বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা এম মোরশেদ খানের জন্য চট্টগ্রাম-৮ আসনে অনুষ্ঠেয় উপ-নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলটির চান্দগাঁও থানা কমিটির পদধারী এক নেতা! অথচ এম মোরশেদ খান জানিয়েছেন, তিনি কোন দলের প্রার্থী হবেন না। তবে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

এদিকে গতকাল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আবু সুফিয়ান। তিনি মোরশেদ খানের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারীর বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ করছেন।

জানা গেছে, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের মাধ্যমে কারাবন্দি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বরাবর গত ৫ নভেম্বর দিবাগত রাতে পদত্যাগপত্র জমা দেন এম মোরশেদ খান। পরদিন তিনি গণমাধ্যমের কাছে বিএনপি’তে গণতন্ত্রের চর্চা হয় না বলেও সমালোচনা করেছিলেন। এমনকি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিয়েও মন্তব্য করেছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে তার জন্য গতকাল চান্দগাঁও থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন খান মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করায় তৃণমূলে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসনে গত ২৭ নভেম্বর এম মোরশেদ খান, নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান ও বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। গত বছরের ২৭ নভেম্বর তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়। পরবর্তীর্তে ৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাত তিনটায় আসনটিতে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয় আবু সুফিয়ানকে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ আছে বলে জানিয়েছেন তার অনুসারিরা। দল থেকে পদত্যাগের এটিও একটি কারণ বলে গুঞ্জন আছে।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘শরীফ উদ্দিন খান দলের পদে আছেন। তবু তিনি মোরশেদ খানের জন্য মনোনয়ন ফরম নিয়েছে। এতে দলের শৃক্সখলা ভঙ্গ হয়েছে। মোরশেদ খান দল সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক কথা বলেছিলেন, এরপরও তার পক্ষে কেউ দলের পদে থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা হওয়া উচিত।’

নিজেও উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন জানিয়ে আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আজকে (গতকাল) মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। যদি সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমরা বিজয়ী হবো। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যদিও শংকা আছে।’

মোরশেদ খানের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চান্দগাঁও থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন খান। ‘মনোনয়ন ফরম নেয়ার ক্ষেত্রে মোরশেদ খানের কোন নির্দেশনা ছিল কী না’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আসলে উনি না, এলাকার সবাই, নেতাকর্মীরা উনাকে নির্বাচন করার জন্য চাপ দিচ্ছেন, এজন্য নেয়া।’ ‘মনোনয়ন ফরম নেয়ার জন্য মোরশেদ খান বলেছেন? ’এমন প্রশ্নে শরীফ উদ্দিন খান বলেন, ‘উনি কি বলবেন, এলাকার লোকজন যেটা বলবেন সেটাই। এলাকার লোকের পছন্দের একটা চাপ আছে।’

‘আপনি দলের পদে আছেন। কিন্তু মোরশেদ খান দলে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। আবার বিএনপি দলীয় প্রার্থী দিতে পারেন। এইক্ষেত্রে আপনার অবস্থান কি হবে?’ এমন প্রশ্নে শরীফ উদ্দীন খান বলেন, ‘উনি তো স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করবেন। তাছাড়া উনি দলে যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সেটা এক্সেপ্টও হয়নি। আমার মনে হয় না, দল বার বার ভুল করবে। আমরা চাচ্ছি, হাই-কমান্ড এলাকার সেন্টিমেন্টকে গুরুত্ব দিক।’

মোরশেদ খানের পক্ষে বিএনপি নেতার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

কি বলছেন মোরশেদ খান :
উপ-নির্বাচনে অংশ নিবেন কী না জানতে চাইলে গতকাল বিকেলে এম মোরশেদ খান বলেন, ‘আমি তো এখনো ফরম নিই নাই। তবে মাঠে সবার ‘এক্সেপ্টেশন’ আছে। তারা আমাকে চার বার এমপি হিসেবে দেখেছে। ওটা (চট্টগ্রাম-সংসদীয় এলাকা) তো আমার ঘর। জন্মও সেখানে এবং বড়ও হয়েছি।’

‘শেষ পর্যন্ত আপনার চিন্তাভাবনা কি? এমন প্রশ্নে মোরশেদ খান বলেন, ‘আমি তো প্রথমে বলেছিলাম, নির্বাচনে অংশ নিব না। করলেও কোন দল থেকে নির্বাচন করবো না। এবয়সে এসে দলবাজি করার কোন ইচ্ছা নাই। এলাকাবাসীর উপর আমার আস্থা আছে। শেষ বয়সে এলাকাবাসীকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য, এলাকার কিছু উন্নয়নের জন্য যা করা দরকার তা আমি করবো।’

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম-৮ আসনে আগামী ১৩ জানুয়ারি উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল একাদশ সংসদ নির্বাচন। গত ১ ডিসেম্বর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৫ ডিসেম্বর এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ ডিসেম্বর। নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here