তৌফিকুল ইসলাম বাবর:
মহাজোটের ব্যানারে টানা তিন দফায় নির্বাচন করে জয়লাভ করেছিলেন জাসদের একাংশের কার্যকরী সভাপতি মইনউদ্দীন খান বাদল। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ায় তার চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনটিতে নতুন করে নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে আসনটি শূন্য ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারপরও এখনই এলাকায় সবার মুখে মুখে একটি প্রশ্ন- নির্বাচন হলে আসনটিতে কে পাবেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন?
আসনটিতে প্রয়াত সাংসদ বাদলের ‘উত্তরাধিকারী’ হতে চান তার স্ত্রী সেলিনা খান বাদল। তবে স্বামী জাসদ নেতা হলেও তিনি নিজেকে নানাভাবে যুক্ত রাখেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে। ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবেই আসনটিতে নির্বাচন করতে চান তিনি। যদিও এখান থেকে নির্বাচন করার মতো হেভিওয়েট কোনো নেতা নেই আওয়ামী লীগে। অন্যদিকে এবার ত্যাগের ফল পাবেন বলে আশা করছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ।
আসনটিতে দলের অন্যতম মনোনয়ন দাবিদার হলেও কেবল জোটের সমীকরণে তিন দফায় ‘কপাল পোড়ে’ বর্ষীয়ান এই আওয়ামী লীগ নেতার। সাংসদ বাদলের মহাপ্রয়াণে স্বপ্ন দেখছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এসএম আবুল কালাম, সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির জ্যেষ্ঠ ছেলে মো. মুজিবুর রহমান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল কাদের সুজনসহ আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। গত নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন তারা। এরই মধ্যে নানাভাবে মনোনয়ন দৌঁড়ে নেমে পড়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতারা।
আগামী নির্বাচন নিয়ে সমকালের সঙ্গে কথা হয় সেলিনা খান বাদলের। তিনি বলেন, ‘এলাকা ও এলাকার মানুষকে নিয়ে আমার স্বামীর অনেক স্বপ্ন ছিল।। স্ত্রী হিসেবে আমি তার স্বপ্নের কথাগুলো জানি। তার পাশে থেকে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছি। এখন তিনি নেই। তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে আমি তার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’
নিজের এলাকা বোয়ালখালী-চান্দগাঁও হলেও এই এলাকা থেকে একবারও নির্বাচন করার সুযোগ পাননি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে পার্শ্ববর্তী পটিয়া আসন থেকে দলের মনোনয়ন পান প্রভাবশালী এই আওয়ামী লীগ নেতা। কিন্তু দু’বারই খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। মোছলেম উদ্দিন আহমদ সমকালকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার এলাকার আসনটি জাসদ নেতা মইনউদ্দীন খান বাদলকে ছেড়ে দেওয়ায় দল ও জোটের স্বার্থে আমি ত্যাগ স্বীকার করেছি। প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমার আস্থা আছে। নিশ্চয় দল এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমাকে মনোনয়ন দেবে। এ কথা বলতে পারি, নিজের এলাকার আসনে দলের মনোনয়ন পেলে আমি দলকে অবশ্যই জয় উপহার দিতে পারব।’
চট্টগ্রামে দানবীর হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি গত নির্বাচনে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু মনোনয়ন দিতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রী তাকে মূল্যায়ন করেন। গত সরকারের আমলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেন। সাবেক এই মন্ত্রীর ছেলে শিল্পপতি মুজিবুর রহমানও গত নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালনকালে নগরীতে চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন আবদুচ ছালাম। টানা ছয় দফায় তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। তবে এবার তাকে সরে আসতে হয়। ফলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকেই ঝোঁক ছিল তার। কিন্তু এরই মধ্যে সাংসদ বাদলের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হওয়ায় এখানেও তার আগ্রহ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার সমর্থক একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা। খবর দৈনিক সমকাল