দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, এ অঞ্চলকে ঘিরে উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নতুন কালুরঘাট সেতুর বিকল্প নেই। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইন স্থাপনের কাজ করছে সরকার। টেকনাফ পর্যন্ত এ রেললাইনের বিস্তৃতি ঘটবে। যাতে লোকজন সরাসরি ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যেতে পারবেন। কিন্তু বর্তমান কালুরঘাট সেতুটি ১৯৩০ সালে নির্মিত। ৯০ বছরের পুরোনো এ সেতু এখন জরাজীর্ণ। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের সুফল পেতে হলে কালুরঘাটে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণ জরুরি। কালুরঘাটে নতুন একটি সেতু হলে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রাম আলোকিত হবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কালুরঘাটে নতুন একটি সেতু নির্মাণ এবং কর্ণফুলী রিভার অথরিটি গঠন ও বাস্তবায়নের দাবিতে নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এই সমাবেশের আয়োজন করেন।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আইয়ুব খানের সভাপতিত্বে ও ভানুরঞ্জন চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় আয়োজিত সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন দৈনিক পূর্বকোণের পরিচালনা সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সেক্রেটারি চৌধুরী ফরিদ, কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মুস্তফা নঈম, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইন্দুনন্দন দত্ত, চান্দগাঁও মহল্লা ফেডারেশনের সভাপতি সরোয়ার আলম চৌধুরী প্রমুখ।
চট্টগ্রামের যে কোন সমস্যা সমাধানে আজাদী সব সময় সাথে আছে, আগেও ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে উল্লেখ করে দৈনিক আজাদী সম্পাদক আরো বলেন, ঢাকাতে যতই উন্নয়ন করা হোক না কেন, ঢাকার বাইরে বিশেষ করে চট্টগ্রামের উন্নয়ন না হলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন হবে না। কলকাতা শহরে প্রতিদিন ৫০ লাখ লোক সকালে এসে বিকেলে চলে যায়। এতে শহরের ওপর চাপ কমে যায়। একইভাবে চট্টগ্রামের ফেনী, দোহাজারি ও নাজিরহাট লাইনে প্রতিদিন তিনটি করে রেল চালু করলে প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ লোক চট্টগ্রাম মহানগরীর বাইরে চলে যাবে।
তিনি বলেন, পলিথিন কর্ণফুলীকে ভরাট করে দিচ্ছে। কর্ণফুলীর নিচে চার ফুট পলিথিনের স্তর তৈরি হয়েছে। পলিথিন শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, পলিথিন বানান কারা, সরবরাহ করেন কারা, ধরা হয় কাদের? ছোট বিক্রেতাদের ধরা হচ্ছে, তা দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না, পলিথিন কারখানাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। কর্ণফুলী নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাচবে না বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
দেশে ইয়াবা কারবারে রাঘববোয়ালরা জড়িত উল্লেখ করে আজাদী সম্পাদক বলেন, কঙবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মিয়ানমারের সাথে মাত্র ১২০ মাইল সীমান্ত রয়েছে। শুধু এই সীমান্ত এলাকাতে নজরদারি জোরদার করা গেলে ইয়াবা বাংলাদেশ প্রবেশ করতে পারে না।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দিন খান বাদলের সংসদে দেওয়া বক্তব্যকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, অতীতে কোন মন্ত্রী কিংবা সংসদ সদস্য নিজের এলাকার উন্নয়নের জন্য এভাবে উচ্চ কন্ঠে কথা বলেননি। বর্তমান আমলেই কালুরঘাট সেতু না হলে সংসদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়ে মাঈনুদ্দিন খান বাদল সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।
সমাবেশে দৈনিক পূর্বকোণের পরিচালনা সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড চট্টগ্রাম বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর সম্পূর্ণভাবে কর্ণফুলী নদীকে ঘিরে। কর্ণফুলী নদীর উপর নির্মিত কালুরঘাট সেতুটি একটি মেয়াদোত্তীর্ণ সেতু। দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কঙবাজারের লাখ লাখ মানুষের আনাগোনা হয় এই সেতুর উপর দিয়ে। বিপজ্জনক এ সেতু দিয়ে রেলের পাশাপাশি বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। এতে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন থেকে নতুন একটি সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে আসছে সরকার। সেতু নির্মাণের জন্য বৈদেশিক অর্থায়নও নিশ্চিত হয়েছিল। স্থানীয় সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দিন খান বাদল বিষয়টি সংসদেও উত্থাপন করেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কিন্তু কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর সড়ক কাম রেলসেতু নির্মাণ এখন চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দাবি ।
অনুষ্ঠানে চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার বৃহত্তর চট্টগ্রামে এক লক্ষ কোটি টাকার কাজ করছে। টানেল থেকে শুরু করে দোহাজারি-ঘুমদুম রেললাইন, দক্ষিণ চট্টগ্রামে কঙবাজাকে আধুনিক শহর, কয়লাভিত্তিক একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দেওয়া থেকে শুরু করে এমন কোন কাজ নেই যেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করছেন না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে গেটওয়ে অব ইকোনমি। চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে পুরো দেশের উন্নয়ন। কর্ণফুলী নদী আছে বলেই চট্টগ্রাম বন্দর বেঁচে আছে। কর্ণফুলীতে দিন দিন পলি জমছে। এতদিন মামলা জটিলতার জন্য ড্রেজিং করা হয়নি। এখন ড্রেজিং শুরু হলেও পলিথিনের জন্য খনন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তিনি বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের জন্য এই সেতু খুবই প্রয়োজন। চার বছর আগে এই সেতু নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে পত্র দিয়েছিলাম। স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে কালুরঘাট সেতুর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিশদভাবে বলেছি। এই একটি সেতু দক্ষিণ চট্টগ্রামের চেহারা পাল্টে দেবে। বোয়ালখালীসহ কঙবাজার পর্যন্ত যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এই সেতু না হলে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য কঙবাজার পর্যন্ত রেললাইনের সুফল পাওয়া যাবে না।’