দিনাজপুরের হাট-বাজারে শীতকালীন শাক-সবজি উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু কিনতে গিয়ে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। দাম বেশি হওয়ায় তারা হাত দিতে পারছে না।

‘সারা দিন অটো চালাইয়া ৫০০-৬০০ টেহা কামাই করি। অটোর মালিককে দিনত (দিনে) ৪৫০ টেহা দিবা হয়। অটো চালাইবার গেইলে দিনত অটো নষ্ট হয়, মোক নাস্তা খাবার হয়। বাকি যে টেহা থাকে, সেই টেহা দিয়া পরিবারের জন্যি বাজার করিবার হয়।

‘মোর পরিবারত আবার ছয় জন সদস্য। তিন বেলা ভাত খাইতে গেইলে সাড়ে তিন কেজি চাইল লাগে। আর সাড়ে তিন কেজি চাইল কিনিবার গেইলে ২০০ টেহা শেষ।

‘সারাদিন অটো চালাইয়া পকেট থাকে ১৫০ থাকি ২০০ টেহা। আর চাইল কিনিতেই ২০০ টেহা লাগে। বাজারত তো আবার নতুন নতুন সবজি উঠিছে। কিন্ত যে দাম, তাতে সবজি কিনিবার টেহা নাই। মাছ-মাংস তো দূরের কথা।’

বৃহস্পতিবার সকালে দিনাজপুর শহরের রেল বাজারে সবজি হাটে এ আক্ষেপ ঝরে পড়ে গোলাপবাগ এলাকার ৬৪ বছর বয়সী ফজলার রহমানের কণ্ঠে। সপ্তাহের প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার এই হাট বসে। দিনাজপুর জেলা শহর ও বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতা আসেন এই বাজারে।

ইতোমধ্যে দিনাজপুরের হাট-বাজারে শীতকালীন শাক-সবজি উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু নতুন শাক-সবজি কিনতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। দাম বেশি হওয়ায় তারা হাত দিতে পারছে না।

রেল বাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতকালীন সবজির মধ্যে পটল বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। একইভাবে বেগুন প্রকারভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, মুলা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, লাউ (প্রতি পিস) ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি, শিম ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।

চাল কিনতে সবজির টাকা শেষ
 বাজারে উঠেছে শীতকালীন শাক-সবজি। কিন্তু দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে

শহরের মির্জাপুর মিশন পাড়ার সবজি ক্রেতা সবুজ ইসলাম বলেন, ‘সকালে ১ ঘণ্টা আগে বাজারে আসছি। সব জিনিসের দাম ৫ থেকে ১০ করে বেড়ে গেছে আজকে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শাক-সবজির দামটা অনেক বেশি। যেখানে আগে একটা শাকের আঁটি ১০ টাকা করে বিক্রি হইত। সেখানে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা করে। শীতকালীন সবজি বেশি কিনতে পারি নাই। সকালে ২ হাজার টাকা নিয়ে আসছি, এখন ২শ টাকা পকেটে আছে। তারপরেও মনে হয় বাজারই হয়নি।’

চিরিরবন্দর উপজেলার মাদারগঞ্জ এলাকার মাসুদ বলেন, ‘বাজারে সবকিছুরই দাম মানুষের আয়ের চেয়ে বেশি। বাজার যাচাই না করে ঘরে ঘরে খবর নিলে বোঝা যাবে মানুষ কী পরিস্থিতে আছে, কীভাবে, কী কিনে কতটুকু খাচ্ছে। এমনও অনেক বাড়ি আছে যারা আলু ভর্তা ভাত খেয়ে দিন পার করছে। আমার বাড়িতে একটা ছোট দোকান আছে, সেই দোকানের জন্য বাজার করলাম। এখান থেকে যা বেচে যাবে, তাই খাব। ৩ কেজি তেল দোকানের জন্য কিনে নিয়ে গেলে গোটা সপ্তাহে বিক্রি হয় না। সকালে ৮০০ টাকা নিয়ে বাজারে আসছি। এখন পকেটে গাড়ি ভাড়া ৩০ টাকা আছে।’

সবজি বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, ‘বাজারে নতুন শীতকালীন শাকসবজি বিক্রি হচ্ছে। এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটল, শসা, গাজর, শিম, টমেটো, বরবটি। নতুন শাক-সবজি উঠতে শুরু করেছে। সবকিছুরই দর একটু চড়া। বাজারে এখন তেমন ক্রেতা নেই। মানুষের আয় রোজগার কমে গেছে। তা ছাড়া মাসের শেষ আর নতুন মাস শুরু। মানুষের হাতের তেমন টাকা পয়সা নেই। তাই বাজার একটু খারাপ।’

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here