দেবাশীষ বড়ুয়া রাজু : কৃষি আবাদে লাঙ্গল একটি অপরিহার্য । তাই কৃষকের সাথে লাঙ্গলের নিবিড় সম্পর্ক। আমাদের দেশে এক সময় ক্ষেতে খামারে কৃষকের লাঙ্গল, মই দিয়ে চাষাবাদের দৃশ্য সবার নজর কাড়তো। প্রযুক্তিগত অগ্রযাত্রায় সে লাঙ্গল আর কৃষকের মিতালী এখন চোখে পড়ে না বললেই চলে।
আধুনিক কৃষি যন্ত্র এখন কৃষকের দ্বার প্রান্তে। চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গল ও হালের বলদ দিয়ে জমির চাষ ছিল। কালের বিবর্তনে লাঙ্গলের প্রয়োজন ফুরিয়ে এসেছে কৃষকের। হাজার বছর ধরে চাষাবাদে লাঙ্গলের ব্যবহার অনেকেরই জানা। বহুল ব্যবহৃত বাঁশ কাঠের হাতল ও লোহার পাতের ফলা দ্বারা তৈরিকৃত কাঠের লাঙ্গলের বিলুপ্তি ঘটেছে।
লাঙ্গলের সাথে কৃষকের এই গভীর মিতালী কৃষি প্রধান বাংলায় এখন শুধুই রূপকথার গল্প। কাঠের লাঙ্গল আর হালের বলদ ছাড়া চাষাবাদ যা এক সময় চিন্তাই করা যেত না। পাখি ডাকা কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে হালের বলদ নিয়ে, কাঁধে লাঙ্গল নিয়ে মাঠে ধাবমান কৃষানের দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। শুধু মাত্র লাঙ্গল, বলদ আর মই জোঁয়ালের উপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে কৃষককূল এখন দ্রুত সময় ও কম কষ্টে চাষ করার জন্য নির্ভর করছে আধুনিক যন্ত্রপাতির উপর।
উপজেলার চরখিদিরপুর, পশ্চিম গোমদন্ডী, শাকপুরা, সারোয়াতলী, কধুরখীল, চরণদ্বীপ, পোপাদিয়া, আমুচিয়া, খরণদ্বীপ জ্যৈষ্টপুরা ও আহল্লা কড়লডেঙ্গাসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় যে, এখন কৃষকরা জমিচাষে লাঙ্গল বলদ আর মই ব্যবহার করেন না। তারা এখন দ্রুত চাষযোগ্য কলের লাঙ্গল ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার ব্যবহার করছে। তবে উপজেলার পূর্বাঞ্চলে কিছু কিছু মানুষ তৃপ্তির আখড় ভরে প্রাচীন ঐতিহ্য সংরক্ষণে টিকিয়ে রেখেছে হালের বলদ ও কাঠের লাঙ্গল। যা স্মরণ করিয়ে দেয় কৃষক প্রধান বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যকে।
এ বিষয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ট্রাক্টর এবং পাওয়ার টিলার ব্যবহারের কারণে তাদের পরিশ্রম ও খরচ কমে এসেছে। বর্তমানে হালের বলদ পালন করে চাষাবাদে ব্যবহার দু:সাধ্য হয়ে পড়েছে।
চরখিদিরপুর এলাকার প্রবীণ কৃষক মফিজুর রহমান জানান, কাঠের লাঙ্গলের ব্যবহারে চাষাবাদে জমির সর্বোচ্চ উর্বরতা শক্তি ব্যবহৃত হতো। ট্রাক্টর কিংবা পাওয়ার টিলার দ্বারা জমি চাষ দিলে জমি তুলনামূলক কম উর্বর হয়। ফলে জমিতে অধিক রাসায়নিক সারের প্রয়োজন পড়ে। যার কারণে ফসলে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যায়, ফলে কীটনাশক ব্যবহার হয় অতিমাত্রায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ বলেন, কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক কৃষি যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে কৃষক অনেকটাই লাভবান হচ্ছে। পূর্বে ট্রাক্টর কিংবা পাওয়ার টিলারের ব্যবহার পর্যাপ্ত ছিলনা, সেই কারণে কৃষকরা লাঙ্গল, মই ও হালের বলদ দিয়ে চাষ করতো। প্রযুক্তির কারণে তা আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে। যাদের লাঙ্গল মই কিংবা হালের বলদ আছে তারা ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা করছে। তবে প্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল সম্বন্ধে কৃষকদের সচেতন হতে হবে।