কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত।এই ইবাদাতে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই মুখ্য।সামর্থ্যবান সকল মুসলমানের ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব।সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি না করার ব্যাপারে রাসূল (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।নিষেধ করেছেন ঈদগাহের কাছে যেতে।এর মাধ্যমে বুঝা যায় সামর্থ্যবানদের কুরবানি করা কত গুরুত্বপূর্ণ।মহান রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জন ও তাঁর ইবাদাতের জন্য পশু-জবেহ করাকে কুরবানি বলা হয়।
আল্লাহ পাক তাঁর নবীকে কুরবানি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।বলেছেন, ‘আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন ও কুরবানি করুন’।- (আল্ কোরআন, সুরা কাওসার)।হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে ইবরাহিম (আ.) পর্যন্ত প্রত্যেক নবী ও রাসুলের জীবনে কুরবানির দৃষ্টান্ত রয়েছে। তাঁরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানি করেছেন।
মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক তাঁর প্রিয়পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.) কে কুরবানি করার ঘটনাটি ছিল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ।এর মাধ্যমে মুসলমানদের উপর কুরবানি ওয়াজিব হয়।মহান আল্লাহ পাক হযরত ইবরাহিম (আ.) কে অনেক কঠিন পরীক্ষায় ফেলেন। কিন্তু প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।যে কারণে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত ইবরাহিম (আ.) কে ‘খলিলুল্লাহ’ বা আল্লাহর বন্ধু উপাধি দেন।হযরত ইবরাহিম (আ.) এর প্রতিটি কাজই ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।মহান আল্লাহর নির্দেশ পেলে কোন কাজেই তিনি বিন্দুমাত্র চিন্তা কিংবা দেরি করতেন না।তাৎক্ষণিক সে নির্দেশ পালনে দৃঢ়চিত্তে অগ্রসর হতেন।সে ধারাবাহিকতায় তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া কুরবানিও ছিল কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
আমাদেরকেও মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কুরবানি দিতে হবে।লোকের বাহ্বা কিংবা কেবল গোস্ত খাওয়ার নিয়্যত থাকলে কুরবানি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।আল্লাহ বলেন,‘আল্লাহর কাছে এদের (কোরবানির পশুর) গোস্ত কিংবা রক্ত পৌঁছায় না; বরং তাঁর দরবারে তোমাদের তাক্বওয়া পৌঁছায়’।-(আল কুরআন, সূরা হজ্ব) আমাদের প্রতিটি কাজই এমনিতে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া উচিত।যে কাজে আল্লাহ খুশি হন না সে কাজ থেকে আমাদের দূরে থাকা উচিত।কুরবানির মাধ্যমে আমাদের মাঝে বিদ্যমান পশুত্বকে দূর করতে পারি।এর মাধ্যমে নৈতিকতা, সহমর্মিতা ও আন্তরিকতার উন্মেষ ঘটবে।বিলুপ্ত হবে সব ধরনের হিংসা,বিদ্বেষ।
ইসলামে পশু কুরবানি নিছক কোন উৎসবের নাম নয়।এই কুরবানি সবার মাঝে ন্যায়ের জন্য ত্যাগের মানসিকতা সৃষ্টি করে।সৃষ্টি করে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ। সম্ভব হয় আল্লাহর নৈকট্য ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন।জাগ্রত হয় মহান আল্লাহর প্রতি দ্বিধাহীন আনুগত্য করার মানসিকতা।আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য না হলে কোন কাজই সার্থক হয় না।সার্থক হবে না কুরবানিও।তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারলে অর্জিত হবে ইহ ও পরকালীন সাফল্য।
প্রতিবছরই কুরবানি আসে, কুরবানি যায়।কিন্তু আমাদের মাঝে পরিবর্তন আসে না। পরিবর্তন আসে না মন ও মননে।আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে দৃপ্তপদে অগ্রসর হই না। আল্লাহকে পাওয়ার কিংবা তাঁর আনুগত্য করার মানসিকতা তৈরি হয় না।বর্জন করতে পারি না মনের পশুত্বকে। এ অবস্থা থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে।অর্জন করতে হবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি।শুধুই যদি আমাদের কুরবানি আল্লাহর জন্যই হয় তাহলে সেটাই হবে সফলতা।এর ফলে আমাদের চরিত্রের মাঝে পরিবর্তন আসবে।তরতাজা হবে ঈমান ও আখলাক।জীবনের সবক্ষেত্রে পবিত্রতা অর্জন ও চারিত্রিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই কেবল কুরবানি করার তাওফিক দিন।তাওফিক দিন নিজের কুপ্রবৃত্তি ও পশুত্বকে কুরবানি করার।পাশাপাশি কুরবানির বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলে যেন পরিবেশ দূষিত না করি।নির্দিষ্ট একটি জায়গায় গর্ত খুঁড়ে বর্জ্যসমূহ মাটিতে পুঁতে ফেলা আমাদের কর্তব্য।আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝার তাওফিক দিন।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here