দেবাশীষ বড়ুয়া রাজু
গণমানুষের অধিকার আদায়ে ছাত্র থেকেই সংগ্রাম করে চলেছেন জাসদ নেতা সৈয়দুল আলম। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়নের আকুবদন্ডী গ্রামের কামাল উদ্দীন আহম্মদ ও ছখিনা খাতুনের ঘরে ১৯৫১ সালে ৯ অক্টোবর জন্ম তার। তিনি জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি (নুরুল আম্বিয়া) ও ভারত বাংলাদেশ পিপলস ফোরামের উপদেষ্ঠা হিসেবে কাজ করছেন।
সৈয়দুল আলম বিশ্ব শান্তি পরিষদ ও বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সমিতির সদস্য। কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাবস্থায় ১৯৬২ সালে স্কুলের ছাত্রদের নিয়ে পাকিস্তানের আইয়ুব খান সরকারের মার্শাল ল বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম বোয়ালখালী উপজেলা ছাত্র ইউনিয়নের সেক্রেটারী সৈয়দুল আলম।
১৯৬৩ সালে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্র সংগীত বন্ধ করে দিলে এর প্রতিবাদে সভার আয়োজন করেন তিনি। এতে অধ্যাপক আবুল ফজল ও অধ্যাপক কবি আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন। ওই বছর বোয়ালখালীতে ছাত্র যুবকদের নিয়ে নববর্ষের মিছিল বের করে পালন করেন পহেলা বৈশাখ।
১৯৬৪ সালে কধুরখীল স্কুল মাঠে তিন দিনব্যাপী নাটক, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করেন বসন্ত উৎসব।
১৯৬৫ সালে সৈয়দুল আলমের নেতৃত্বে স্কুল পর্যায়ের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয় কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৬ সালে সারোয়াতলী পিসিসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে, ১৯৬৭ সালে গোমদন্ডী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্মাণ করা হয় শহীদ মিনার।
পাকিস্তান সরকারের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে কধুরখীল স্কুলে পালন করা হতো ২১ ফেব্রুয়ারী। এতে ভাষা সৈনিক মাহাবুব উল আলম, অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আলাউদ্দিন আজাদ, অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ, ড. অনুমপ সেন, অধ্যাপক জাফর, অধ্যাপক আছহাব উদ্দিন আহমদ, চিত্রশিল্পী সবিহ-উল-আলম, মোরতুজা বশীর, দেবদাস চক্রবর্তীসহ দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবিরা অংশ নিয়েছিলেন।
মুসলিম লীগের অত্যাচারে বোয়ালখালীতে কোনো দলের সভা সমাবেশের সুযোগ ছিলো না। আইয়ুব খান সরকারের মন্ত্রী ফজল কাদের চৌধুরী তৎকালীন পোপাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে রবীন্দ্র-নজরুল জন্ম জয়ন্তী ভেঙ্গে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এর প্রতিবাদে ইকবাল পার্কে আয়োজিত ফজল কাদের চৌধুরীর সভা ভেঙে দেয় ছাত্র ইউনিয়ন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এই বীর সৈয়দুল আলম।
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও তিনি সংগ্রাম করে চলেছেন মানুষের অধিকার আদায়ে।
সৈয়দুল আলম বলেন, মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তবে স্বাধীনতার যে মূল্যবোধ তা আজও আমরা ভোগ করতে পারছি না।
অসাম্প্রদায়িক বাঙালির যে ঐতিহ্য তা বারবার ভূলুণ্ঠিত করছে পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা। তাই থেমে থাকলে চলবে না সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে আগামীর প্রজন্মের স্বার্থে।