বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহরটির রয়েছে প্রায় চার হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য। চট্টগ্রাম এক দিনে যেমন ইতিহাস এবং ঐতিহ্যে ভরপুর নগরী, তেমনি দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম প্রাচীন কাল হতে ই এক গুরুত্ব পূর্ণ নগরী হিসেবে স্থান পেয়েছে, যে কারনে চট্টগ্রামে বার বার ক্ষমতার পালা বদল হয়েছে। এই ক্ষমতার পালাবদলের ফলে চট্টগ্রাম নগরী একেক সময়ে একেক ধরণের সংস্কৃতি চর্চা করেছে যার ফলে এই নগরী তে আজও বিভিন্ন ধরনের রীতি নীতি বর্তমান। এই নগরী টি হিন্দু,মুসলিম, খ্রিস্টান,বৌদ্ধ সব ধর্মের রাজা বাদশাহ গণ ই শাসণ করেছে। ফলে এ নগরী টি বিভিন্ন ধর্মের সংস্কৃতির এক অনন্য মিশেল নিয়ে আজও বেড়ে উঠছে। চট্টগ্রাম নগরীর অনেক জানা -অজানা বিষয় নিয়ে ই আজকের আয়োজন।
নামকরণের ইতিহাস
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি হচ্ছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম জেলা টি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। চট্টগ্রাম এর নামকরণ নিয়ে কোন সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় না। চট্টগ্রামের অনেক রকমের নাম থাকার কারনে কোন নামকরণের কোন উৎসের কোন একটি বিষয় নিয়ে কিছু সংখ্যক ঐতিহাসিকও একমত হতে পারেন নি। বরং বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন ধরণের মতবাদ পেশ করেছেন।
বর্তমান চট্টগ্রামের পূর্ববর্তী নাম ছিল চাঁটিগাও বা চাঁটগাঁও, এ দুই নাম হতে চট্টগ্রামের নাম হয়েছে বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করে থাকেন। ত্রয়োদশ শতকের দিকে গৌড় বিজয়ের পর ইসলাম প্রচারের জন্য ১২ জন আউলিয়া এ অঞ্চলে আসেন। কিন্তু সে সময় ধারণা করা হতো এ অঞ্চলে জ্বীন বা পরীর প্রচুর উপদ্রব ছিল। এসব জ্বীন পরী দের তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এসব আউলিয়া গণ বড় আকারের চেরাগ বা বাতি কোন উচু স্থানে জ্বালিয়ে রাখতেন। ঐ চেরাগ বা বাতির আলো যতদূর পর্যন্ত যেত, সে পর্যন্ত জ্বীন-পরী আসতে পারত না বলে লোক মুখে প্রচলিত। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় চেরাগ বা বাতি কে বলা হয় চাঁটি বা চাঁট এবং গ্রাম কে বলা হয় গাঁও,,এ থেকে ঐ অঞ্চলের নাম হয় চাঁটিগাঁও বা চাঁটগাঁও, যা থেকে পরবর্তী তে চট্টগ্রাম নাম টি হয়েছে।
আবার কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন যে, খ্রিস্টীয় ৯৫৩ সালে আরাকানের রাজা বৌদ্ধ রাজা চট্টগ্রাম বিজয় করে একটি স্মৃতি স্তম্ব তৈরি করে যান, যার মধ্যে তিনি লিখে যান “চিৎ-ত-গৌং” যার অর্থ হচ্ছে যুদ্ধ করা অন্যায়। এই উৎস থেকেও চট্টগ্রামের নামকরণ হতে পারে বলে মনে করা হয়।
আবার একজন ঐতিহাসিক মত প্রকাশ করেন যে, চট্টগ্রাম নাম টি এসেছে আরবি শব্দ “শ্যাত বা শাত” যার অর্থ খন্ড বা ব-দ্বীপ এবং গঙ্গা থেকে। অর্থ্যাৎ এটি দ্বারা গঙ্গা নদীর মোহনায় অবস্থিত নগর কে বোঝানো হয়েছে। যা পরবর্তী তে চট্টগ্রাম নামধারণ করেছে।
ভারতবর্ষে মুঘল শাসণ শুরু হবার পরে, ১৬৬৬ সালে মুঘলরা আরাকান রাজাকে পরাজিত করে চট্টগ্রাম দখন করে নেন এবং মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। মুঘলরা এর নাম দেন “ইসলামাবাদ”। পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের পর ১৭৬০ সালে মীর কাসেম আলী খান চট্টগ্রাম কে ইংরেজদের নিকট হস্তান্তর করেন। ইংরেজরা “ইসলামাবাদ” কে পরিবর্তন করে এর নাম রাখেন “চিটাগাং”।বর্তমানে বাংলাতে চট্টগ্রাম লেখা হয় এবং ইংরেজিতে চিটাগাং লেখা হয়।
ইতিহাস
চট্টগ্রামের এর বয়স প্রায় ৪ হাজার বছরের চেয়েও বেশী বলে ধারণা করা হয়। প্রাচীন নব্য প্রস্তরযুগেও এ অঞ্চলে মানুষের বসবাস ছিল বলে তার বলা হয়। সে সময় কার বেশ কিছু নির্দশন ঐতিহাসিকগণ খুজে পেয়েছেন। তার মধ্যে সীতাকুন্ডে পাওয়া একটি প্রস্তরীভূত তলোয়ার, এটি নব্য প্রস্তর যুগের একটি নির্দশন। তবে এই সময়কার তেমন একটা নির্দশন পাওয়া যায় না। তাই ধারণা করা হয় যে, এ অঞ্চলে বসবাস করা অস্ট্রো-এশিয়াটিক গোষ্ঠী মানুষেরা বসবাস করত, তব তারা এখানে খুব বেশী টিকতে পারে নি বা বসবাস করে নি ধারণা করা হয়। কোন কোন গবেষণায় বলা হয়,প্রাচীন মিসরের বিভিন্ন নথিপত্রের মধ্যেও চট্টগ্রামের সম্পর্কে জানা যায়। এমনি গ্রিক ভৌগলিকদের লেখায়ও চট্টগ্রামের কথা জানা যায়। সে থেকে ধারণা করা হয় এ চট্টগ্রামের বয়স আনুমানিক ৪ হাজার বছর। ঐতিহাসিক বৌদ্ধ লামা তারানাথ তার বইয়ে লেখেন যে, চট্টগ্রাম ছিল চদ্রগুপ্ত বংশের রাজধানী। আরবের ভৌগলিকগণ চট্টগ্রাম কে “সমুন্দর ” বলে অভিহিত করেছেন। তখন এ অঞ্চলে পাল শাসণামল ছিল। রাজা ধর্মপাল ছিলেন তৎকালীন পাল বংশের রাজা। নবম শতকের মাঝামাঝি সময়ে আরাকানের রাজা, চট্টগ্রাম কে দখল করে নেন। তখন তিনি একটি স্তম্ভ তৈরি করেন। যাতে চিৎ-ত-গৌং লিখে যার যান,যার বাংলা অর্থ দ্বারায় যুদ্ধ করা উচিৎ নয়। সে থেকে এ অঞ্চলের নাম চট্টগ্রাম হয়েছে বলে মনে করা হয়। আনুষ্ঠানিক ভাবে চট্টগ্রামের শহরের গোড়াপত্তন ধরা হয় ১৩৩০ সাল কে, মনে করা হয় ১৩৩০ সাল থেকে ই চট্টগ্রাম অঞ্চল গড়ে উঠেছে। ১৩৩৮ সালে বাংলার রাজা ছিলেন ইলিয়া উদ্দিন মোবারক শাহ্, মূলত তার সময় কাল হতেই এ অঞ্চলের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। তার পূর্বে যে সকল ইতিহাস জানা যায়, সে সব ছিল অস্পষ্ট এবং গ্রহণযোগ্যতা ছিল কম। ইলিয়াস উদ্দিন মোবারক শাহ্ এর পর চট্টগ্রাম কে শাসণ করতেন তার পুত্র ইখতিয়ার উদ্দীন গাজী শাহ্।
তাকে হত্যা করে এ অঞ্চলের ক্ষমতায় বসেন শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ্,যিনি হচ্ছেন বাংলার প্রথম স্বাধীন নবাব। এর পরে চট্টগ্রাম কে শাসণ করেছেন বিভিন্ন হিন্দু রাজারা। চট্টগ্রাম অঞ্চল কে অনেক রাজ বংশ, অনেক রাজা, অনেক নবাব শাসণ করেছেন। চট্টগ্রামের ক্ষমতা বার বার পরিবর্তনের কারন ছিল ভৌগলিক ভাবে এর গুরুত্ব।
পর্তুগিজদের আগমণ
চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্বের কারনে বিশ্বের অনেক দেশের বণিক বাণিজ্য করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে মালামাল নিয়ে আসতেন। ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর। এ অঞ্চলের গুরুত্ব অনুধাবণ করে ১৫ শতকের শুরুর দিকে পর্তুগিজরা বাংলায় আসতে শুরু করেন। তখন বাংলার শাসক ছিলেন গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ। পর্তুগিজদের বাংলায় আগমণের উদ্দেশ্য ভালো ছিল না কখনো ই। পর্তুগিজরা ছিল দস্যূ জাতি। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বাণিজ্যের নাম করে গিয়ে জলদস্যূ গিরি করত। বাংলাতেও এর ব্যতিক্রম হয় নি। তবে গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ্ বিষয় টি বুঝতে পারেন এবং পর্তুগিজদের দমন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই একই সময়ে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে, আফগান শাসক শের শাহ্ বাংলা আক্রমণ করবেন। শের শাহ্ ছিলেন বাংলার শাসকের চেয়ে শক্তিশালী, তাই গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ্ এই আক্রমণের ভয়ে পর্তুগিজদের সাহায্য কামনা করেন। তখন পর্তুগিজরা চতুরতার আশ্রয় গ্রহণ করেন। তারা সাহায্যের বিনিময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের কতৃত্ব চান। গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ কোন কিছু না ভেবে চট্টগ্রাম বন্দর কে পর্তুগিজদের হাতে তুলে দেন। পর্তুগিজরা সেখানে একটি বাণিজ্য কুটির নির্মাণ করেন এবং শুল্ক আদায়ের অধিকার পান। তবে গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ এর পরাজয় হয় ১৫০৮ সালে শের শাহ এর সেনাপতির হাতে। তিনি চট্টগ্রাম দখল করে নেন এবং চট্টগ্রাম শাসণ করেন।
আরাকানি শাসণ
শের শাহ্ এর সেনাপতির শাষণের পর চট্টগ্রামে আরাকান রাজাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। আরাকান রাজারা ১৫৮১ সাল থেকে ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম এবং এর আশে পাশে শাসণ করেন সম্পূর্ণ কতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে। তবে এ সময়ও পর্তুগিজদের দস্যূগিরি চরম আকারে বেড়ে গেলে আরাকান রাজা তাদের শক্ত হাতে দমন করেন।
চট্টগ্রামে আরাকানি বা মগদের শাসণ খুব ই গুরুত্বপূর্ণ। আরাকানিরা এ অঞ্চলে শাসণ করার সময় অনেক মানুষ চট্টগ্রাম থেকে আরাকানে বসতি স্থাপন করেন। এর ফলে আরাকানে মুসলিম বসতি গড়ে উঠে। আরাকানদের প্রচলিত বিভিন্ন রীতি-নীতি আজও চট্টগ্রামে দেখা যায়। যেমন জমির পরিমাপে আজও মগী কানির ব্যবহার হয়ে থাকে,কিছুকাল পূর্বে আরাকানি বর্ষপুঞ্জিও চট্টগ্রামে ব্যবহৃত হত। চট্টগ্রামের অনেক জ্ঞানী গুনি মানুষের স্থান হয়েছিল আরাকান রাজার দরবারে, তার মধ্যে মহাকবি আলাওল বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
মুঘল শাসণ
দিল্লির মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খান কে চট্টগ্রাম দখল করার জন্য নির্দেশ দেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবের এর নির্দেশ দেওয়ার পর সুবেদার শায়েস্তা খান এর পুত্র উমেদ আলী খান আরাকানিদের পরাজিত করে, চট্টগ্রাম দখল করেন। এ সময় পর্তুগিজরা মুঘলদের সহায়তা করেন। তবে মুঘল শাসকেরা যতদিন চট্টগ্রাম শাসণ করেছে , আরাকানিরা ততকাল বার বার চট্টগ্রাম দখলের চেষ্টা করেছেন। তবে তারা বার ব্যর্থ হয়েছেন। আরাকানিরা শাসকরা ইংরেজদের সাথে যুক্ত হয়ে বার বার চেষ্টা করেছেন চট্টগ্রামের কর্তৃত্ব ফিরে পাওয়ার তবে কখনো সফল হতে পারেন নি।
মুঘল শাসণামলে চট্টগ্রামে উল্লেখ্যযোগ্য তেমন কিছু হয় নি,কারন মুঘল শাসণ ব্যবস্থা দিল্লি কেন্দ্রীক যার ফলে মুঘল শাসকেরা দিল্লি ও আশপাশের অঞ্চল কে প্রাধান্য বেশী দিয়েছেন।
নবাবি শাসণ
মুঘলদের শাসণামল এর পর চট্টগ্রাম কে শাসণ করতেন বাংলার কয়েক জন নবাব। বাংলার নবাবদের শাসণামলের সময়ও মগরা চট্টগ্রামে অভিযান চালায় তবে তারা এবার ব্যর্থ হন। চট্টগ্রাম কে শেষ স্বাধীন নবাব হিসেবে শাসণ করেন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা। পলাশীর যুদ্ধে নবাবের পরাজয়ের পর প্রায় ২০০ বছর ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলের মত ব্রিটিশদের অধীনে চলে যায়।
ইংরেজ শাসণ
পলাশীর যুদ্ধে মীর জাফর এর বিশ্বাসঘাতকতার ফলে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা পরাজিত হন। তারা পরাজয়ের পর ব্রিটিশরা নবাবের আসনে বসান মীর জাফর কে। ব্রিটিশরা মীর জাফর কে চট্টগ্রাম বন্দর কে তাদের হাতে তুলে দিতে বললে মীর জাফর অস্বীকৃতি জানান। ফলে মীর জাফর ইংরেজদের বিরাগভাজন হয়ে পড়েন। মীর জাফর কে ক্ষমতা হতে সরিয়ে নবাবের পদে বসানো হয় মীর কাসিম কে। মীর কাসিম ১৭৬১ সালে নবাবের আসনে বসার পর চট্টগ্রাম বন্দর কে ইংরেজদের হাতে তুলে দেন। ইংরেজরা এর নাম দেন “চিটাগাং”।
ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মত চট্টগ্রামও ইংরেজদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে যায় ফলে ইংরেজরা তাদের ইচ্ছা মত চট্টগ্রামের মানুষের উপর কর ধার্য করেন। তবে ইংরেজদের এসব অন্যায় কে প্রতিরোধ করার মত তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে যার ফলে ইংরেজরা প্রায় ২০০ বছর এ অঞ্চল শাসণ করেছেন। ইংরেজরা এ অঞ্চল হতে নিয়েছেন বেশী আর দিয়েছেন খুব ই সামান্য। তবে ইংরেজ শাসণের সময় চট্টগ্রাম অবকাঠামোগত এবং শিক্ষাগত উন্নয়ন সাধিত হয়।
চট্টগ্রাম প্রায় চার হাজার বছরের জনপদ, এই চারা হাজার বছরে অনেক রাজাগণ চট্টগ্রাম শাসণ করেছেন। চট্টগ্রামের শাসণামলের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি এবং সবচেয়ে লাভ হয়েছে ইংরেজ শাসণামলে। ইংরেজরা একদিকে চট্টগ্রাস বন্দর কে ব্যবহার করে এ উপমহাদেশ হতে বিশ্বের নানা বন্দরে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি করেছিলেন,তারপরও আবার চট্টগ্রামের মানুষের চাপিয়ে দিয়েছিলেন উচ্চহারে কর। এ উচ্চহারের করের ফলে অনেক জমিদার পরিবার গরীব হয়ে পড়ে। তারা এ অঞ্চল হতে আরাকানের সাথে সরাসরি ব্যবসা করতেন ফলে ইংরেজ বণিকদের অর্থ সম্পদ ফুলে ফেপে উঠে, অন্য দিকে দরিদ্র হতে থাকে এ অঞ্চলের মানুষ।
তবে এত সব খারাপের মাঝে ইংরেজরা নিজেদের প্রয়োজনে হোক বা দায়বদ্ধতা থেকেই হোক তারা চট্টগ্রাম কে তৎকালীন সময়ে অবকাঠামোগত ভাবে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটান,এ সময় তারা রাস্তা-ঘাট, বিভিন্ন ইমারত, ব্রিজ ইত্যাদি নির্মাণ করেন। এ সময় তারা অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে এ অঞ্চলের মানুষদের শিক্ষার আলো দিয়ে যান।
ইংরেজরা বাংলা থেকে নিয়ে গেছে সম্পদ, দিয়ে গেছে সভ্যতা।
ভৌগলিক অবস্থান
চট্টগ্রামের বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের অতি নিকটে অবস্থিত। চট্টগ্রামের ভৌগলিক অবস্থান ২২ ডিগ্রী ২২ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২২ ডিগ্রী ৩৭ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১ডিগ্রী ৪৮ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে ৯১ ডিগ্রী ৮০ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। চট্টগ্রাম মহানগর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। এ নগরীর চারপাশে উত্তরে রয়েছে ভারতের মিজোরাম এবং ত্রিপুরা রাজ্য এবং বাংলাদেশের সিলেট বিভাগ,পূর্বে রয়েছে মিজোরাম রাজ্য,ত্রিপুরা এবং মায়ানমার, পশ্চিমে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগ এবং মেঘনা নদী,দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর। চট্টপাশের পাশের জেলা গুলোর মধ্যে রয়েছে নোয়াখালী,ফেনী,ব্রাহ্মনবাড়িয়া,কক্সবাজার,বান্দরবান,কুমিল্লা ইত্যাদি জেলা। চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বা স্থান হচ্ছে চট্টগ্রাম।
আবহাওয়া ও জলবায়ু
চট্টগ্রামের বাংলাদেশের অন্য সকল স্থানের মত ই ৬ টি ঋতুর দেখা পাওয়া যায়। তবে ভূ-ত্বকের বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতার কারনে এ অঞ্চলে ছোট ছোট পাহাড় বা টিলা দেখা যায়। এসব পাহাড়ে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল হয় যার ফলে ভূ-ধ্বসেরও সৃষ্টি হয়। ছয় ঋতু থাকলেও মূলত তিনটি ঋতুর উপস্থিতি ভালো ভাবে দেখা যায়।ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল থাকে তবে জানুয়ারি তে সবচেয়ে বেশী শীত পড়ে। গ্রীষ্মকালের স্থায়ীত্ব থাকে মার্চ-মে পর্যন্ত, এ সময় কাল-বৈশাখী ঝড়ের তান্ডব দেখা যায়। জুন- আগস্ট পর্যন্ত থাকে বর্ষাকাল। তবে বর্তমানে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে শীত,গ্রীষ্ম,বর্ষার সময়কালে হের ফের হচ্ছে। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা প্রচুর বেড়ে গেছে এবং শীতকালের স্থায়ীত্ব কমে গেছে।
চট্টগ্রামের ক্রান্তীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যায়। চট্টগ্রামের দৈনিক গড় তাপমাত্রা তাপমাত্রা ২৮-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে শীতকালে যা প্রায় ১৩-১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গড় আদ্রতা ৮০-৮৫ শতাংশ। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২৫০০-৩০০০ মিলিমিটার।
প্রশাসনিক ব্যবস্থা
চট্টগ্রামের মানুষদের উন্নত নাগরিক সুবিধা প্রধানের উদ্দেশ্য ১৮৬৩ সালের ২২ জুন গঠিত হয় “চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি।” তখন চট্টগ্রামের নগরীর মধ্যে এই মিউনিসিপ্যালিটির মধ্যে আওতাধীন ছিল মাত্র সাড়ে চার বর্গ মাইল। ১৮৮৪ সালে এর কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য একটি পরিষদ গঠন করা হয়, উক্ত পরিষদে ১৮ জন কমিশনার ছিলেন। প্রতিষ্ঠাকালে এই মিউনিসিপ্যালিটি তে মাত্র ৪ টি ওয়ার্ড ছিল। পরবর্তী তে ১৯১১ সালে এর ওয়ার্ড সংখ্যা একটি বাড়িয়ে ৫ টি করা হয়। খান বাহাদুর ছাত্তার ছিলেন মিউনিসিপ্যালিটির প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান। পরবর্তী তে মেয়র নির্বাচিত হন নূর আহমেদ। তিনি একটানা ৩০ বছর দায়িত্ব পালন করেন।
চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি কে ১৯৭৭ সালে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি থেকে নাম হয় “চট্টগ্রাম পৌরসভা”। চট্টগ্রাম পৌরসভার প্রথম মেয়র ছিলেন ফজল করিম। এই পৌরসভার কাজ ছিল বিভিন্ন প্রকারের কর ও টোল আদায় করা। ১৯৮২ সালে ৬০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে চট্টগ্রাম পৌরসভা কে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এ রূপান্তর করা হয়। ১৯৯০ সালে ৩১ জুলাই চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সরকার থেকে একজন মেয়ের নিযুক্ত করা হয়। প্রথম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। ১৯৯৪ সালে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাজনের পূর্ব পর্যন্ত মেয়র ছিলেন মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। ১৯৯৪ সালে প্রথম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী। বর্তমানে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আ জ ম নাসির উদ্দীন।
চট্টগ্রাম বাংলাদেশে একটি বিভাগীয় শহর এবং একটি সিটি কর্পোরেশন। চট্টগ্রাম মহানগর কে ১৬ টি থানায় বিভক্ত করা হয়েছে। থানাগুলো হচ্ছে-কোতোয়ালি,পাহাড়তলী,পাঁচলাইশ,চাঁন্দগাঁও,হালিশহর,বায়েজীদ বোস্তামী,বাকলিয়া,বন্দর,কর্ণফুলী,ডবলমুরিং,পতেঙ্গা,খুলশী,চকবাজার,আকবর শাহ্,ইপিজেড ও সদরঘাট। চট্টগ্রামের জনসাধারণের নিরাপত্তা বিধান করে যাচ্ছে এসব থানার পুলিশ সদস্যরা। চট্টগ্রাম মহানগরী তে সর্বমোট ওয়ার্ড রয়েছে ৪১ টি এবং প্রতিটি ওয়ার্ড অনেক গুলো মহল্লায় বিভক্ত। মহানগরী তে সর্বমোট মহল্লা রয়েছে ২৩৬ টি।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বর্তমানে চট্টগ্রামের মহানগরীর জনসাধারণের জন্য সকল ধরণের নাগরিক সুবিধা প্রদান করে যাচ্ছে। মানুষদের নিরাপত্তা ব্যস্থা হতে শুরু করে পানি, বিদ্যূৎ,সিউয়েজ, শিক্ষা,চিকিৎসা ইত্যাদি সেবা প্রদান করছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান আয়তন ১৬০.৯৯ বর্গ কিমি। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরী তে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বসবাস করছেন।
অর্থনীতি
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। চট্টগ্রামে রয়েছে দেশের প্রথম এবং সর্ব বৃহৎ সমুদ্র বন্দর। চট্টগ্রামের অর্থনীতি তে তাই শিল্প এর প্রভাব বেশী, তবে চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক জীবনে কৃষির প্রভাবও অনেক বেশী। শিল্প এবং কৃষির সমন্বিত ব্যবস্থার ফলে চট্টগ্রামের অর্থনীতি দেশের অর্থনীতি একটি বৃহৎ অংশ। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যতীত দেশের অর্থনীতি কল্পনাও করা যায় না,তাই দেশের প্রথম ইপিজেড নির্মাণ করা হয় হয় বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক পণ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে কৃষি পণ্য,লবণ,শুটকি,মৎস চাষ,তামাক এবং শিল্পজ পণ্য।
কৃষি পণ্য
ধান চট্টগ্রামের প্রধান কৃষি পণ্য হলেও বছরের অন্যান্য সময়ও কৃষকেরা শাক-সবজি উৎপাদন করে থাকে। এছাড়া কিছু কিছু স্থানে জুম কৃষির সাহায্যে পাহাড়ে কৃষি পণ্য ফলানো হয়। শীতকালে ও গ্রীষ্মে প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি হয়ে থাকে এ অঞ্চলে। শাক সবজি এবং ফলমূলের মধ্যে রয়েছে -লাউ,মিষ্টি কুমড়া,বেগুন,শিম,ঢেড়স,ঝিংগা,চিচিংগা, শশা,বরবটি,টমেটো,বীট,মূলা,গাজর,শালগম,চালকুমড়া,সাদা কুমড়া,মটরশুটি,করোলা,পটল,ফুলকপি,বাধাকপি এবং বিভিন্ন প্রজাতির শাক। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ফলমূলের মধ্যে নারকেল হচ্ছে প্রধান। তারপরও আম,কাঁঠাল,কলা সহ বিভিন্ন জাতের দেশীয় ফলফূল হয়ে থাকে।
শুটকি
চট্টগ্রামে প্রচুর পরিমাণে সামুদ্রিক মাছের চাষ করা হয় এবং সমুদ্র হতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা হয়। এসব মাছ রোদে শুকিয়ে শুটকি বানানো হয়। চট্টগ্রামের শুটকির ব্রিটিশ আমল হতে দেশ ও দেশের বাইরে সুনাম রয়েছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর পরিমাণে শুটকি উৎপাদন করা হয়। এসব শুটকি দেশের অভ্যন্তরের চাহিদা পূরণ করে, বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রামের শুটকি বার্মা তে রপ্তানি করা হতো। বর্তমানে ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি হচ্ছে এখান কার শুটকি।
তামাক
চট্টগ্রাম এর সাঙ্গু এবং মাতা মহুরির তীরে প্রচুর হারে তামাক চাষ করা হয়। এখানে কৃষক দের অগ্রীম ঋণ প্রদান করে নিজেদের প্রয়োজনীয় তামাক কৃষকদের দ্বারা উৎপাদন করে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি এ প্রকারে চট্টগ্রামের কৃষকদের হতে তামাক সংগ্রহ করে থাকে। কৃষকেরা তামাক উৎপাদনের মাধ্যমে ভালো আয় করে থাকেন।
লবণ
চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূল তীরবর্তী অঞ্চলে গুলো তে লবণ চাষ একটি লাভ জনক ব্যবসা। সমুদ্রের তীরবর্তী জমিগুলো তে প্রথমে বাঁধ দিয়ে পানি শুকিয়ে জমি হতে লবণ সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে বছরে প্রায় ৮০-৯০ লাখ টন লবণ উৎপাদন করে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে।
মৎস চাষ ও আহরণ
চট্টগ্রামের জেলেরা সমুদ্র হতে এবং আশে পাশের নদী হতে প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে থাকে। সমুদ্র হতে বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করে দেশে যেমন বিক্রি করা হচ্ছে তেমনি দেশের বাইরেও পাঠানো হচ্ছে। সামুদ্রিক মাছ ছাড়াও বিভিন্ন নদী হতে দেশীয় মাছ পাওয়া যায় অনেক। সামুদ্রিক চিংড়ি এবং কাঁকড়ি এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে।
শিল্প
চট্টগ্রামের অর্থনীতির তথা দেশের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ হচ্ছে চট্টগ্রামের শিল্প কারখানা। চট্টগ্রাম বন্দর কে ঘিরে বৃহৎ আকারের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এই সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানে একদিকে যেমন কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে তেমনি এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন হওয়া পণ্য সামগ্রী দেশের অর্থনীতি কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর কে ঘিরে বিভিন্ন ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস, হার্ডওয়্যার, চামড়া জাত শিল্প, ইস্পাত,সুতা,অটো মোবাইল,ঔষুধ শিল্প, তামাক শিল্প গড়ে উঠেছে।
এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান বছরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি -রপ্তানি হয়ে থাকে।
চট্টগ্রাম বন্দর এ প্রতিদিন প্রায় হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা সম্পন্ন হয়। চট্টগ্রামের অন্যতম ব্যবসা হচ্ছে জাহাজ শিল্প ব্যবসা। এখান থেকে জাহাজ তৈরি করে রপ্তানি করা হচ্ছে বর্তমানে।
চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রাণ স্বরূপ। এখানে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির কার্যালয় রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর নগরী ছাড়া দেশের অর্থনীতি অচল হয়ে পড়বে তাই,অর্থনীতি তে এই বন্দরের গুরুত্ব যেমন, তেমন নি চট্টগ্রাম নগরের গুরুত্বও তেমন।
পরিবহন ব্যবস্থা
চট্টগ্রামে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর অবস্থিত, তাই চট্টগ্রামের সাথে যোগাযোগ দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে রপ্তানিযোগ্য পণ্য ট্রাক,লরি, কাভার্ড ভ্যান ইত্যাদি সহযোগে বন্দরে আনতে এবং বন্দর হতে আমদানি করা মালামালগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিবহন করে নিয়ে যেতে হয়। সে জন্য চট্টগ্রামের সাথে দেশের পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত ভালো। ঢাকা হতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত চার লেন রাস্তা তৈরি করার ফলে চট্টগ্রামের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে চট্টগ্রামের সাথে বাস,ট্রেন এবং বিমান এ করে যাতায়াত করা যায়।
চট্টগ্রামে একটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর রয়েছে যেখান হতে দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাহিরে বিমান যোগে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে ভ্রমণ করা যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকো চট্টগ্রামে বাস যোগে এসি,নন এসি,সাধারণ এবং লাক্সারিয়াস বিভিন্ন বাসে করে যাতায়াত করা যায়। ঢাকা হতে চট্টগ্রামের মধ্যে বেশ কয়েক টি আন্তঃনগর ট্রেন যাতায়াত করে। সেসব ট্রেনের মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক বিরতিহীন সোনার বাংলা এক্সপ্রেস,প্রভাতী এক্সপ্রেস,তূর্ণা এক্সপ্রেস,মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস,মহানগর গৌধূলী এক্সপ্রেস।
চট্টগ্রাম মহানগরীর অভ্যন্তরে যাতায়াত করার জন্য রয়েছে বাস, অটোরিক্সা,ট্যাক্সি,রিক্সা ইত্যাদি যানবাহন রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম মহানগরীর অভ্যন্তরে যোগাযোগ ব্যবস্থা তত টা উন্নত আজও হতে পারে নাই। চট্টগ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রধান বাধা হচ্ছে যানজট এবং অপরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থা।
সাহিত্য
‘সমুদ্র বিলিয়েছে উদারতা তার
পাহাড় বিছিয়েছে স্নেহ ছায়াতল
প্রকৃতির বিশালতায় বেড়ে ওঠা মন
এখানে ভালবাসা কবিতার ভুবন ॥’
সমুদ্র আর পাহাড়ের দেশ চট্টগ্রাম নিয়ে কবির এ ভাবনা থেকে বুঝা যায় চট্টগ্রাম কে কবি সাহিত্যিক দের কতটা চর্চা রয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে সাহিত্যের সূচনা হয়েছে অনেক আগে থেকে। চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন বা পুরাতন লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয় তিনি হচ্ছে শাহ্ মুহম্মদ সগীর। তার অমর সৃষ্টি ইউসুফ -জুলেখা তে তার জ্ঞানের বা লেখনী শক্তির প্রমাণ দিয়েছেন ১৫ শতকের এই কবি। চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেই সময় কালের বিখ্যাত কবি হচ্ছে কবি মুযাম্মিল। তার রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ হচ্ছে নসিয়ৎ নামা এবং সিয়োৎনামা।
আরবের বিখ্যাত কাহিনী নিয়ে রচিত ইউসুফ জুলেখার লেখক দৌলত উজির বাহরাম খান ছিলেন এই বিখ্যাত চট্টগ্রামের বাসিন্দা। তবে এত সব নামের ভীড়ে আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র হচ্ছে সাহিত্য বিশারদ আবদুল করিম। তিনি একদিকে যেমন সাহিত্য বিশারদ, অন্যদিকে তেমনি পুঁথি সংগ্রাহকও ছিলেন। তিনি গ্রাম বাংলার অজস্ব পুঁথি সংগ্রহ করেছেন। বাংলা সাহিত্যের বিকাশ হয় মূলত ষোড়স শতকে। সে সময় বাংলা সাহিত্যের বিকাশ হয় চট্টগ্রামের শাসক গরাগল খাঁ এর সভাকবিদের মাধ্যমে। তার সভাকবির মধ্যে ছিলেন শ্রীকর নন্দী ও পরমেশ্বর।
চট্টগ্রামের মধ্য যুগের কবি সাহিত্যি মধ্যে যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে উজির বাহরাম খান, শাহ মুহাম্মদ ছগীর,কবি মুজাম্মিল,কবি পরমেশ্বর,কবি শ্রীকর নন্দী,নওয়াজিশ খান,সৈয়দ সুলতান,শেখ পরান,মুহাম্মদ খাঁ, কাজী হাসমত আলী প্রমুখ।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের আরাকান রাজসভার কবি সাহিত্যদের মধ্যে রয়েছেন-মহাকবি আলাওল,তার রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ পদ্মাবতী।অন্যান্য কবিদের মধ্যে রয়েছেন দৌলত কাজি,কোরেশী মাগন ঠাকুন এবং করমদন প্রমুখ। এই সময়ের সবচেয়ে প্রতিভাবান লেখক ছিলেন মহাকবি আলাওল। তিনি আরাকান রাজ সভার কবি ছিলেন। তিনি পদ্মাবতী নামক একটি মহাকাব্য রচনা করেন। যেটি খুব ই সমাদৃত এবং আজও পঠিত।
অষ্টাদশ শতাব্দির পরবর্তী সময়ের কবি সাহিত্যের মধ্যে রয়েছেন আশুতোষ চৌধুরী,সতীশচন্দ্র বিদ্যাভূষণ,আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ,শশাঙ্ক মোহন সেনগুপ্ত,মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী,আসগর আলী পন্ডিত,আবদুল হাকিম,ভবানী শঙ্কর দাশ,নিধিরাম আচার্য,মুক্তারাম সেন,হামিদুল্লাহ্ খান,কবি চেতুর,রঞ্জিত রাম দাস,রামতনু আচার্য প্রমুখ।
চট্টগ্রামের আধুনিক কবিদের মধ্যে রয়েছেন-আহমদ ছফা,আবুল ফজল,সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ্,মাহবুব আলম,ডক্টর আবদুল করিম,আবদুল হক চৌধুরী,ড.আমীন,সুকুমার বড়ুয়া,কাফি কামাল,আবদুল হাকিম,নবীন দাশ,সর্বানন্দ বড়ুয়া প্রমুখ।উপরের কবি সাহিত্যিকদের তালিকা হতে একদম স্পষ্ট যে প্রাচীন কাল থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সাহিত্য রচনার ভিত কত শক্ত। একটি অঞ্চল একসাথে এতসব লেখকের জন্ম হওয়া সেটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়।চট্টগ্রাম হতে অন্য কোথাও এত জ্ঞানী লেখকের জন্ম হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমি সন্দিহান। তবে এটা বলা যেতে ই চট্টগ্রাম কবি সাহিত্যেরও মাটি।
সংস্কৃতি
চট্টগ্রামের সংস্কৃতি অতি প্রাচীন এবং বিচিত্রময়।চট্টগ্রামে একদিকে যেমন বাঙালি জনগোষ্ঠীর বসবাস, তেমনি বিভিন্ন উপজাতিরাও চট্টগ্রামে বসবাস করে। উপজাতিদের বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান চট্টগ্রামের সংস্কৃতি তে এনেছে এক বৈচিত্র্য মত আবহধারা। বিভিন্ন উপজাতির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি হয়ে উঠে বর্ণিল। ঐতিহাসিক ভাবে চট্টগ্রামে বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন দেশের শাসকেরা চট্টগ্রাম কে শাসণ করেছে। তবে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি তে আজও আরাকানি কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। দীর্ঘ সময় আরাকানের রাজাদের দ্বার চট্টগ্রাম শাসিত হয়, তারা ক্ষমতা হারার পরও অন্য রাজাদের সাথো যুদ্ধ করে গেছে। ফলে চট্টগ্রাম আরাকানি বৈশিষ্ট্য নিয়ে চলছে।
এছাড়াও চট্টগ্রাম কে আফগান,মুঘল, ইংরেজরা চট্টগ্রাস কে শাসণ করেছে। এই তিনটি জাতিরও বিভিন্ন আচার-আচরণ,রীতি -নীতি বিদ্যমান। তার মধ্যে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ইংরেজরা পরবর্তীতে সবচেয়ে বেশী প্রভাব বিস্তার করেছে। তাদের সময় চট্টগ্রামে মধ্যবিত্ত একটি সমাজের তৈরি হয় এবং তারা ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করে পাশ্চাত্য জীবনধারা সম্পর্কে অবগত হন।
চট্টগ্রামে বিভিন্ন পিঠা পুলির উৎসব দেখা যায়। গান বাজনার দিক থেকে চট্টগ্রামের আলাদা একটি ভাব রয়েছে। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক গানে সমৃদ্ধ এক অঞ্চল। শেফালী ঘোষ এবং শ্যামা সুন্দর কে বলা হয় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী। মাইজ ভান্ডারী গান এ অঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আধুনিক গানে ব্যান্ড সোলস,এলআরবি,নগরবাউল,রেঁনেসা ইত্যাদি ব্যান্ডের জন্ম হয়েছে চট্টগ্রামের মাটিতে, চট্টগ্রামের কৃতি সন্তানদের হাত ধরে।
দেশের প্রধান সারির অত্যন্ত জনপ্রিয় শিল্পীগন যেমস -জেমস,আইয়ুব, বাচ্চু,কুমার বিশ্বজিৎ,পার্থ বড়ুয়া,রবি চৌধুরী, নকীব খান,মিলা ইসলাম প্রমুখও।
চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা পূর্ণিমা,শ্রাবন্তী,মৌটুসী বিশ্বাস এর জন্ম বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামে সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য অনেক গুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে -দৃষ্টি চট্টগ্রাম,আলাউদ্দিন ললিতকলা একাডেমী,উদিচি,রক্তকবরী,ফুলকি, সঙ্গীত পরিষদ ইত্যাদি। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রধান প্রতিষ্ঠান হচ্ছে জেলা শিল্পকলা একাডেমী।
খাদ্য
মেজবান -এই খাবার টি কোন অঞ্চলের সেটা আর বিশেষ করে বলে দিতে হয়। চট্টগ্রামের মানুষেরা কতটা ভোজন রসিক সেটা তাদের খাবারের তালিকা দেখলেই বুঝতে পারা যায়। তারা যেমন খেতে খুব ই ভালোবাসেন,তেমনি তারা অন্যদের খাওয়াতেও ভালোবাসেন। চট্টগ্রামের মানুষের সকালের নাস্তায় থাকে তন্দুল রুটি,চা,ডাল/ভাজি। তবে চট্টগ্রামের মানুষের সবচেয়ে পছন্দের খাবার হচ্ছে “মেজবান”,যা গরু/মহিষের মাংস এবং নেহারি বা নলা সহযোগে তৈরি এক সুস্বাদু খাবার। চট্টগ্রামের মানুষের আরেক টি প্রিয় খাবার হচ্ছে শুটকি,লাল মরিচ বা কাচা মরিচ দিয়ে ঝাল করে শুটকি মাছের ভর্তা খেতে তারা অত্যন্ত পছন্দ করেন। এছাড়া চট্টগ্রামের মানুষের পছন্দের খাবারের মধ্যে রয়েছে গরুর মাংসের কালাভুনা,ডাল মাংস,বাকরখানি,বেলা বিস্কুট,পেলন ডাল,লক্ষীশাক,আফলাতুন হালুয়া এবং ইলিশ মাছ।
শিক্ষা ব্যবস্থা
চট্টগ্রামে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ শাসণ শুরু হবার পর। ব্রিটিশরা উপমহাদেশে তাদের শিক্ষা সংস্কৃতি কে ছড়িয়ে দিতে এবং এ অঞ্চলের মানুষ কে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। ইংরেজদের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করার পূর্বে এ অঞ্চলের মানুষেরা শুধুমাত্র ধর্মীয় জ্ঞান চর্চা করত। ধর্মীয় জ্ঞানের বাইরে তাদের আর কোন জ্ঞান ছিল না,সেই রকম জ্ঞান দেওয়ার ব্যবস্থাও ছিল না। সেই সময় মুসলমানেরা মসজিদ, মাদ্রাসা ও মক্তবে গিয়ে কুরআন শিক্ষা করত এবং আরবী ভাষা শিখত। সেই সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার ভাষা ছিল ফার্সি। তাই বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ফার্সি ভাষাও শেখানো হতো। হিন্দুরা বিভিন্ন টোল এ গিয়ে সংস্কৃত ভাষা শিখত। রাষ্ট্র পরিচালনার ভাষা হিসেবে হিন্দুদের কে যেমন ফার্সি ভাষা শিখতে হতো, তেমনি রাষ্ট্র কে পরিচালনা করার জন্য মানুষের সাথে মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য সংস্কৃত শিখতে হতো। তাই সেই সময়ে এ অঞ্চলে ছিল ভাষাগত একটি ভারসাম্য। মুসলমান,হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তে যেসব বই পড়ানো হত সে সব হাতে লেখা। সে সময় মানুষ কলার পাতার উপরে দোয়াত বা বাতির কালি দিয়ে লিখত।
প্রথম দিকে ভারত বর্ষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শিক্ষার প্রতি তেমন একটা গুরুত্ব আরোপ করে নি, তারা প্রথম দিকে উল্লেখ যোগ্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলে নি। ১৭৬০ সালে তাদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবার পরে সপ্তদশ শতকের মধ্যে তারা একমাত্র কোলকাতা মাদ্রাসা ছাড়া আর তেমন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন নাই। আঠার শতকের প্রথম দিকে ভারত বর্ষের জন্য একটি শিক্ষানীতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাশ করা হয়। এ শিক্ষানীতির ফলে দেশ জুড়ে বেশ কিছু মিশনারি স্কুল গড়ে উঠলেও সে মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে নি তখনও।
চট্টগ্রামে ১৮৩৬ সালে প্রথম চট্টগ্রাম জেলা স্কুল নামে একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় আর ১৯৪১ সালে সেন্ট প্লাসিডস হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগে।
লর্ড হার্ডিঞ্জ যখন ১৮৪৪ সালে ঘোষণা করলেন যে রাজকার্যে নিয়োগ পেতে হলে অবশ্যই ইংরেজি শিখতে হবে তখন রাতারাতি বেশ কিছু স্কুল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। লর্ড হার্ডঞ্জ এর ঘোষণা ফলে একদিকে যেমন চট্টগ্রাম সহ অন্যান্য অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি পায়,তেমনি বাংলায় ফার্সির বদলে ইংরেজির গুরুত্ব বেড়ে যায়। এই ঘোষণার ফলে ইংরেজরা এ অঞ্চলে তাদের ভাষা কে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিল।
চট্টগ্রামের মাধ্যমিক স্কুল সমূহঃ
চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল , মুসলিম হাই স্কুল, ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারী ঊচ্চ বিদ্যালয়, ডাঃ খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয়, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট প্লাসিডস, সেন্ট স্কলাসটিকা, নাসিরাবাদ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারী বালিকা ঊচ্চ বিদ্যালয়, চট্রগ্রাম সেনানিবাস উচ্চ বিদ্যালয়, হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয়, চ.বি. স্কুল এন্ড কলেজ, অপর্ণাচরন সিটি করপোরেশন স্কুল, আগ্রাবাদ সরকারী কলোনী উচ্চ বিদ্যালয় (বালক ও বালিকা শাখা), ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, মহসিন স্কুল, হাতে খড়ি উচ্চবিদ্যালয়,কলকাকলি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় আগ্রাবাদগোসাইলডাঙ্গা কে.বি.দোভাষ সিটির্কোপরাশন বালিকা বিদ্যালয়,বারিক মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় গোসাইলডাঙ্গা,জে.আর.কে উচ্চ বিদ্যালয় আগ্রাবাদ বালিকা বিদ্যালয়, সেন্ট প্লাসিডস হাই স্কুল,সেন্ট স্কলাস্টিকা স্কুল ইত্যাদি।
চট্টগ্রামের কলেজ সমূহঃ
চট্টগ্রাম কলেজ,সরকারি হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজ,সরকারি কমার্স কলেজ,চট্টগ্রাম সিটি কলেজ,
সরকারি মহিলা কলেজ,আগ্রাবাদ কলেজ,হাট হাজারি কলেজ,চট্টগ্রাম ল্যাবরেটরি কলেজ,চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ,বিএস পাবলিক কলেজ,সাউথ এশিয়ান স্কুল এ্যান্ড কলেজ,ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ,আশকানে আউলিয়া কলেজ,আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ,চট্টগ্রাম এম.ই.এস কলেজ,ইসলামীয়া ডিগ্রী কলেজ,বিএএফ শাহীন স্কুল এ্যান্ড কলেজ,ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ ইত্যাদি।
চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহঃ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম ভেটেনারি এবং এ্যানিমাল সায়েন্স ইউনিভার্সিটি
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি
সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি
মেডিকেল কলেজ সমূহঃ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
ইউএসটিসি মেডিকেল কলেজ
বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল
মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ
চট্টগ্রাম ডেন্টাল কলেজ
সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুল সমূহঃ
মাস্টার মাইন্ড স্কুল
চাইল্ড হেভেন স্কুল
প্রেসিডেন্সী ইন্টারন্যাশনাল স্কুল
সানশাইন গ্রামার স্কুল
বেল ভিউ
সামা ফিল্ডস স্কুল
লিটল জুয়েলস স্কুল
সাউথ পয়েন্ট স্কুল
রেডিয়্যান্ট স্কুল
উইলিয়াম কেরি স্কুল
খেলাধুলা
বর্তমানে বাংলাদেশের সকল স্থানের মত চট্টগ্রামেও মানুষের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ক্রিকেট। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা সর্বাধিক। এরপর জনপ্রিয় খেলার মধ্যে রয়েছে ফুটবল,ব্যাটমিন্টন,হকি,সাতার,হা-ডু-ডু,টেবিল টেনিস,দাবা,লুডু,এ্যাথলেটিক্স। তবে চট্টগ্রামে বেশ কিছু পুরনো খেলাধুলার নাম শোনা যায়,তার মধ্যে যে খেলাটি এখনও হয় সেটি হচ্ছে বলীখেলা। প্রতি বছর চট্টগ্রামে বিশাল বড় আয়োজনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় জব্বারের বলীখেলা। এ খেলা উপলক্ষ্যে আরো বেশ কয়েক টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়, যেমন -নৌকা বাইচ। এছাড়া চট্টগ্রামে যে সকল প্রাচীন খেলার নাম শোনা যায় তার মধ্যে রয়েছে ঘাডুঘাডু,তুরুক্কু,ডাংগুলি,টুনি ভাইয়ের টুনি,নাউট্টা চড়াই ইত্যাদি। তবে চট্টগ্রামে বর্তমানে এসব খেলাগুলোর মধ্যে ডাংগুলি,নৌকাবাইচ খেলা হয়, অন্যান্য খেলাগুলোর তেমন একটা প্রচলন নাই।
ক্রীড়া জগৎে চট্টগ্রামের বেশ কিছু উজ্জ্বল নক্ষত্র এর আগমণ হয়েছে। তার মধ্যে বিশেষ ভাবে যার কথা বলতে হয় তিনি হচ্ছেন আকরাম খান। তিনি ছিলেন দেশের হয়ে প্রথম আইসিসি ট্রফি জয়ী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক আকরাম খান। পরর্বতীতে আকরাম খানের হাত ধরে ক্রিকেট জগৎে সাফল্যের পরিচয় দেন দুই সহোদর নাফিস ইকবাল ও তামিম ইকবাল। এছাড়াও চট্টগ্রামের আরেক তারকা ক্রিকেটার হচ্ছেন পেসার তাসকিন আহমেদ।
এছাড়া চট্টগ্রাম হতে আরেক নক্ষত্র হচ্ছেন মোশারফ হোসেন শামীম,তিনি একটানা সাত বার জাতীয় পর্যায়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে প্রথম হন। পরবর্তী তে তিনি দেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৭৬ সালের অলিম্পিকে অংশগ্রহন করেন।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন খেলাধুলায় চট্টগ্রামের যুবক-যুবতীরা সাফল্য পাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
চট্টগ্রামে দুইটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম রয়েছে,তার মধ্যে একটি হচ্ছে এম এ আজিজ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম এবং জহুর আহমেদ চৌধুরী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। চট্টগ্রামের খেলাধুলার প্রধান অভিভাবক সংগঠন হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া পরিষদ।
দর্শনীয় স্থান এবং পর্যটন ব্যবস্থা
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের পর্যটনের একটি বড় ক্ষেত্র। চট্টগ্রামে প্রতি বছর দেশ এবং দেশের বাইরের প্রচুর পর্যটক বেড়াতে আসেন। চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্প দেশের অর্থনীতি তে বড় একটি অবদান রেখে চলেছে। চট্টগ্রামের পর্যটন স্থান গুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত ভাবে নিচে তুলে ধরা হলো-
১. পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৪ কিমি দক্ষিণে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত অবস্থিত। এই সমুদ্র সৈকত টি কক্সবাজারের মত বৃহৎ আকারের না হলেও, এখান থেকে আপনি নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় উপভোগ করতে পারবেন। সমুদ্র পারে ঘোড়ায় চড়ে ঘুড়তে পারবেন। এছাড়া পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের পাশে ই রয়েছে একটি মার্কেট, যেখানে বিভিন্ন ধরনের বার্মিজ খাবার,আচার,ঝিনুকের গহনা ইত্যাদি পাবেন। এছাড়া এখান থেকে আপনি বিভিন্ন ধরনের শুটকি কিনতে পারবেন।
ঢাকা থেকে বাস,ট্রেন, বিমান সব মাধ্যমেই পতেঙ্গা যেতে পারবেন।
প্রথম আপনি সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বাসে করে বা কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে করে আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রাম যেতে হবে। এরপর আপনি বাস,সিএনজি বা ট্যাক্সির মাধ্যমে পতেঙ্গা যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে বাস ভেদে বিভিন্ন ভাড়া পড়বে।
থাকার জন্য এর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের পাশে ই রয়েছে বাটারফ্লাই পার্ক রেস্ট হাউস।
এখানে থাকার জন্য প্রতি রাতের জন্য খরচ পড়বে তিন থেকে ৭ হাজার।
এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের বেশ কিছু উন্নত মানের হোটেল রয়েছে,যেখানে কম খরচে স্বাচ্ছন্দ্য মত থাকতে পারবেন।
ফয়েজ লেক
চট্টগ্রামের আরেক সুন্দর জায়গা হচ্ছে ফয়েজ লেক। এটি চট্টগ্রামের পাহারতলী রেল স্টেশনের নিকটে অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে ফয়েস লেকের দূরত্ব মাত্র ৮ কিমি। এটি মূলত একটি কৃত্রিম হৃদ। ফয়েজ লেকের পাশে ই অবস্থিত চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে উচু পাহার বাটালি হিল। হ্রদের শান্ত, সুন্দর পরিবেশ ভ্রমণপিপাসু মানুষদের আকর্ষণ করে।
ফয়েজ লেকে দেখার মত অনেক কিছু রয়েছে, এখানে যেমন ছোটরা বিনোদন পেতে পারেন তেমনি বড়দের ও মজা করার জন্য রয়েছে দারুণ পরিবেশ। ফয়েজ লেকে নৌকা ভ্রমণ সবচেয়ে মজার একটি রাইড। নৌকায় করে ভ্রমণের সময় দুই পাশে দেখতে পারবেন পাহাড়,গাছপালা,পাখি মিলে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
এখানে মোট ৬ টি হ্রদ রয়েছে। হ্রদ ৬ টি হচ্ছে গৌধূলী, আকাশমনী,অলকাকান্দা,দক্ষিণী,অরুনাময়ী এবং মন্দাকিনী। বর্তমানে ফয়েজ লেকে একটি বিনোদর পার্ক খোলা হয়েছে যেখানে রোলার কোস্টার সহ বিভিন্ন ধরনের মজার সকল রাইড রয়েছে। পার্কটি সকাল ১০:৩০ মিনিট হতে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত সপ্তাহের ৭ দিন ই খোলা থাকে।
ফয়েজ লেক যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড় থেকে সিএনজি বা রিক্সা করে খুব সহজেই যেতে পারবেন।
চট্টগ্রামের বাইরে থেকে যারা ফয়েজ লেক ঘুরতে আসবেন তাদের থাকার জন্য জন্য ফয়েজ লেক এর ভিতরে পার্কের নিজস্ব ব্যবস্থায় থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া লেকের ধারে বিভিন্ন ধরনের কটেজ ও রিসোর্ট রয়েছে। চট্টগ্রামের শহরের হোটেল গুলো থাকছেই।
বাঁশখালি ইকোপার্ক
চট্টগ্রামের বাঁশখালি উপজেলায় নৈসর্গিক সৌন্দর্য মন্ডিত একটি চট্টগ্রাম বন বিভাগের একটি ইর্কো পার্ক রয়েছে। পার্ক টি তে পাহাড়,সমুদ্র,লেকের পানি, সবুজ গাছপালা ইত্যাদি মিলিয়ে এক অপরূপ পরিবেশ। চট্টগ্রাম শহর থেকে ৫০ কিমি দূরে ইকোপার্ক টি তে সময় নিয়ে গেলে কয়েক শত প্রজাতির উদ্ভিদ দেখতে পারবেন।
পারকি সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রাম হতে এক হতে দেড় ঘন্টার দূরত্বে আনোয়ারা তে রয়েছে পারকি সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজার এবং পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের পর এটি জনপ্রিয় আরেক টি সৈকতে পরিণত হচ্ছে দিন। এখানে গিয়ে আপনি দেখতে পারবেন সারি সারি ঝাউবন আর লাল কাঁকড়া,সমুদ্র সৈকতে স্পীড বোট, ঘোড়া ইত্যাদি করে ঘুরতে পারবেন। পারকি সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার জন্য পতেঙ্গা ১৫ নং যেটি হতে স্পীড বোটে করে কর্নফুলি নদী পার হয়ে ঐ পার থেকে অটোরিক্সায় করে পারকি সমুদ্র সৈকতে যেতে হবে।
মহামায়া লেক
চট্টগ্রামের অপরূপ সুন্দর আরেক স্থান হচ্ছে মিরসরাইয়ের মহামায়া লেক। এই লেক টি কতটা সুন্দর সেটা আপনি না গেলে বুঝতে পারবেন না। হ্রদের পানি,পাহাড়ি ঝর্ণার শীতল পানি,পাহাড়ি গুহা,রাবার ড্যাম ইত্যাদি মিলিয়ে অপরূপ এক স্থান।
মিরসরাইয়ের মহামায়া লেকে চট্টগ্রাম থেকে যেতে হলে আপনি নগরীর মাদার এলাকা থেকে সরাসরি বাসে যেতে পারবেন অথবা অলঙ্কার সিটি গেইট থেকেও লোকাল বাসে করে যেতে পারবেন।
থাকার জন্য মহামায়া লেকের পাশে কোন হোটেল নাই। তবে চট্রগ্রামের হোটেল গুলো তে আপনি থাকতে পারবেন।
মহুরী প্রজেক্ট
মহুরী প্রজেক্ট টি মূলত একটি সেচ প্রকল্প। এই সেচ প্রকল্প টি তে সেচ কাজ ছাড়াও বিশাল এলাকা জুড়ে মৎস চাষ করা হয়। ফলে এটি একটি পর্যটন কেন্দ্রেও পরিণত হয়েছে। মহুরী প্রজেক্ট টি মূলত ফেনীর সোনাগাজী তে তবে, এর কিছু অংশ চট্টগ্রামের মিরসরাইতেও পড়েছে।
খৈয়াছড়া ঝরনা
চট্টগ্রামের মিরসরাই তে অবস্থিত খৈয়াছড়া ঝরনা দেশের বড় কয়েক টি ঝরনার মধ্যে একটি। এই ঝরনা টি তে সব সময় পানি থাকে। ফলে ভ্রমণপিপাসু মানুষদের জন্য এই ঝর্না টি একটি অসাধারণ জায়গা। এই ঝর্না টি দেখতে হলে পাহাড়ি ও জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে ফলে যারা অ্যাডভেঞ্চার করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এই জায়গা টি অসাধারণ একটি স্থান।
ঢাকা চট্টগ্রাম রোডে নেমে গ্রামের রাস্তার মধ্যে দিয়ে হেটে ঝিরি পর্যন্ত যেতে হবে। সেখান থেকো খৈয়াছড়া ঝর্ণার একমাত্র রাস্তা টি শুরু। পাহাড়ি রাস্তা ধরে দুই ঘন্টার হাটার পর এই ঝর্ণা টি দেখতে পাবেন। তাই সঙ্গে করে খাবার ও পানি নিয়ে যাবেন। এখানে থাকার তেমন কোন ব্যবস্থা নাই। তাই হাতে সময় নিয়ে বের হতে হবে।
চন্দ্রনাথ পাহাড়
সীতাকুন্ডের এই পাহাড় টি একসাথে যেমন একটি বড় তীর্থস্থান, তেমন একটি অপরূপ সৌন্দর্যের স্থান। এই পাহাড় টির চারপাশে নয়নাভিরাম কিছু স্থান রয়েছে। এই পাহাড় টির একদম চূড়ায় রয়েছে চন্দ্রনাথ মন্দির। এই পাহাড়টির চারপাশে চোখ জুড়ানো সবুজ। সীতাকুন্ড বাজার থেকে ৪ কিমি দূরে রয়েছে এই পাহাড় টি।
বাটালি হিল
চট্টগ্রামের সবচেয়ে উচু পাহাড় টি হচ্ছে বাটালি হিল। বাটালি হিল টি ফয়েস লেকের পাশে ই অবস্থিত। শহর থেকে মাত্র ১ কিমি দূরেই ২৮০ ফুট উচু পাহাড় টি অবস্থিত।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা
চট্টগ্রাম চিড়িয়া খানা টি শহরের খুলশী তে অবস্থিত। এটি ফয়েস লেক এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ৬ একর জমির উপর তৈরি করা হয়েছে। এখানে প্রায় ৬৭ টি প্রজাতির ৩২০ টি প্রাণী রয়েছে। ছুটির দিনগুলো তে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর মত অসাধারণ একটি স্থান।
ওয়ার সিমেট্টি
এটি মূলত একটি গণকবর, যা ওয়ার সিমেট্টি নামে পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এই ওয়ার সিমেট্টি টি তৈরি করেন, যেখানে ৪০০ এর অধিক কবর ছিল তবে বর্তমানে এখানে ৭০০ এর করব রয়েছে। এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত দেশী ও বিদেশী সৈন্যদের কবর রয়েছে।সকাল ৯ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত এবং ৩ টা থেকে ৫ পর্যন্ত এই ওয়ার সিমেট্টি টি খোলা থাকে।
জাতিতত্ত্ব যাদুঘর
এটি চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদে অবস্থিত একটি অন্য প্রতিষ্ঠান, যেখানে বিভিন্ন দেশের ২৫ টি জনগোষ্ঠী বা জাতির বিভিন্ন বিষয় বস্তু নিয়ে তথ্য সমূহ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।
অন্যান্য দর্শনীয় স্থান সমূহ
ঐতিহাসিক স্থান সমূহ: লালদীঘী ময়দান,বদর আউলিয়া দরগাহ,বায়েজীদ বোস্তামীর মাজার,প্রীতিলতার স্মৃতি স্মারক, শহীদ মিনারর ইত্যাদি।
বিনোদন স্পট : মুসলিম হল,স্বাধীনতা পার্ক,ডিসি হিল,কর্ণফুলী শিশুপার্ক,কাজীর দেউরি জাদুঘর,বোটানিক্যাল গার্ডেন,বাংলাদেশ নেভাল একাডেমী, ভাটিয়ারি গলফ ক্লাব ইত্যাদি।
বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ
১. ডা: জামাল নজরুল ইসলাম
চট্টগ্রামের এই কৃতি সন্তান একাধারে ছিলেন পদার্থ বিজ্ঞানী,গণিতবিদ,অর্থনীতিবিদ,জ্যোর্তিবিদ,বিশ্বতত্ত্ববিদ।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথমেটিক্যাল এ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্স এর গবেষক ছিলেন। তিনি মহাবিশ্বের উদ্ভব নিয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য তার বিশেষ খ্যাতি ছিল।
২. প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ। উপমহাদের ইতিহাস বিখ্যাত এই মহিয়সী নারীর জন্ম চট্টগ্রামে।
৩.বিনোদবিহারী চৌধুরী
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন বিপ্লবী।
৪. ড. অনুপম সেন : বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী
৫. ড. মুহাম্মদ ইউনুস : শান্তি তে নোবেল বিজয়ী এবং বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা প্রবর্তক এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা।
৬. সূর্য সেন : ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা,যিনি মাস্টারদা নামে বেশী পরিচিত।
৭. একে খান : রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের লেখক।
৮. খান বাহাদুর বদি আহমদ চৌধুরী : ব্রিটিশ আমলের পার্লামেন্টেরিয়ান।
৯. সৈয়দ আহমাদুল্লাহ্ মাইজ ভান্ডারী : সুফি সাধক এবং মাইজভান্ডারী তরীকার প্রবর্তক।
১০. মুহাম্মদ ইব্রাহিম : পদার্থবিজ্ঞানী
১১. এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর প্রথম নির্বাচিত মেয়র এবং রাজনীতিবিদ।
১২. আ জ ম নাসির উদ্দীন : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর বর্তমান মেয়র
১৩. আবদুল করিম : বীর বিক্রম খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।
১৪. এম হারুন-অর -রশিদ : বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।
১৫. আহমদ ছফা : কথা সাহিত্যিক
১৬. সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ্ : সাহিত্যিক
১৭. আবুল ফজল : সাহিত্যিক
১৮. মাহবুব উল আলম চৌধুরী : কবি
১৯. মাহাবুব আলম : সাহিত্যিক
২০. শেফালি ঘোষ : চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী
২১. শ্যাম সুন্দর : চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাট বলা হয় তাকে।
২২. কুমার বিশ্বজিৎ : গায়ক
২৩. আইয়ুব বাচ্চু : গায়ক
২৪. পার্থ বড়ুয়া : গায়ক
২৫. তামিম ইকবাল : জাতীয় ক্রিকেটার
লিখেছেন : জাহিদ হাসান মিঠু