শামীম রাহমান

প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিককে বলা হয় বাংলাদেশের গ্রামীণ সড়কের ‘রূপকার’।স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) সূচনালগ্নের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দেশের গ্রামীণ সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। শুধু গ্রামীণ সড়কই নয়, ঢাকার মেট্রোরেলেও ভূমিকা রয়েছে এ প্রকৌশলীর। রাজধানী ঢাকার জন্য প্রথমবারের মতো মেট্রোরেল নির্মাণের সুপারিশ করা হয় কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি)। ২০০৫ থেকে ২০২৫ সাল মেয়াদি এ পরিকল্পনায় ঢাকায় তিনটি মেট্রোরেল নির্মাণের সুপারিশ করা হয়, যার প্রথমটি আজ উদ্বোধন হচ্ছে। এসটিপি তৈরি করেছিল তত্কালীন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় বোর্ড (ডিটিসিবি)। আর এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক হিসেবে এসটিপি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন কামরুল ইসলাম সিদ্দিক।

প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের কর্মজীবনের শুরু ১৯৬৭ সালে। ওই সময় কুষ্টিয়া জেলা পরিষদে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন তিনি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। এ সময় যুদ্ধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন রাস্তা ও সেতুর নকশা প্রণয়ন করে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন অপারেশনে প্রকৌশলী হিসেবেও তিনি ভূমিকা রাখেন।

স্বাধীনতার পর পল্লী কর্মসূচির উপপ্রধান প্রকৌশলী ও পরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন নগর নির্মাণ কর্মসূচির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। মন্ত্রণালয়ের ওয়ার্কস প্রোগ্রাম উইংকে ১৯৮৪ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরোয় (এলজিইবি) রূপ দেয়া হয়। কামরুল ইসলাম সিদ্দিক ব্যুরোর কার্যক্রমে ব্যাপক সংস্কার আনেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালের আগস্টে এলজিইবি রূপ নেয় এলজিইডিতে। সে সময় সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন কামরুল ইসলাম সিদ্দিক। তার হাত ধরে দেশের গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার রূপান্তরে চালকের ভূমিকা নেয় এলজিইডি। ১৯৯৯ পর্যন্ত সংস্থাটির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বেসরকারীকরণ কমিশনের চেয়ারম্যানের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন কামরুল ইসলাম সিদ্দিক।

২০০৩ সালের ১২ মে তিনি নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন তত্কালীন ডিটিসিবিতে। সেখানে কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের সবচেয়ে বড় অবদান এসটিপি প্রণয়নের কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে মনে করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এমএম সালেহউদ্দিন, যিনি সে সময় সংস্থাটির অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। এমএম সালেহউদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এসটিপিতে ঢাকার জন্য ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট বা এমআরটি ও বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি অন্তর্ভুক্ত করতে যে কয়েকজন মানুষ জোরালো ভূমিকা রাখেন তার মধ্যে কামরুল ইসলাম সিদ্দিক স্যার অন্যতম। তিনি ঢাকার জন্য এমন গণপরিবহন ব্যবস্থা চেয়েছিলেন, যেটা একসঙ্গে বিপুল মানুষকে সেবা দিতে পারবে।’

‘কামরুল ইসলাম স্যার খুবই মেধাবী একজন মানুষ ছিলেন। তার কোনো তুলনা হয় না। ডিটিসিবিতে যতদিন কাজ করেছেন, সবসময় তাকে দেখেছি কর্মতত্পর। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগেও তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে একটি সেমিনারে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তার জীবন আরো দীর্ঘ হলে গ্রামীণ যোগাযোগ অবকাঠামোর পাশাপাশি নগর অবকাঠামোর উন্নয়নেও বেশি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হতেন’—বলেন ড. সালেহউদ্দিন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here