সেলিম চৌধুরী
চট্টগ্রামের জামালখানে চাঞ্চল্যকর ৭ বছরের শিশু বর্ষা হত্যার রহস্য উন্মোচন ও হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। ৭ বছরের অবুঝ শিশু বর্ষা চিপস কেনার জন্য গলির মুখের দোকানে গেলে লোলুপ দৃষ্টি পরে পাশের বাসার লক্ষ্মণ দাশের, চকলেট চিপস ও টাকা দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যায় পাশ্ববর্তী গোডাউনে আদর করার ছলে খোলা হয় জামা কাপড়, শিশু বর্ষা বাধা দিতে চাইলে মুখ চেপে ধরে জোর পূর্বক করা হয় পাশবিক নির্যাতন এতে অবুঝ শিশুর যৌনাঙ্গ ফেটে শুরু হয় রক্তপাত, রক্তপাত ও শিশুর চিৎকারে ভয় পেয়ে দিশেহারা ধর্ষক নাক মুখ চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে ৭ বছরের শিশু মারজানা হক বর্ষা কে। এর পর ঠান্ডা মাথায় টিসিবি পণ্যের বস্তায় ভরে লাশ ফেলে দেওয়া হয় পাশ্ববর্তী নালায়, এরপর স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে থাকে নরপশু লক্ষ্মণ দাশ।
নিহত শিশু বর্ষার বড় সালেহা আক্তার রুবী জানায় গত সোমবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে ছোট বোন বর্ষা চিপস কেনার জন্য গলির মুখে দোকানে গিয়ে আধা ঘণ্টা সময় ধরে ফেরত না আসায় খোজাখুজি করে না পেয়ে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। এর পর থেকে থেকে থানা পুলিশ ও পরিবারের লোকজন দিনরাত খোঁজ খবর নিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু কোন খবর পাচ্ছিলাম না, আমাদের সাথে খুনি ধর্ষক লক্ষ্মণও বর্ষার খোঁজ খবর নিয়ে যাচ্ছিল এবং আমাদের গতিবিধি খেয়াল রাখত , কিন্তু সেই যে আমার বোনকে নির্যাতন করে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবে কে জানত !
গতকাল (২৭ অক্টোবর) চট্টগ্রামের জামাল খান লিচু বাগান এলাকার সিকদার হোটেলের পিছনে নালায় একটি বস্তা ভেসে উঠলে এলাকার বেলাল হোসেন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ ফোন দিলে কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি দল ঘটনা স্থলে পৌঁছে বস্তাবন্দি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে।
কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির জানায় গত ২৫ অক্টোবর ভিকটিম মারজানা হক বর্ষা (৭) বড় বোন নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়েরী করিলে কোতোয়ালী এসআই/সুজন দাশ তদন্তভার গ্রহণ করে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ সহ তদন্তকার্য অব্যাহত রাখে ২৭/২০২২ তারিখ বিকালে ০৪ সময় জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে জনৈক বেলাল হোসেন নামক ব্যক্তি কোতোয়ালী থানাধীন জামালখান লিচু বাগান সিকদার হোটেলের পিছনে ড্রেনের উপর বস্তাবন্দি ভিকটিমের লাশ দেখতে পেয়ে থানায় সংবাদ দেয়। পুলিশ সংবাদ পেয়ে কোতোয়ালী থানার টিম ঘটনাস্থল গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল সম্পন্ন করে লাশ চমেক হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করা হয়। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে থানায় এজাহার দায়ের করে কোতোয়ালী থানার মামলা নং-৪৯, মামলাটি রুজু হওয়ার পর উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মহোদয়ের সার্বিক নির্দেশনায় এডিসি (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা, পিপিএম, এসি (কোতোয়ালী জোন) মুজাহিদুল ইসলাম, অফিসার ইনচার্জ, জাহিদুল কবির দের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুর রহমান, এসআই/মোঃ মোমিনুল হাসান, এসআই/এইচ এম এরশাদ উল্লাহ, এসআই/বাবলু কুমার পাল, এসআই/মোঃ নওশের কোরেশী, এসআই/মোঃ মেহেদী হাসান, এসআই/সুজন দাশ, এসআই/সুকান্ত চৌধুরী, এসআই/মৃণাল কান্তি মজুমদার, এএসআই/রণেশ বড়ুয়া, এএসআই/সাইফুল আলম, কং/২৫৬১ রুবেল মজুমদার সহ কোতোয়ালী থানার অফিসারদের নিয়ে একাধিক চৌকস টিম গঠন করা হয়। ভিকটিমের মৃতদেহ ড্রেনে পাওয়ার পর যখন বস্তা কেটে মৃতদেহটি বের করা হয় তখন আমাদের নজরে আসে বস্তাতে টিসিবি’র সীল আছে। সেই টিসিবি’র সীলকে টার্গেট করে এমন টিসিবি’র সীলযুক্ত বস্তায় মালামাল বিক্রয়ের দোকান ও আশেপাশের বিভিন্ন রেস্তোরার গোডাউনে টিসিবি’র সীলযুক্ত বস্তা খুঁজতে থাকি। একপর্যায়ে শ্যামল ষ্টোর দোকানের গোডাউন চেক করার সময় একটি ইনটেক খালি টিসিবি’র সীলযুক্ত বস্তা খুজেঁ পাওয়া যায়। টিসিবির সীলযুক্ত বস্তাকে টার্গেট করে উক্ত দোকানে মালিক ও কোন কোন কর্মচারী কাজ করে তাদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করি এবং ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করি। টিসিবির সীলযুক্ত বস্তা ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় আসামী লক্ষণ দাশ কে শনাক্ত পূর্বক জামালখান এলাকার শ্যামল ষ্টোর নামক দোকানের গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী লক্ষণ দাশ’কে তারিখ রাত ০১.৩০ ঘটিকায় গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার পূর্বক তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে যে, ভিকটিম মারজানা হক বর্ষা ধর্ষন করার পর কিভাবে হত্যা করা হয়।