সূত্র-জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনেস্কো, ইউনিসেফ, বিডিনিউজ, ডি ডব্লিউ

যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেবে গত ২৮ দিনে করোনা সংক্রমণের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬ নম্বরে৷ এ সময়ে বাংলাদেশে দুই লাখ ৯৭ হাজার ৩৬৩ জন সংক্রমিত হয়েছেন৷ মারা গেছেন ছয় হাজার আট জন৷

১৪টি দেশের বেশিরভাগ স্কুল বন্ধ

প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ‘‘বিশ্বব্যাপী ১৪টি দেশের বেশির ভাগ স্কুল গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে৷ দেশগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ দক্ষিণ অ্যামেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের৷ এসব দেশে প্রায় ৯ কোটি ৮০ লাখ স্কুলগামী শিশুর ওপর এর প্রভাব পড়েছে৷ এই ১৪ দেশের মধ্যে পানামাই সবচেয়ে বেশি দিন স্কুল বন্ধ রেখেছে।’’

করোনা মহামারির শুরু থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ ও নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করছে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস রিসোর্চ সেন্টার৷ তাদের হিসেবে (https://coronavirus.jhu.edu/map.html) গত ২৮ দিনে যুক্তরাষ্ট্রে ৩২ লাখ ৬৫ হাজার ৯৮৯ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন৷ এই সময়ে দেশটিতে মারা গেছেন ১৭ হাজার ৭০৯ জন৷ শেষ ২৮ দিনে আর কোনো দেশে এত বেশি করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি৷

শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত

বিশ্বব্যাপী তিন-চতুর্থাংশের বেশি, প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখ বা প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন শিশু ব্যক্তিগত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হারিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে৷

তালিকায় ক্রমান্বয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরের দেশগুলো হচ্ছে ভারত (সংক্রমিতের সংখ্যা ১০ লাখ ১২ হাজার ৯৭২), ইরান, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, তুরস্ক, রাশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, স্পেন, মেক্সিকো, জাপান, সাউথ আফ্রিকা ও বাংলাদেশ৷

দক্ষিণ এশিয়ার ২২ শতাংশ

প্রতিবেদনে যে পরিসংখ্যান দেখানো হয়েছে তাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ২২ শতাংশ শিশুর শিক্ষা করোনাকালে বাধাগ্রস্ত হয়েছে৷

বাংলাদেশে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে৷ এরপর কয়েক দফা চেষ্টা করেও পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি না হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যায়নি, বরং দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়েছে৷ তবে ইউনেস্কোর হিসেবে (https://en.unesco.org/covid19/educationresponse#schoolclosures) দেখা যাচ্ছে, জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের আগে যে ১৫টি দেশ আছে সেগুলোর কোনোটিতেই টানা স্কুল বন্ধ থাকেনি৷ পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেশগুলোতে বিভিন্ন সময়ে আংশিক বা পুরো স্কুল খোলা হয়েছে৷ আবার পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে কিছুদিনের জন্য স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে৷

স্কুল বন্ধের পরিণতি

শিশুদের স্কুল বন্ধ রাখার পরিণতি ধ্বংসাত্মক বলে মনে করছে ইউনিসেফ৷ সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা এবং যারা দূরশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় না, তারা আর কখনো ক্লাসরুমে ফিরতে না পারার এবং এমনকি বাল্যবিয়ে বা শিশুশ্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিতে রয়েছে৷ ইউনেসকোর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, পুরোপুরি ও আংশিকভাবে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বিশ্বব্যাপী ৮৮ কোটি ৮০ লাখের বেশি শিশুর পড়াশোনা অব্যাহতভাবে বাধার মুখে পড়েছে৷

ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো গত ১২ জুলাই এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর মূল চালকগুলোর মধ্যে যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা নেই, সেটা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে৷ সুতরাং স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় করোনা সংক্রমণ ‘শূন্য’ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারেনা৷

১৬ কোটি ৮০ লাখ শিশুর স্কুল বন্ধ

এ বছরের ৩রা মার্চ জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) স্কুল বন্ধ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ সেখানে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের ১৬ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি শিশুর স্কুল এক বছর ধরে পুরোপুরি বন্ধ ৷ 

অনেক দেশে বার ও রেস্টুরেন্ট খুলে দিলেও স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়৷ অথচ সংক্রমণ ঠেকাতে কোনো কিছু বন্ধ করতে হলে সবার শেষে স্কুল বন্ধ করা উচিত আর সংক্রমণ কমার পর সবার আগে স্কুল খোলা উচিত৷ স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিশুদের যা ক্ষতি হচ্ছে তা হয়ত কখনই পূরণ নাও হতে পারে বলে বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়েছে৷

‘প্যান্ডেমিক ক্লাসরুম’ উদ্বোধন

স্কুলগুলো আবার খোলার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার প্রতি বিভিন্ন দেশের সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘প্যান্ডেমিক ক্লাসরুম’ উদ্বোধন করেছে ইউনিসেফ৷

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার এক সভায় করোনা সংক্রমণ কমে ‘সুবিধাজনক পরিস্থিতি’ হলে এবং টিকা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ বাচ্চারা ঘরে থাকতে থাকতে তাদেরও যথেষ্ট কষ্ট হচ্ছে৷ আর সেদিকে আমাদের আরো নজর দেওয়া দরকার৷”

‘প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে’

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেছেন, ‘‘বিশ্বব্যাপী শিক্ষাক্ষেত্রে লকডাউন ভয়াবহ জরুরি অবস্থার সৃষ্টি করেছে৷ যতই দিন যাচ্ছে, শিশুরা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে ততই পিছিয়ে পড়ছে৷ প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা শিশুদের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে৷’’

এর আগে গত সোমবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘যদি সংক্রমণের হার একবারেই কমে যায়, সেক্ষেত্রে হয়তো সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে৷” আর যদি সংক্রমণ একটা পর্যায়ে চলতে থাকে সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগে খুলে দেওয়া হতে পারে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী৷

লেখক: অমৃতা পারভেজ (তথ্যসূত্র: ইউনিসেফ ডটঅর্গ)

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here