নাসির উদ্দিন রকি

টানা তিন দিনের ছুটির প্রথম দিন শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের সবগুলো বিনোদন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে। বিশেষ করে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, চিড়িয়াখানা, ফয়’স লেক, সিআরবি, ডিসি হিল, বাটালি হিল, ওয়ার সিমেট্রি, স্বাধীনতা পার্ক, জাতিতাত্বিক যাদুঘর, নেভাল এলাকায় ছিল উপচে পড়া ভিড়।

নগরীর বাইরে থাকা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অবস্থিত বিনোদন কেন্দ্রের মধ্যে পারকি সমুদ্র সৈকত, বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত, বাঁশখালী চা বাগান, বাঁশখালী ইকোপার্ক, ভাটিয়ারী লেক, চন্দ্রনাথ পাহাড়, খৈইয়াছরা ঝর্ণা এবং ফটিকছড়ি ও রাঙ্গুনিয়ার কোদলা চা বাগানেও দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

এদিকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় একদিনে শুক্রবার সাড়ে ১০ হাজার টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিটি টিকিটের মূল্য ৭০ টাকা। চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার একদিনে ১০ হাজার ৫০০ দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় টিকিট নিয়ে প্রবেশ করেছে। অন্যান্য শুক্রবার ৬ থেকে ৭ হাজার করে দর্শনার্থী আসতো। শুক্রবার এবং বন্ধের দিন ছাড়া অন্য দিনে দুই হাজার করে দর্শনার্থী চিড়িয়াখানা দেখতে আসে।’

ডা. শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, ‌‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এ কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে।’

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় পশু-পাখির পাশাপাশি শিশুদের জন্য রয়েছে দোলনা ও সুবিশাল সিঁড়ি। যেখানে পায়ে হেঁটে সময় কাটানো যায়। পাশাপাশি বসে সময় কাটানোর জন্যও রাখা হয়েছে নানা ব্যবস্থা।

চিড়িয়াখানায় দুই সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে আসা কাশবি আক্তার বলেন, ‘ছেলেদের পরীক্ষা শেষে হয়েছে। এখন স্কুল বন্ধ। তাই তাদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছি। পশু-পাখি দেখে তারা খুব আনন্দিত।’

জানা গেছে, ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে চিড়িয়াখানার বাঘ ছাড়াও আছে জেব্রা, ভাল্লুক, সিংহ, হরিণ (চিত্রা, সাম্বার, মায়া), উল্লুক, ক্যাঙারো, লামা, বানর, মেছো বিড়াল, চিতা বিড়াল, অজগর, বাঘডাসা, উঠপাখি, ইমু পাখি, গয়াল, কুমির, ময়ুর, ঘোড়া, বক, টিয়াসহ ৬৮ প্রজাতির ৬২৮টি পশুপাখি। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ২০১৯ সালে দলগতভাবে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক অর্জন করে।

ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ জানান, দরপত্রের মাধ্যমে চিড়িয়াখানার জন্য এক কোটি ৬৯ লাখ টাকায় সিংহ, ম্যাকাউ, ওয়েলবিস্ট, ক্যাঙারু, লামা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রথম চালানে ক্যাঙারু ও লামা চিড়িয়াখানায় পৌঁছে। বাকি পশু আগামী জানুয়ারিতে পৌঁছার কথা রয়েছে।

চিড়িয়াখানার পাশেই রয়েছে ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও সী-ওয়ার্ল্ড। সেখানেও ভিড় জমেছে দর্শনার্থীদের।

কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেডের সহকারী ব্যস্থাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘আজ ফয়’স লেক এবং সী-ওয়ার্ল্ডে প্রচুর দর্শনার্থী এসেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পিকনিক করতেও ফয়’স লেকে এসেছে। সবমিলিয়ে আজ একদিনে তিন হাজারের মতো দর্শনার্থী প্রবেশ করেছে। অন্যান্য সময়ে এত বেশি দর্শনার্থী আসে না। এখন ছুটির দিন পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দর্শনার্থী বেশি এসেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফয়’স লেকে প্রবেশ ফি ৩০০ টাকা এবং সী-ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ ফি ৬০০ টাকা। তবে ডিসেম্বর মাসে র্সী-ওয়াল্ডে অফার চলছে। ৬০০ টাকায় একজনের সঙ্গে আরেকজনকে ফ্রি প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে ফয়’স লেকে গ্রুপভিত্তিক, অর্থাৎ ২০ জনের বেশি পিকনিকে এলে তাদের জন্য ছাড় দেওয়া হচ্ছে।’

আজ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতেও ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার দর্শনার্থী ছিল সৈকতে।

ট্যুারিস্ট পুলিশের পতেঙ্গা সাব-জোনের ইন্সপেক্টর মো. ইস্রাফিল মজুমদার বলেন, ‘আজ বন্ধের দিনে অনেক দর্শনার্থী এসেছে। নানা বয়সী মানুষের ভিড় ছিল সকাল থেকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিকাল থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় আরও বাড়ে। কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’

তিনি জানান, যেকোনও দুর্ঘটনা এড়াতে পোশাকধারি পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here