চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে বোয়ালখালী উপজেলায় ভোটের আগে উত্তাপ ছড়ালেও নির্বাচনের দিন পরিবেশ ছিলো শান্ত। কুয়াশা ঘেরা সকাল থেকেই ভোটারদের উপস্থিতিতে সরব হয়ে উঠো কেন্দ্রগুলো। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উপজেলার ৬৯টি কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটাররা ভোট দিতে গিয়ে নিজের ছবি সম্বলিত জাতীয় পরিচয় পত্র দেখতে পেয়েছেন মেশিনে। এ নিয়েই আলোচনায় সরব ছিলেন ভোটাররা।

সরজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্রে ছিলো আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কড়া নিরাপত্তা। কেন্দ্রের আশেপাশে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। প্রায় কেন্দ্রে বিএনপি ও অন্যান্য প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের দেখা মেলেনি। নির্বাচনী এজেন্টের উপস্থিতিও ছিলো না অনেক কেন্দ্রে।

তবে সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ভোট কেন্দ্রে বৃদ্ধা দীপ্তি বণিক (৭২), রিনা সরকার (৭১) ও আরতী সিকদার (৭১), রাবেয়া খাতুন (৭৮), আবুল হোসেনের (৮২) দেখা মেলে কয়েকটি কেন্দ্রে। তারা জানান, জীবন সায়াহ্নে এসে এবার প্রথম মেশিনে ভোট দিয়েছেন। নতুন এক স্মৃতি যোগ হলো এবারের নির্বাচনে।

বিএনপি নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, ভোট কেন্দ্রে ভোটাররা আঙুলের ছাপ দিয়ে নিজের পরিচয় সনাক্ত করলেও ব্যালেটে ভোট দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা। দুপুরের পর থেকে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি কমতে থাকে।

সারোয়াতলী নুর মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট মোহাম্মদ আবুল মনসুর অভিযোগ করেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভোট কেন্দ্রে গেলে আওয়ামী লীগ সমর্থিক নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

চরণদ্বীপ সিকদারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিকেল ৩টার দিকে দেখা গেছে, ভোটারের লাইন ছিলো প্রায় ফাঁকা। প্রিসাইডিং অফিসার গৌতম রায় জানান, ৭৩৬ ভোট কাস্ট হয়েছে। ওই কেন্দ্রে ভোটার রয়েছেন ২হাজার ৭৩০জন।

নির্বাচনের আগে বোয়ালখালী প্রচার প্রচারণায় বাধা দেওয়া, পোস্টার-ব্যানার ছেঁড়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে আসছিলেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদ্বয়।

তবে এ ধরণের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা নির্বাচনের দিন ঘটেনি বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া খাতুন। তিনি বলেন, উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ১জন জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেটসহ ১০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি, পুলিশ, আনসার, এপিবিএন, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সর্তক অবস্থানে রয়েছেন।

এ আসনের উপ-নির্বাচনে ৬জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদ, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, ন্যাপের বাপন দাশগুপ্ত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ এমদাদুল হক।

এই আসনের বোয়ালখালী উপজেলায় ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৬৪ হাজার জন। গত ৭ নভেম্বর এ আসনের সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে শুণ্য ঘোষণা করা হয়।

বোয়ালখালী উপজেলার ৬৯টি ভোট কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যনুযায়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৯হাজার ৩৮৩ ও বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৬হাজার ৪৭০ ভোট।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here