শ্রী সুদর্শন চক্রবর্তী:
চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, অসামান্য পার্লামেন্টেরিয়ান, সংসদ কাঁপানো বক্তা, সাংসদ মঈন উদ্দীন খাঁন বাদল।
কিছু শূন্যতা পূরণ হয় আবার কিছু শূন্যতা পূরণ হবার নয়। বাদল ভাই-এর শূন্যতা পূরণ হবে কিনা জানি না, তবে অপূরণীয় ক্ষতি। দেশ হারালো বিরল এক রাজনীতিক, জাতি হারালো মননঋদ্ধ এক মনীষা।
উচ্চারণে এবং আচরণে তাঁর প্রত্যয়দীপ্রতা, দেশাত্মবোধ এবং মানবিক মূল্যবোধ সত্যিই অনুপম ও অতুলনীয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্নলালিত এবং দেশরত্ন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সোনালি স্বপ্ন পূরণের যে অঙ্গীকার তার সাথে বাদলের যুক্ততা এবং ঐকান্তিকতা প্রণিধানযোগ্য। বাদলের মৃত্যু সর্বমহলে শোকের আবহ নিয়ে এসেছে।
চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচিত সদস্য হলেও দেশের সার্বিক ব্যাপারে তাঁর চিন্তা-চেতনা, সাহসিকতা এবং মেধার লাবণ্য সর্ব মহলে সুবিদিত। তিনি তিন-তিনবার নির্বাচিত সাংসদ।
অহংকারবিহীন অমায়িক আলাপে, গণমানুষের সুখে দুঃখে, এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনায় তিনি সদা সর্বদা নিবেদিত ছিলেন। সত্য এবং স্পষ্ট ভাষণে তিনি যেন এক বিরল দৃষ্টান্ত। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও তিনি এলাকার কাজে এবং মানুষের কাছ থেকে নিজেকে কখনও দূরে সরিয়ে রাখেন নি।
আলাপচারিতায় তিনি একদিন আমাকে বলেছিলেন সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষে আসার সময় ডাক্তার বলেছে : “মি. বাদল, আপনি এখন গাড়ির পুরোনো পার্টসের মতো হয়ে গেছেন। পুরো ভালো হবেন না, যদ্দিন চলে।” তাঁর সংসদে প্রদত্ত বক্তব্য সম্বলিত বই ‘সত্যের স্পর্ধিত উচ্চারণ’ প্রকাশনার প্রাক্ সময়ে আমাকে তিনি বারবার বলতেন : বইটা দেখে যেতে পারবো তো? তাঁর স্ত্রী সেলিনা খান বাদল বলতেন, চিন্তা করো না, দেখে যেতে পারবে ইনশাল্লাহ।
বই প্রকাশিত হবার পর হাতে নিয়ে অশ্রু নয়নে কম্পিত কন্ঠে বললেন, এখন আমার শেষ চাওয়া পাওয়া কালুরঘাট ব্রিজ। এটা দেখে যদি মরতে পারি এবং আমার এলাকাবাসীর যাতায়তের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে দেখি তাহলে মৃত্যুটা শান্তির হবে। পরবর্তীতে এটাও বলতে শুনেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গগৌরব শেখ হাসিনা তাঁকে বলেছেন : ‘হবে-হবে। কোনো চিন্তা করবেন না-তো’।
হায়রে নিয়তি ! হায়রে মৃত্যু! ছিনিয়ে নিয়ে গেলো প্রবল বিশ্বাসী বাদলের নিঃশ্বাস ব্যাঙ্গালোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিছুটা উন্নতি হলেও শেষতক সবাইকে কাঁদিয়ে চলেই গেলেন না ফেরার দেশে। আর দেখব না বাদল ভাইকে মহান জাতীয় সংসদে। আর শুনবো না বজ্রকণ্ঠ। আর উপস্থিত হবে না কোনো টকশো’তে।
বাদল আজ স্মৃতিময় নির্বাক ছবি। বাদল আজ কীর্তিময় জীবনের উচ্চারিত শব্দ। বাদল ভাই শতায়ু হন নি কিন্তু তিনি কীর্তির মাধ্যমে শতাব্দীকাল বেঁচে থাকবেন। বোয়ালখালী-চান্দগাঁও ছাড়াও বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ তাঁকে স্মরণে রাখবে।