প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতাসম্পন্ন হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে সুইজারল্যান্ডের ওষুধ প্রস্তকারক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান নোভারটিস সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এই ভাইরাসের নতুন ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে কমপক্ষে ১২ মাস সময় লাগতে পারে। নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তারকে প্রকৃত হুমকি হিসেবে বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন নোভারটিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ভাস নরসিমহান।

বুধবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন নিশ্চিত করে বলেছে, করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ৯৭৪ জন। এর মধ্যে ১৩২ মারা গেছেন এবং ১০৩ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর সুস্থ্য হয়ে বাসায় ফিরেছেন।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলের উহান শহরে প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধ্যান পাওয়া যায়। প্রথম দিকে চীন সরকার নতুন ভাইরাসের খবর কিছুটা চেপে গেলেও পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে উহানে নতুন এই ভাইরাসের উপস্থিতির তথ্য জানায়। বর্তমানে উহানের সীমানা পেরিয়ে এই ভাইরাস রাজধানী বেইজিং, সাংহাই, ম্যাকাও ও হংকংয়ের বাইরে বিশ্বের ১৯ টি দেশে ছড়িয়েছে।

২০০৩ সালে একই গোত্রের ভাইরাস সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোমের (সার্স) প্রাদূর্ভাব দেখা দেয় চীনে। সেই সময় সার্সে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এবার ছাড়িয়ে গেছে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস। চীন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববাজারে বড় ধরনের ধাক্কার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নোভারটিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ভাস নরসিমহান মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে বলেন, বাস্তবতা হলো এই ভাইরাসের নতুন ভ্যাকসিন তৈরি করতে এক বছরের বেশি সময় লাগতে পারে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর জন্য এই মুহূর্তে আমাদের মহামারী সংক্রান্ত সতর্কতাগুলো আরও ভালও করে অনুস্মরণ করতে হবে।

ইতোমধ্যে উহানের এই ভাইরাস থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১৯টি দেশে ছড়িয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বের প্রত্যেক দেশের সরকারকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন ভাস।

ভাইরাসের বৃহৎ পরিবারের সদস্য নতুন এই করোনাভাইরাস; যা সাধারণত প্রাণীর দেহে বিস্তার ঘটে। তবে অনেক সময় প্রাণী থেকে মানুষের দেহেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই ভাইরাসে যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কার্ডিওভাসকুলারের মতো রোগে ভুগতেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যে কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যায়।

গত সপ্তাহে চীনের প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তারের ঘটনায় দু’বার জরুরি বৈঠকে বসলেও বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য করোনাভাইরাসকে হুমকি ঘোষণা করতে অস্বীকৃতি জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক এই সংস্থা বলছে, করোনাভাইরাস জরুরি অবস্থায় রয়েছে চীন।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে প্রথমবারের মত গবেষণাগারে করোনাভাইরাস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন দেশটির বিজ্ঞানীরা। চীনের বাইরে প্রথম কোনো দেশ এ ভাইরাস আবিষ্কার করল। যা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আবিষ্কারে এক ‘যুগান্তকারী পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

ভবিষ্যতে এ ধরনের ভাইরাস প্রাদূর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার আগে ওষুধ শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো আরও ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে কিনা, এমন এক প্রশ্নের জবাবে ভাস নরসিমহান বলেন, এ ধরনের মহামারি যখন ছড়িয়ে পড়ে কিংবা ঘটনা ঘটে, তখন বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ সামনে আসে। এখানে প্রচুর আগ্রহ এবং প্রচুর কার্যকলাপও দেখা যায়। কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই যদি প্রস্তুতি নেয়া হয়, কিন্তু পরবর্তীতে কোনও ঘটনা না ঘটে তাহলে প্রত্যেকেই ক্ষতির মুখে পড়ে। এমনকি বিনিয়োগও ঝুঁকিতে পড়ে যায়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here