আলোকিত ডেক্স : করোনা মহামারীর কারণে দেড় বছর ধরে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই অবসরে শিক্ষার্থীরা যে যার মত করে জীবন অতিবাহিত করছে, সময় কাটাচ্ছে। তবে বন্ধের এই সময়টাকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে বোয়ালখালীর এক স্কুলছাত্র।

অনলাইন ক্লাসের ফাঁকে গড়ে তুলেছে খামার। খুদে এ খামারির নাম সাখাওয়াত হোসেন তাহসিন (১৫)। স্থানীয় শাকপুরা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র সে। পশ্চিম-শাকপুরার ৪ নং ওয়ার্ডের জাগির হোসেনের ছেলে তাহসিনের ছোটবেলা থেকে মুরগির খামার করার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু টাকার সংস্থান নিয়ে ভাবনায় পড়ে সে। তাছাড়া লেখাপড়ার ফাঁকে সময় বের করাটাও ছিল ফ্যাক্টর।

করোনা-সঙ্কটে স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে সেই স্বপ্নপূরণে এগিয়ে যায় তাহসিন। স্কুলটিফিন থেকে আগের জমানো কিছু টাকা ছিল তার হাতে। স্কুল বন্ধ হলেও বাবা-মা, বড় ভাইয়েরা স্কুল থাকলে টিফিনের জন্য যে টাকা দিতেন, সেই টাকা প্রতিদিনই নেওয়া শুরু করলো তাহসিন। বললো, স্কুল যদিও বন্ধ, টিফিনের টাকাটা তোমরা আমাকে নিয়মিত দিয়ে যাও। এই টাকা জমিয়ে আমি মুরগীর খামার করতে চাই। তারাও নিরাশ করলেন না তাহসিনকে।

এক পর্যায়ে ৩০ হাজার টাকা জমা হয়ে যায় তাহসিনের। এবার কী ধরনের মুরগি কিনবে এবং কীভাবে মুরগী লালন-পালন করবে বিস্তারিত জেনে নিলো ইউটিউব ঘেঁটে। এরপর গত ৬ মাস আগে ৩০ হাজার টাকায় মুরগির ঘর তৈরিসহ ফাউমি জাতের ৫০টি ডিমের মুরগী ক্রয় করে তাহসিন।  তার খামারের মুরগীগুলো এখন দিনে ৩০ টারও বেশি ডিম দিচ্ছে।

মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই তাহসিনের লাভ এবং মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার টাকা। নতুন করে আরও ৫০টি ডিমের মুরগী কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সে। সেই সাথে খামারটিকে ধীরে ধীরে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাবার ইচ্ছা তার।

খামার করলে তো পড়াশোনার সমস্যা হয়? এই প্রশ্নে তাহসিন জানায়,  না, আমার পড়াশোনার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। খামার করতে গিয়ে আমি মোটেও পড়ালেখাবিচ্যুত হইনি। নিয়মিত অনলাইন ক্লাস ও টিউটোরিয়াল চালিয়ে নিচ্ছি। পড়ালেখার যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেভাবে আমি সময় ব্যালেন্স করে নিয়েছি।

স্কুলছাত্র তাহসিনের এমন কাণ্ডে খুশি তার বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা। বাবা জাগির হোসেন বললেন, আমার ছেলে খামারের ব্যাপারে শিশুবেলা থেকে খুবই আগ্রহী। সেই আগ্রহ থেকে নিজে নিজেই মুরগীর খামার গড়ে তুলেছে। এটি করতে গিয়ে লেখাপড়ায় তার মনোযোগ কমেছে বলে মনে হয়নি। আমি চাই পড়ালেখার পাশাপাশি এখন থেকেই সে নিজেকে গড়ুক। সংগ্রামী জীবনবোধ নিয়ে অগ্রসর হোক।

বোয়ালখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেতু ভূষণ দাশ স্কুলছাত্র তাহসিনের খামার-আগ্রহে দারুণ খুশি। বললেন, ‘সত্যিই আমি আনন্দিত। এত ছোট্ট ছেলে নিজের প্রতিভা ও চেষ্টায় খামার করছে। এ বয়সী খামারি আমি আগে আর দেখিনি।’

তিনি বলেন, ‘এমন খামারিদের আমরা সহযোগিতার জন্য খুঁজছি। তাকে সরকারি যত ধরনের সহযোগিতা রয়েছে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করবো। আমার তরফ থেকে এবং প্রাণী-সম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তার জন্য শুভ কামনা।

সূত্র: একুশে পত্রিকা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here