আগামী দুই সপ্তাহ বাংলাদেশের জন্য পিক টাইম। করোনা ভাইরাস কমিউনিটি লেভেলে ছড়াচ্ছে, সংক্রামিত হচ্ছে অনেক মানুষ। দেশের ভেতরে এখন করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা। গত সপ্তাহেও যারা দেশে ফিরেছেন তাদের মাধ্যমেও যদি এটা ছড়িয়ে পরে তাহলে আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের ভেতরেই প্রকাশ পাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা এখন আর অস্বীকার করা যাবে না। যদি মনে করা হয় ছড়াচ্ছে না—তাহলে এটা বিরাট ভুল করা হবে। সাক্ষ্য প্রমাণের জন্য আর অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ স্প্রেডিং টাইমে প্রবেশ করছে। আক্রান্ত দেশগুলো থেকে যারা ইতোমধ্যেই দেশে এসেছেন তাদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখা গেলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। তবে এখনও সময় আছে, সরকার যদি কঠোরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে বিদেশ ফেরতদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নিতে পারে তাহলে কিছুটা রক্ষা হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনের উহানে প্রথম করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশ তিন মাস সময় পেয়েছে। অথচ কোনও প্রস্তুতি নেয়নি। এখন তারা হাসপাতাল প্রস্তুত করছে, আইসিইউ ব্যবস্থা করছে, সরঞ্জাম আনছে বিদেশ থেকে। অথচ শুরু থেকে দেশে কিট নেই, হাসপাতাল প্রস্তুত নয়, চিকিৎসকদের সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই বলে সতর্ক করা হয়েছে। তারা কোনও কথাই কানে নেননি, এখন তার মাশুল দিতে হবে সবাইকে মিলে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, যে মানুষগুলোকে হোম কোয়ারেন্টিনে গিয়েছেন তারা কিন্তু আসলে কোয়ারেন্টিনে থাকছেন না। তাদের থেকে এখন এটা ছড়াবে। আর এটা ছড়ালে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ পাবে। ভাইরোলজির ভাষায় এটা পিক টাইম। নিশ্চিতভাবেই আমরা এক ‘ক্রুশিয়াল টাইমের’ মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি মন্তব্য করে প্রখ্যাত এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, বাংলাদেশ এখন স্প্রেডিং টাইমে প্রবেশ করছে। আর এজন্য সরকারকে আমাদের সবার সাহায্য করা দরকার। উপজেলা-জেলা হাসপাতালগুলোতে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রথম থেকেই যদি হোম কোয়ারেন্টিন না করে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করা হতো তাহলে ঝুঁকি নিতে হতো না। দেশের টেস্টিং ফ্যাসিলিটি আরও বিস্তার করতে হবে। শুধু জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) না রেখে আরও কয়েকটি জায়গাতে পরীক্ষা করার সুযোগ থাকলে, আরও ল্যাবরেটরিকে সম্পৃক্ত করতে পারলে সেটা রোগী নির্ণয় করতে সাহায্য করবে।
চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানী আতিক আহসান বলেন, যদি সংক্রমিত হয়ে দেশে একজনও প্রবেশ করেন তারপরও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুযায়ী বলা যায়, দেশে করোনা ছড়িয়ে গেছে। রোগী বাড়বেই, এখন আর আমাদের একে আটকানোর কিছু নেই। ইনফেকশন রেটকে স্লো করতে পারি, কিন্তু বন্ধ করা যাবে না। তবে এখনও বলব, দেশে কেউ এখনও এ অবস্থার জন্য ‘রেডি’ নন। এ অবস্থায় হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করা, চিকিৎসকদের সুরক্ষা সরঞ্জাম নিশ্চিত করা,আইসোলেশন ইউনিট, আইসিইউসহ অন্যান্য সব ব্যবস্থাপনা নিয়ে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কৌশল নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি, নয়তো সামনে ভীষণ বিপদ—বলেন আতিক আহসান।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, এই ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণগুলো প্রকাশ হতে সাধারণত ১-২ সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হয়। সাধারণ সর্দি কাশির সঙ্গে মিল থাকায় পরীক্ষা না করে শুধু শারীরিক লক্ষণ দেখে এটি আলাদা করা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর প্রথম রোগী সনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। এরপর গত ১৪ দিনে শনাক্ত হয়েছে ২৪ জন, মারা গেছেন ২ জন। প্রথম থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলক এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করার দাবি জানালেও সেটা মানা হয়নি। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা বিদেশ থেকে আসা অথবা তাদের দ্বারা সংক্রমিত। অথচ তাদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোয়ারেন্টিন করে রাখলে দেশ এ হুমকিতে পড়তো না।
ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, এখনও সময় আছে, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে একটি জাতীয় রেসপন্স টিম গঠন করা হোক। এর কার্যক্রম পরিচালিত হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। একইসঙ্গে এ টিমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কর্মরত বিশেষজ্ঞদের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সম্পৃক্ত করা হোক, একজন বিশেষজ্ঞকে স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ দিতে হবে।
খবর বাংলা ট্রিবিউন