অনেকে ভাবেন, গবেষণা শুধুই ‘ভালো ছাত্র’দের জন্য। যাঁরা পিএইচডি করবেন বা ভবিষ্যতে শিক্ষক হবেন, তাঁদেরই গবেষণায় যুক্ত হওয়া উচিত। সত্যিই কি তাই? এ প্রসঙ্গে জানাচ্ছেন শাহরিয়ার আহমেদ। ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ নিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পপুলেশন হেলথ সায়েন্সেস বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন তিনি। বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থায় কাজ করছেন।

গবেষণা সবার

‘বিশ্ববিদ্যালয়’ শব্দটির সঙ্গে জ্ঞান তৈরি ও বিকাশের ধারণাটি জড়িত। আপনি যে বিষয়েই পড়ুন না কেন; গবেষণা কীভাবে করতে হয়, গবেষণার মাধ্যমে কীভাবে নতুন জ্ঞান তৈরি হয়, তা আপনাকে জানতে হবে। বলা হচ্ছে, ভবিষ্যতের পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে তথ্য-উপাত্ত বা ডেটা। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণের গুরুত্ব বাড়ছে বলেই এখন ডেটা সায়েন্স নিয়ে কথা হচ্ছে। চাকরি, ব্যবসা, যা-ই করেন না কেন, তথ্য বিশ্লেষণ করে আপনাকে এগোতে হবে। আর সে জন্যই চাই গবেষণার দক্ষতা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিষয়ের পাঠক্রমে গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়ে কোর্স সাজানো হয়। এসব কোর্স ভালোভাবে করার চেষ্টা করুন। গবেষণার অভিজ্ঞতা দেশের বাইরে বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রেও আপনাকে এগিয়ে রাখবে। যাঁরা সরকারি চাকরি করবেন, তাঁদেরও পেশাজীবনে নানা প্রয়োজনে গবেষণা করতে হয়। আমি যখন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করছিলাম, আমার এক শিক্ষক বলতেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কখনো কোনো প্রশ্নের উত্তরে শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’তে সন্তুষ্ট থাকা যাবে না; বরং আরও অনুসন্ধান করতে হবে। মানবসমাজের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সীমানা বাড়ানোই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকের কাজ।

এখন তথ্য ও জ্ঞান হচ্ছে যেকোনো পেশায় সামনে এগিয়ে যাওয়ার বড় অস্ত্র। গবেষণা করাই এখন বড় পেশা। হাসপাতাল থেকে শুরু করে সামরিক বাহিনী; কোমল পানীয় থেকে শুরু করে ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো প্রতিষ্ঠানে গবেষকদের চাহিদা বাড়ছে।

প্রথম বর্ষ থেকে পরিকল্পনা করুন

আপনি যে বিষয়ে পড়ছেন, সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে নতুন জ্ঞান ও তথ্য তৈরির আগ্রহ থেকেই গবেষণার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে হবে। বাংলা সাহিত্যে পড়েও ভালো গবেষণার সুযোগ যেমন আছে, তেমনি লেদার বা সিরামিকসে পড়েও গবেষণা করতে পারেন। আগ্রহ বা লক্ষ্য না থাকলেও অন্তত প্রথম বর্ষ থেকেই গবেষণার পরিকল্পনা মাথায় রাখুন। নতুন নতুন তথ্য জানার চেষ্টা করুন। আপনি যে বিষয়ে পড়ছেন, সেই বিষয়ে বিখ্যাত ব্যক্তি বা বিজ্ঞানীরা এখন কী ভাবছেন, অনলাইনে একটু চোখ রাখলেই তা পেয়ে যাবেন। আপনি যে বিষয়ে পড়ছেন, সেই বিষয়ে এ বছর কে নোবেল বা টুরিং পুরস্কার পেল, তাঁর কাজ কী নিয়ে, খোঁজ নিন।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ: গবেষণায় হাতেখড়ি, সুযোগের সন্ধান

বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত কোর্স করার পাশাপাশি গবেষণার নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ আছে। এসব সুযোগ কাজে লাগানো শিখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি, অনলাইন লাইব্রেরি ব্যবহারের মাধ্যমে আগ্রহের বিষয় বাছাই করে ফেলুন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নাল পড়ার সুযোগ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ই-মেইল ঠিকানা ব্যবহার করে। এসব জানুন। এ ছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব গবেষণাপ্রতিষ্ঠান থাকে, যেখানে হাতে-কলমে গবেষণাসংক্রান্ত প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়া যায়। এসব প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।

জানতে হবে বিভিন্ন সফটওয়্যারের ব্যবহার

প্রযুক্তির কল্যাণে গবেষণার সুযোগ আরও বিস্তৃত হয়েছে। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট এক্সেল থেকে শুরু করে পাওয়ার পয়েন্টের মতো টুল গবেষণার জন্য আপনার শিখতে হবে। এ ছাড়া এসপিএসএস, পাইথন প্রোগ্রামিংসহ বিভিন্ন কারিগরি ভাষা ও প্রোগ্রামের ব্যবহারের সাধারণ ধারণা রাখতে হবে। ভবিষ্যতে যে পেশাতেই যান না কেন, এসব টুল আজীবন আপনার কাজে আসবে। গুগল স্কলারসহ বিভিন্ন অনলাইন তথ্যভান্ডার ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য বের করা শিখুন। ইউটিউবসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে এসব শিখতে পারবেন।

গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ

আপনি যে বিষয়ে পড়ছেন বা ভবিষ্যতে যে বিষয়ে কাজ করবেন, তা নিয়ে এখন যাঁরা পেশাদার বা গবেষক, তাঁদের খোঁজ করুন। লিংকডইনে অ্যালামনাইদেরও খুঁজে পাবেন। www.academia.edu ও www.researchgate.net/ ওয়েবসাইট থেকে পেশাদার গবেষকদের তথ্য জানা ও বিভিন্ন গবেষণাপত্র পড়ার সুযোগ আছে। এসব পোর্টাল গবেষকদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতো। এখানে নিজের উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা করুন। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাসংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মশালা ও সেমিনারে নিয়মিত অংশ নিন।

চতুর্থ বর্ষ: প্রকাশনার চেষ্টা

বিভিন্ন গবেষণা সংস্থায় ইন্টার্ন বা শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজের সুযোগ থাকলে যুক্ত হন। অনেক সময় পেশাদার গবেষকের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এখন বিভিন্ন বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট বা থিসিস তৈরি করতে হয়। আপনার ভবিষ্যৎ গবেষণাপত্রের কথা মাথায় রেখে থিসিস তৈরির দিকে মনোযোগ দিন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে আপনার বিভাগের যাঁদের গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়েছে, তাঁদের কাছ থেকে কৌশল শেখার চেষ্টা করতে পারেন। বিভাগের শিক্ষক বা স্নাতক শ্রেণির থিসিস সুপারভাইজারের কাছ থেকে পরামর্শ নিন।

কপি- স্বপ্ন নিয়ে

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here