চূড়ান্ত পর্ব শেষ না হতেই দেশের টানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে দেশে ফিরে আসেন।
★পাকিস্থানি বাহিনীর নির্মমতার প্রতিবাদে লন্ডনের হাইডপার্কে যে কয়জন বাঙ্গালী পাসপোর্ট ছিড়ে আগুন ধরিয়ে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিণত হয়েছিল তাদের একজন ড. জাফরুল্লাহ।
★মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সহায়তার জন্য বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী প্রবাসী বাঙ্গালীদের কাছ থেকে ১০ লাখ পাউন্ড চাঁদা যোগাড় করেছিলেন। তিনি কাজটি করেছিলেন ড. জাফরুল্লাহর পরামর্শে।
★ শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ” একাত্তরের দিনগুলি” বইয়ের ১৬১ ও ১৬২ পৃষ্ঠায় ড. জাফরুল্লাহ ও ডা. মোবিনের পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে লিখেন।
★আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য ড. জাফরুল্লাহ ২ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের সহযোগিতায় আগরতলার বিশ্রামঘরের মেলাঘরে গড়ে তুলেছিলেন ৪৮০ শয্যা বিশিষ্ট প্রথম ফিল্ড হসপিটাল ” বাংলাদেশ হসপিটাল”
★হসপিটালটিতে পর্যাপ্ত নার্স না থাকায় ড. জাফরুল্লাহ নিজে নারী স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দেন।
★দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ড. জাফরুল্লাহ গ্রামে গিয়ে শুরু করেন স্বাস্থ্যযুদ্ধ। ফিল্ড হাসপাতালটিকেই কুমিল্লাতে স্বাধীন দেশের প্রথম হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলেন। পরবর্তীতে ঢাকার ইস্কাটনে হাসপাতালটি পুনঃস্থাপিত হয়। কিন্তু গ্রামকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু রুপে গড়ে তোলার জন্যে ” চলো গ্রামে যাই” স্লোগান নিয়ে হাসপাতালটিকে ঢাকার অদূরে সাভারে ” গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র” নামে স্থানান্তর করা হয়।
★ হাসপাতালটিকে ” গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র” নামে নামকরণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সাভারে হাসপাতালটির জন্য ৩১ একর জমিও বরাদ্দ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
★ সম্পূর্ণ অলাভজনক এই এই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ড. জাফরুল্লাহ ১৯৭৭ সালে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখায় স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
★ড. জাফরুল্লাহ বাকশালে যোগ দিতে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধ যেমন উপেক্ষা করেছিলেন, তেমনি জিয়াউর রহমানের দেয়া মন্ত্রীত্বের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ৪ পৃষ্ঠার একটি চিঠির মাধ্যমে। ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এরশাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাবও!
★ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পর তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান ১৯৮২ সালের জাতীয় ঔষুধ নীতি। স্বাধীনতার পর স্বাস্থ্যখাতে যেটাকে বিবেচনা করা সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হিসেবে। তাঁর প্রচেষ্টায় আমদানি ওষুধের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২২৫-এ। বর্তমানে ৯০ শতাংশ ওষুধই দেশে তৈরি হচ্ছে এবং বাংলাদেশ একটি ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার পেছনে এই মানুষটির অবদান বিশাল।
★ড. জাফরুল্লাহ স্বাস্থ্যনীতির সাথে জড়িত থাকায় বি. এম. এর স্বার্থে আঘাত লাগে। তাই বি. এম. এ ১৯৯২ সালে তাঁর সদস্যপদ বাতিল করে। বিনা বিচারে ড. জাফরুল্লাহর ফাঁসি চেয়ে পোস্টারও সাঁটায় তারা।
আমরা ড. জাফরউল্লাহকে না চিনলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় ঠিকই চিনেছে এই লোকটাকে। বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় “ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো” ঘোষণা করে ড. জাফরুল্লাহকে।
মুক্তিযুদ্ধ করেও, গণমানুষের জন্য কাজ করেও ড. জাফরুল্লাহরা হন বিতর্কিত। কারন, উনারা চাটুকারিতা করতে জানেন না, দালালী করতে জানেন না, জানেন না তেল দিতে!
নষ্ট রাজনীতির বিভাজনে থাকা তরুণ প্রজন্মের প্রতি অনুরোধ, এই মানুষটাকে যদি সম্মানিত করতে নাও পারি, অন্ততপক্ষে যেন ছোট না করি!
সূত্র : ইন্টারেনট