নমুনা পরীক্ষা বাড়লে আক্রান্ত শনাক্তও বাড়বে। কথাটি সবার আগে স্বীকার করেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। যিনি করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে রাত-দিন নগরীর অলিগলি ঘুরে বেড়িয়েছেন। সংক্রমণ রোধে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং লকডাউনে মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন। নমুনা পরীক্ষা বাড়লে শনাক্তও বাড়বে এমনটা স্বীকার করেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি। একই কাতারে আছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর, বিআইটিআইডি ল্যাবের প্রধান ডা. শাকিল আহমেদসহ বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাও।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামে নমুনা পরীক্ষা যারা করছেন তাদের মধ্যে শতকরা ২৮.৩৮ শতাংশের করোনা শনাক্ত হচ্ছেন। এ হার দেশের গড় শনাক্তের হারের তুলনায় ১০ শতাংশের বেশি। বৃহসপতিবার পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষায় দেশে গড় শনাক্তের হার ছিল ২১ শতাংশ। শুধু তাই নয়, মৃত্যুতেও এগিয়ে চট্টগ্রাম। যার হার ২.১৪ শতাংশ। অথচ দেশে গড় মৃত্যুর হার ২ জনেরও কম। আবার সুস্থ হয়ে উঠার হারও অনেক কম চট্টগ্রামে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রত্যক্ষ বাস্তবতার বাইরে সরকারি হিসেবেও করোনাভাইরাসের তীর্থস্থান এখন চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম মহানগরীর বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, চীনের উহান করোনাভাইরাসের জন্মস্থান হলেও চট্টগ্রাম এখন তীর্থস্থান। চট্টগ্রামের ৪০ ভাগ মানুষ এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। চট্টগ্রামে দিনে সর্বোচ্চ এক হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। ১০ হাজারেরও বেশি নমুনার জট পড়েছে। প্রতিদিন ২ হাজারেরও বেশি নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে। যা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরুতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা পরিবারের সদস্য ও আত্নীয় স্বজনদের নমুনা পরীক্ষা করা হত। এখন সংস্পর্শে আসা কারো নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না। তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হলে চট্টগ্রামে দিনে ১০ হাজারেরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব না মানা, মাস্ক না পরা, বিনা কারণে বাইরে ঘোরাফেরা, আড্ডা দেয়া, গণপরিবহনসহ সবকিছু উন্মুক্ত হওয়া এবং সর্বোপরি সরকারি নির্দেশনা না মানার প্রবণতার কারণেই চট্টগ্রামের মানুষ করোনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তেমনি নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার অভাবে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে চট্টগ্রামে। এভাবে চলতে থাকলে আক্রান্তের হার আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২৬ হাজার ২২৯ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এরমধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ৪৪৬ জনের। শনাক্তের এই হার শতকরা ২৮.৩৮ শতাংশ। বিপরীতে দেশে গড় শনাক্তের হার ২১ শতাংশ।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিন মতে, সারাদেশে মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬ লাখ ১৯ হাজার ৯৪১ জনের। এরমধ্যে শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৭৪ জনের। শতকরা হিসেবে সনাক্তের এই হার ২১ শতাংশ। এছাড়া সারাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ৬৬১ জন। মৃত্যুর এ হার ১.২৭ শতাংশ। কিন্তু চট্টগ্রামে আক্রান্তদের মাঝে মৃত্যুর হার ২ শতাংশের বেশি। ২৫শে জুন পর্যন্ত চট্টগ্রামে মৃত্যু হয়েছে ১৬০ জনের। এটি মোট আক্রান্তের ২.১৪ শতাংশ। দেশের গড় মৃত্যুর হার ২ জনের কম। এদিকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হারে এগিয়ে থাকলেও সুস্থতার হারে পিছিয়ে চট্টগ্রাম। দেশে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫১ হাজার ৪৯৫ জন। যা মোট আক্রান্তের ৪০ শতাংশের বেশি। কিন্তু ২৫ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রামে সুস্থ হয়েছেন ৯০৮ জন। এটি মোট আক্রান্তের ১২.১৯ শতাংশ।
চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের মতে, চট্টগ্রামের ৪০ ভাগ মানুষ এখন করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত। তার মানে ৮০ লাখ মানুষের এই জনপদের প্রায় ৩২ লাখ মানুষ এখন করোনা আক্রান্ত। যা গা শিউরে উঠার মতো হিসেব। তবে সে হিসেব মানার কোন সুযোগ নেই। কারন শনাক্ত হওয়া করোনা আক্রান্ত তথ্যের বাইরে কথা বললেই সবার আগে আসে সরকারি কোপ। হিসেবটি তাই মনে মনেই পোষণ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। যা বলার আগেই তারা বলে রাখেন-অফ দ্য রেকর্ড। তবে একটা বিষয় স্বীকার করেন তারা। সেটা হল নমুনা পরীক্ষা কম।