আজ ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৮৮ সাল থেকে পহেলা ডিসেম্বর পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। দিনটিতে দেশের সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তরসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘এইডস নির্মূল প্রয়োজন, জনগণের অংশগ্রহণ’। সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে দিবসটি।
চট্টগ্রামে গত দুই বছরের ব্যবধানে এইচআইভি ভাইরাস (এইডস) রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় আড়াইগুণ। যাদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই হচ্ছে প্রবাসী। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের বেশিরভাগ হচ্ছে পুরুষ। আর নারীদের মধ্যে যারা আক্রান্ত তাদের বেশিভাগই স্বামীর দ্বারা আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে এ রোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুরাও। যারা জন্ম সূত্রেই আক্রান্ত হয়েছে এই রোগে।
তথ্য অনুসারে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে অবস্থিত এন্টি রিক্ট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টারে (এআরটি) চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২১ জন। এরমধ্যে শুধুমাত্র চলতি বছরেই আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৭১ জন। কিন্তু ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৫ জনে। এর আগের বছর ২০১৭ সালে তা ছিল মাত্র ৩০ জনে। এআরটি’র তথ্য বলছে, চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ রোগী রয়েছে ২১৯ জন আর মহিলা ১৬০ জন। এছাড়া ছেলে শিশু ২৬ জন ও মেয়ে শিশু রয়েছে ১৪ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গ রয়েছে ২ জন। চলতি বছরে আক্রান্ত ৭১ জনের মধ্যে পুরুষ রয়েছে ৪৪ জন, মহিলা ১৮ জন এবং শিশুর সংখ্যা ৯ জন।
চিকিৎসকরা বলছেন, চট্টগ্রামের এইচআইভি আক্রান্ত প্রবাসীদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ফেরত। যাদের মধ্যে ওমান, দুবাই, আরব আমিরাত প্রবাসীর সংখ্যাই বেশি। প্রবাসীদের অসচেতনতায় তাদের স্ত্রীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন এইচআইভি এই ভাইরাসে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এন্টি রিক্ট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টারের আউটডোর মেডিকেল অফিসার সঞ্জয় প্রসাদ দাশ বলেন, ‘চট্টগ্রামের চিকিৎসাধীন রোগীর মধ্যে বড় অংশই হচ্ছে প্রবাসী। যারা প্রবাসে অবস্থানেই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফেরত আসছেন। রোগের বিষয়টি গোপন করে স্ত্রীর সাথে শারীরিক মিলনে তারাও এই রোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এমনকি তাদের সন্তানরাও আক্রান্ত হচ্ছে এই রোগে।
তথ্য অনুসারে, এইচআইভি সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কম ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত সাধারণ জনগণের মধ্যে সংক্রমনের হার শূন্য দশমিক শূন্য এক ভাগের নিচে। তবে ঝুঁকিপূর্ণের মধ্যে শিরায় মাদক গ্রহণকারী, যৌনকর্মী, সমকামী ও হিজড়াদের মধ্যে এ সংক্রমণের হার তিন দশমিক ৯ শতাংশ।
‘ বিশ্ব এইডস দিবস’ উপলক্ষে স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। আজ রবিবার সকাল সাড়ে নয়টায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সামনে থেকে একটি র্যালি বের করা হবে। এতে সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী ও এনজিওকর্মীরা অংশ নিবেন। পরে সিভিল সার্জন অফিসে আলোচনাস সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালেও পালন করা হবে দিবসটি।