সেকান্দর আলম বাবর : বোয়ালখালীর পূর্ব চরণদ্বীপে কর্ণফুলী পাড়ের বাসিন্দা বিধবা সাজু আকতার। এক সন্তানকে নিয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন। বর্ষা আর কাপ্তাই বাঁধের পানি বাড়লেই আতঙ্কে দিন কাটে তার। দু’ চোখে হারানোর বেদনা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কারণ ইতোমধ্যেই নদীভাঙনে হারিয়েছেন ভিটের অর্ধেক অংশ। বাকিটুকু কখন নদী গিলে খাবে এ আতঙ্কে দিনাতিপাত। ভিটেমাটি হারালে যাবে কোথায়, খাবে কি? কে দেবে তাদের আশ্রয়। তার যে নতুন করে সংসার পাতার সেই সামর্থ্য নেই। এমনই পরিস্থিতি পূর্ব চরণদ্বীপ ঘাটিয়াল পাড়ার বাসিন্দা রমজান আলী, আবদুল মোতালেব, ফারুক, কামাল, লিয়াকত আলী, এমদাদ আলী, মর্তুজা জামান, মীর হোসেন, সিরাজ মিয়া, জাগিরা বেগম ও মুন্সি মিয়ার পরিবারের।

ইতোমধ্যে তাদের অনেকেই এ বর্ষায় নদীভাঙনে ঘর হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের দেয়া ঝুঁপড়ি ঘরে। তারা নদীর পাড়ে ব্লক হবে- এমন আশায় আশায় দিন কাটাচ্ছে গত অর্ধযুগ ধরে। কর্ণফুলীর ভাঙনরোধে ৭২ কোটি টাকার সিসি ব্লকের আওতায় তারা এখনো আসেনি। এমনটিই জানালেন স্থানীয় ইয়াকুব আলী। তিনি বলেন, এবার ভাঙনে সব গেল। মরিচ ক্ষেত, সবজি ক্ষেত, ঘর ও গোয়াল সবই। পথে বসতে হয়েছে সকলকে। দিনদিন ছোট হচ্ছে ঘাটিয়াল পাড়া গ্রাম। হুমকির মুখে আরও সহস্রাধিক পরিবার।

সরেজমিনে দেখা যায়, চরণদ্বীপ ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড প্রায় পুরোটাতেই কখনও বসেনি সিসি ব্লক। এছাড়া ১, ৩, ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডেরও কিছু কিছু এলাকায় ব্লক না বসায় প্রতিনিয়ত গিলে খাচ্ছে কর্ণফুলী নদী। এর দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২ কিলোমিটার। এবারের বন্যা, অতিবর্ষণ, নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় ১২ একর জমি। অনেকে হয়েছেন জমিহারা। প্রায় ১৪টি ঘর ভাঙনের কবলে পড়েছে। নদীতে মিশে গেছে ঘাটিয়ালপাড়ার রাস্তাটিও। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, গত ৫০ বছরে এ রকম ভাঙনের কবলে পড়েনি এলাকাটি। তারা দাবি করেন, অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধভাবে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এর লাগাম টেনে না ধরলে ভবিষ্যতে সিসি ব্লক দিলেও এ প্রক্রিয়া শেষ হবে না।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য শফিউল আলম বলেন, ভাঙন খেয়েছে শত পরিবারের স্বপ্ন। ভাঙনরোধে ব্লক বসানো এখন সময়ের দাবি।

জানতে চাইলে স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. শামসুল আলম জানান, আমার ইউনিয়নটি পুরোটাই কর্ণফুলীর পাড়ে। এখনও প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় সিসি ব্লক বসেনি। দীর্ঘসময় আশ্বাসের বাণীতে জনগণকে রাখতে হচ্ছে। তাই দ্রুত এ কাজ বাস্তবায়ন জরুরি। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে স্থানীয় সাংসদ পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। এবারের ভাঙন কবলিত লোকজনের ব্যাপারে তিনি বলেন, তাদের আমার ব্যক্তিগত ও সরকারি পক্ষ থেকে সাহায্য করা হচ্ছে। আমি নিজে গৃহহারাদের ঘর বেঁধে দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেছি।

ভাঙনে পূর্ব চরণদ্বীপের মানুষ কষ্টে আছে জানিয়ে স্থানীয় সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদল বলেন, বিষয়টি আমার নজরে আছে। বর্ষার পানি কমলেই পূর্ব চরণদ্বীপের ঘাটিয়াল পাড়ায় ব্লক বসানোর কাজ উদ্বোধন করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here