১৯৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পরবর্তী প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রাজনীতি আমার জন্য নতুন কিছু ছিল না। স্কুল থেকে রাজনীতি করতাম। দেয়াল টপকে যেতাম মিছিলে, আন্দোলনে যোগ দিতাম। কলেজ জীবনে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। কলেজে ছাত্রলীগ গড়ে তোলা, কলেজে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় আন্দোলন করেছি। কিন্তু কখনও ভাবিনি এত বড় সংগঠনের গুরুদায়িত্ব আমাকে নিতে হবে, নিতে পারব।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পঁচাত্তরে বাবা-মা সবাইকে হারিয়েছি। ছয়টি বছর দেশে আসতে পারিনি। রিফউজি ছিলাম দুই বোন। ৮২ সালে আওয়ামী লীগ আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচতি করেছিল বলেই জনগণের সাড়া ছিল, নেতাকর্মীদের আহ্বানে দেশে ফিরে এসেছিলাম।’
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে শেখ হাসিনা এ সব কথা বলেন।
ভাষণের শুরুতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠিত সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, প্রথম সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ মানুষের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসে গঠন করা কোনো দল নয়। একেবারে গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করার লক্ষ্য নিয়ে এই দল প্রতিষ্ঠিত। এ কারণে বাংলার মানুষের যতটুকু অর্জন, একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, কাজ করেছে, তখনই মানুষ কিছু পেয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা সাধারণ জনগণ যারা দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করেছে। এই সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। কারণ এ দেশের মানুষ ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে। একবেলা খাবার পেত না। মাথাগোঁজার ঠাঁই ছিল না। রোগে চিকিৎসা পেত না। শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। শোষিত-বঞ্চিত ছিল। বঞ্চনার হাত থেকে কীভাবে মুক্ত হবে, সেটি ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য। সে জন্য দেশ স্বাধীন করে যান।’
‘জাতির পিতা ১৯৭২ সালে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে ইন্টারভিউয়ে বলেছিলেন জীবনকে সংগ্রামের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করে যাওয়া, সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ । বঙ্গবন্ধু অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। নেতৃত্ব দিতে হলে সবচেয়ে বেশি আত্মত্যাগ প্রয়োজন। আপনারা অসমাপপ্ত আত্মজীবনীতে দেখবেন বঙ্গবন্ধু কষ্ট করেছেন। বাংলার মানুষের জন্য, দুঃখী মানুষের জন্য। সেই লক্ষ নিয়েই তিনি সংগ্রাম করে গেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি বারবার কারাবরণ করেছেন। বিনা বিচারে বছরের পর বছর তিনি কারাবরণ করেছেন। কখনও তিনি দেশের মানুষের কল্যাণের পথ ছেড়ে যাননি। এই বাংলার জনগণের জন্য যে কোনো আত্মত্যাগে তিনি সদা প্রস্তুত ছিলেন।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা বাঙালি জাতি, আমাদের জাতিসত্তা আছে। আমাদের সংস্কৃতি, ভাষা আছে। প্রতিটি নেতাকর্মীকে অনুরোধ জানাব, এই জাতিসত্তার চেতনা নিয়ে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।’
কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা সবসময় লক্ষ করেছি, এই বাংলাদেশে বারবার আঘাত এসেছে। আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণভাবে শেষ করে দেওয়ার অনেক প্রচেষ্টা বারবার হয়েছে। পাকিস্তান আমল থেকে আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, পঁচাত্তরের পর খালেদা জিয়া, সব আঘাত আওয়ামী লীগের ওপরেই এসেছে। কিন্তু জাতির পিতার হাতে গড়া আদর্শের সংগঠন বলে কেউ এটিকে নিঃশেষ করে দিতে পারেনি। ধ্বংস করতে পারেনি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। অনেকবার ভাঙন এসেছে। আমরা আবার নতুনভাবে দলকে গড়ে তুলেছি। আমি সারাদেশ ঘুরেছি। আজ আওয়ামী লীগ এই দেশে সবচেয়ে বড় সংগঠন ও সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জনগণ কিছু পায়, এটি প্রমাণিত সত্য।
এর আগে বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হয়ে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এরপর পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এ রাজনৈতিক দলটির সম্মেলন উদ্বোধন ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা।