চট্টগ্রামে মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে এ যাবৎ সর্বোচ্চ ১৬ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে করোনার আক্রান্তের সংখ্যা শতক ছাড়ালো।
করোনা যতটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে, একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লকডাউন ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসার প্রবণতা। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপের ইঙ্গিত দিয়েছে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ।
গত ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরুর পর গত ৪০ দিনে চট্টগ্রামে মোট ১০৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় শনাক্ত আরও ৫ জন চট্টগ্রামে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে এখন চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা ১১০ জন।
সোমবার (৪ মে) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ২৪৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বিআইটিআইডি ল্যাবে নতুন ২৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন ২২ ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৬ জন চট্টগ্রামের। এদের মধ্যে ১২ জন চট্টগ্রাম নগরের ও ৪ জন উপজেলার বাসিন্দা’।
তিনি বলেন, ‘মানুষ যদি নিজের ভালো না বোঝে, তাহলে স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু করার থাকে না। ভাইরাসটা দ্রুতই ছড়িয়ে যাচ্ছে সর্বত্র। মানুষকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ঘরে থাকার অভ্যাস করতে হবে। নয়তো এ বিপর্যয় ঠেকিয়ে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়’।
এদিকে বিআইটিআইডি সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে একজন আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক (৩০)। তিনি সীতাকুণ্ডের কুমিরা জোড়ামতল এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। একজন ৪৮ বছর বয়সী ব্যক্তি বর্তমানে বিআইটিআইডিতেই আইসোলেশনে আছেন, একজন নগরের পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা, তার বয়স ৩৭। দক্ষিণ হালিশহরে দুই নারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের একজনের বয়স ৩৪ ও অপরজন ৭৪ বছর বয়সী।
এছাড়া নগরের এনায়েত বাজার এলাকায় দুই জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। এদের একজন ইতোমধ্যেই মারা গেছেন (৪৭)। এছাড়া অপর এক যুবক (২৪) ও করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া আকবারশাহ থানা এলাকার পুরুষ (৫১), উত্তর কাট্টলী পুরুষ (৪০), পাহাড়তলী মৌসূমী আবাসিক (৪১) ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুবক (২৫) বিজিবি সদস্যের ছেলে বলে জানা গেছে।
এদিকে দামপাড়া পুলিশ লাইনে দুই পুলিশ সদস্যও করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তাদের একজনের বয়স ৩৫, অপরজন ২৫ বছর বয়সী তরুণ। এদের একজন পুলিশের বিশেষ শাখা এএসআই। তিনি বর্তমানে বাসায় আছেন। অন্যজন কনস্টেবল পদবীর। তিনি চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এছাড়া বাঁশখালী উপজেলায় নতুন করে ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, পটিয়ায় সমবয়সী এক ব্যক্তি ও লোহাগাড়ায় ২৫ বছর বয়সী এক যুবক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনায় এক শিশু, চার পুরুষ ও দুই নারীসহ মোট আট করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া আইসোলেশনে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ছয়জন। মৃত্যুর পর তাদের পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ পাওয়া যায়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন মোট ২৪ জন। বর্তমানে ৫৮ জন আইসোলেশনে ভর্তি আছেন। হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৮৭ জন।