জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা করলেন তার কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বললেন, শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আজ আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে অগ্রগতির যাত্রায় তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে। এখন আর বাংলার জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। জাতির জনক যে আদর্শে আওয়ামী লীগ গড়ে তুলেছেন, সেই আদর্শ ধারণ করে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তিনি।

এদিন পূর্বনির্ধারিত সময় বিকেল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন শেখ হাসিনা। বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করেন তিনি। এসময় জাতীয় সংগীতের সুরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শোক প্রস্তাব উত্থাপন, সম্মেলনের অভ্যর্থনা উপকমিটির আহ্বায়কের বক্তব্য ও দলের সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপনের বক্তব্য শেষে সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় উদ্বোধনী অধিবেশন।

সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা শুরুতেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, পঁচাত্তরে ঘাতকদের হত্যার শিকার বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য, মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের শহিদ, মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণ নির্যাতনের শিকার নারীসহ স্বাধীনতার সংগ্রামে বিভিন্ন সময় প্রাণ উৎসর্গকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান তিনি।

জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ আরও অনেক আগেই উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতো বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে অনেক দূরে ঠেলে দেওয়া হয়। ওই সময় জিয়াউর রহমান ছিলেন সেনাপ্রধান। সংবিধান লঙ্ঘন করে তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন, জাতির পিতার হত্যায় যারা জড়িত ছিলেন তাদের বিচারের পথ বন্ধ করে দেন, দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে যতটা দূরে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই চেষ্টা করেন। সেই ধারাবাহিকতা চলে ২১ বছর। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশকে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে নিয়ে আসে। তখনই আবার দেশের মানুষ কিছু পেতে শুরু করে।

বারবার আঘাত এসেছে, আদর্শ আছে বলে নিঃশেষ হয়নি আ.লীগ

সেই পাকিস্তান আমল থেকেই আওয়ামী লীগকে বারবার ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা সবসময় লক্ষ করেছি, আওয়ামী লীগের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণভাবে শেষ করে দেওয়ার অনেক প্রচেষ্টা বারবার হয়েছে। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান চেষ্টা করেছেন আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দিতে। পঁচাত্তরের পরও সে চেষ্টা অব্যাহত ছিল। খালেদা জিয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ জাতির পিতার নীতি ও আদর্শে গড়া সংগঠন। সেই নীতি ও আদর্শ ছিল বলেই জাতির পিতার হাতে গড়া এই সংগঠনকে কেউ ধ্বংস করতে পারেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। অনেকবার ভাঙন এসেছে। আমরা আবার নতুনভাবে দলকে গড়ে তুলেছি। আমি দেশে ফেরার পর সারাদেশ ঘুরেছি, সারাদেশ ঘুরে সংগঠনকে দাঁড় করিয়েছি। সে কারণেই আজ আওয়ামী লীগ এই দেশে সবচেয়ে বড় সংগঠন ও সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন। আর সেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই কেবল জনগণ কিছু পায়, এটি প্রমাণিত সত্য।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও সন্ত্রাস করে, বিরোধী দলে থাকলেও সন্ত্রাস করে

রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির সমালোচনা করে কাউন্সিলে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি দেশের জন্য কোনো কল্যাণ করতে পারে না। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় ছিল। তাদের আমলে এই দেশ পাঁচ পাঁচ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, গ্রেনেড হামলা, দুই সংসদ সদস্যকে হত্যা, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর অমানুসিক নির্যাতন— কিছুই বাদ রাখেনি তারা।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা গণহত্যা করেছে, যারা যুদ্ধাপরাধী, তাদের নিয়ে জোট করেছিল বিএনপি। আর তাদের কাজই ছিল সন্ত্রাস। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও সন্ত্রাস করে, বিরোধী দলে থাকলেও সন্ত্রাস করে। তবে সবচেয়ে জঘন্য ছিল অগ্নিসন্ত্রাস। পাঁচ শতাধিক মানুষকে তারা আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। আহত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। অনেক মানুষের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। আর সে কারণেই জনগণ তাদের জবাব দিয়েছিল নির্বাচনে। বিএনপি ভুলে যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিল। পরের একটি নির্বাচন তারা বয়কট করে। আরেকটি নির্বাচনে তারা অংশ নেওয়ার মানে একই আসনে তিন জন, চার জন করে মনোনয়ন দিয়ে বাণিজ্য করে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে নির্বাচন করেনি।

লক্ষ্য অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন

১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে জাতির জনক বলেছিলেন, স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে প্রয়োজন অর্থনৈতিক মুক্তি। সে কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। গ্রামের মানুষের যাদের ঘরবাড়ি ছিল না, তাদের ঘরবাড়ি করে দিয়েছি। যাদের কুঁড়েঘর ছিল, তাদের এখন টিনের ঘর হয়েছে। কেউ কেউ দালান তুলছে। জাতির পিতা চেয়েছিলেন, জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে স্বাস্থ্যসেবা। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে মানুষের কাছে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে পৌঁছে দিচ্ছি।

এসময় মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, স্থল সীমানা সংশোধন বাস্তবায়ন, ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিসহ বিভিন্ন ঘটনাকে সরকারের অর্জন হিসেবে তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৯— মাত্র একদশক। এই একদশকের মধ্যে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। বঙ্গবন্ধু স্বল্পোন্নত দেশ রেখে গিয়েছিলেন, এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হয়েছি। এই উন্নতি ধরে রাখতে হবে। আমাদের লক্ষ্য দেশকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, অনেকেই মনে করেন, এই আমাদের ৮ দশমিক ১৫ ভাগ প্রবৃদ্ধি, এটা আমরা কিভাবে অর্জন করলাম। জাতির পিতার নীতি-আদর্শ অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছি বলেই বাংলাদেশকে উন্নত করতে পারছি। এই অগ্রাযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে, সেটাই আমার চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলেছেন, দল চালাতে হলে সংগঠক দরকার। একটি দল যদি আদর্শ নিয়ে চলে, সেই দলই পারে দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিতে। আর বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ একমাত্র দল, যারা দেশের মানুষকে ভাষা এনে দিয়েছে, স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আজ আমরা অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। জাতির জনক যে সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন, আমরা সেই সোনার বাংলা গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ— আজকের এই কাউন্সিলে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, এটাই আমাদের  লক্ষ্য।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here