চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন সফল করতে এরই মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে ভোটগ্রহণ। রোববার (১২ জানুয়ারি) শেষ হয়েছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা।

তবে ইভিএম নিয়ে বিএনপি প্রার্থীর শঙ্কা থাকলেও নির্বাচন কমিশন বলছে, ইভিএমেই শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে।

এদিকে নির্বাচনী পরিবেশ এবং ইভিএমে ভোট গ্রহণ নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। শনিবার মক ভোটিংয়ে অংশ নিতে আসা বেশ কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজ প্রতিবেদকের।

ভোটাররা বলছেন, আগে ভোট দিলে অন্তত এটা বোঝা যেত, আমি নির্দিষ্ট কোনও একটা মার্কায় ভোট দিয়েছি। কিন্তু এখন তা স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় কোথায় ভোট দিচ্ছি আর কোথায় চলে যাচ্ছে, তা বুঝতে পারছি না। ভোট দেওয়ার পর প্রতীক চিহ্ন বেশ কয়েক সেকেন্ড মেশিনে দৃশ্যমান থাকায় পরবর্তী ভোটার তা দেখতে পাচ্ছে। এটা বিব্রতকর।

আবার ইভিএমকে বেশ সহজ পদ্ধতি বলে মনে করছেন অনেক ভোটার। তারা বলছেন, কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই সহজে ভোট প্রদান করা যাচ্ছে। একজনের ভোট অন্যজন দেওয়ার সুযোগ নেই।

ইভিএম নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও কালুরঘাট সেতু ইস্যুতে একমত সকলে। ভোটারদের দাবি, যে প্রার্থীই নির্বাচিত হোক কালুরঘাট সেতু যাতে দৃশ্যমান হয়।

অন্যদিকে ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণে আশ্বাসের ফুলঝুরি ছুড়ছেন প্রার্থীরা। প্রায় সকলেই কালুরঘাট সেতু ইস্যুতে ভর করে পার হতে চান নির্বাচনী বৈতরণি।

তবে ইভিএম প্রশ্নে এখনো অনড় অবস্থানে বিএনপি। গত বছর অনুষ্ঠিত হওয়া চট্টগ্রাম-৯ আসনের উপ-নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণে কারচুপির অভিযোগ তোলে দলটি।

বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, ইভিএম ব্যবহার নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে। কারণ বিগত নির্বাচনগুলোতে যেসব আসনে ইভিএম ব্যবহৃত হয়েছিল সবগুলোতেই ভোট কারচুপি করা হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে আমাদের কোন আস্থা নেই। এছাড়া নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার পর থেকে আমাদের ওপর হামলা করেছে আওয়ামী সমর্থকরা। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে হামলা হয়েছে বলে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে।

এ আসনে মোট মোট ১৭০টি কেন্দ্র রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৫৮টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এতেও দ্বিমত রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, নির্বাচনী সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে সব কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ। সবগুলো কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন থাকবে।

এর আগে গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনী পরিবেশ দেখতে বোয়ালখালী যান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এসময় তিনিও ঝুঁকিপূর্ণ কোন কেন্দ্র নেই বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনও রকম ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নেই। তবে বেশ কয়েকটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে রোববার (১২ জানুয়ারি) ভোটকেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। এছাড়া নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।

এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৮ জন। এর মধ্যে বোয়ালখালী উপজেলায় ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার। আর শহরে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১১হাজার ৯৮৮জন। ভোটকক্ষ ১ হাজার ২৫২টি।

নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মোছলেম উদ্দিন, বিএনপির আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এসএম আবুল কালাম আজাদ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ আহমদ, ন্যাপের বাপন দাশগুপ্ত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ এমদাদুল হক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here