কিন্তু কেন নেই? সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে দেখতে হবে যে, মুসলিম স্বর্ণযুগের বিজ্ঞানী-কবি-শাসক উনারা কাদের কাছে যেতেন? কারা উনাদের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করেছিলেন?
বিগত দিনসমূহে মুসলিম কবি-বিজ্ঞানী-মনীষী যাঁরা ছিলেন, উনারা সকলেই ছিলেন ছূফী-দরবেশ। অবধারিতভাবেই উনারা সকলেই কোনো না কোনো হক্কানী পীর-মুর্শিদ উনাদের হাতে বাইয়াত ছিলেন। যেমন, হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পীর ছিলেন হযরত শামসে তাবরীযী রহমতুল্লাহি আলাইহি। রসায়ন বিজ্ঞানের জনক বলে পরিচিত হযরত জাবির ইবনে হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুর্শিদ ছিলেন, ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম জাফর ছাদিক আলাইহিস সালাম তিনি।

তবে শুধু মুসলিম স্বর্ণযুগ নয়, বরং হাল আমলের ইতিহাসও এই ধারার সমর্থন করে। বাঙালি মুসলিম সাহিত্যের উত্থানের কাল সূচনা হয়েছিল যাঁদের দ্বারা, অর্থাৎ কাজী নজরুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা, ফররুখ আহমদ উনারা সকলেই ফুরফুরা শরীফের পীর সাহেব হযরত আবু বকর ছিদ্দিকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ও উনার আওলাদগণের মুরীদ ছিলেন।
বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম মুসলিম কবি হচ্ছেন ফররুখ আহমদ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তিনি প্রাথমিক জীবনে মোটেই মুসলিম ভাবধারা লালন করতেন না, বরং বিপরীতটাই করতেন। এ প্রসঙ্গে উনার জীবনীতে উল্লেখিত রয়েছে-
“কলেজে পড়ার সময় প্রথমদিকে তিনি বেশ সৌখিন জীবনযাপন করতেন। ফিনফিনে ধুতি-পাঞ্জাবী ছিল তার প্রিয় পোশাক। সে সময় তিনি মানবেন্দ্রনাথ রায়ের রেডিক্যাল হিউম্যানিজমের প্রতি আকৃষ্ট হন। কিন্তু অচিরেই তাঁর চেতনা জগতে পরিবর্তন আসে। টেইলর হোস্টেলের সুপারিনটেনডেন্ট বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও ফুরফুরা শরীফের পীর সাহেব উনার খলীফা জনাব আবদুল খালেক উনার সাথে দীর্ঘ আলাপের পর ফররুখ আহমদ ইসলামী আদর্শের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ধীরে ধীরে তিনি সম্পূর্ণ বদলে গেলেন। শুধু পোশাক আশাকে নয়, চিন্তা চেতনায়ও হয়ে গেলেন ঈমানদার মুসলমান। (সূত্র: পাকিস্তান আন্দোলন ও বাংলা কবিতা, বাংলা একাডেমী, পৃষ্ঠা ১৪০)


অর্থাৎ যদি ফররুখ আহমদ সঠিক গাইড না পেতেন, তাহলে তিনি আমাদের বিপরীত শিবিরের অন্তর্ভুক্ত হতেন, হতেন ইসলামবিদ্বেষী সাহিত্যিকদের একজন। মুসলিম উম্মাহ যতদিন এই রাহবার বা অভিভাবক তথা পীর-মুর্শিদ উনাদের মুখাপেক্ষী ছিল, ততোদিন তাদের প্রতিভা নিয়ে কোন খরায় পড়তে হয়নি। কারণ তখন মুসলিম সমাজের অভিভাবক ছিল, যাঁরা তাদের প্রতিভাকে বিকশিত করতেন এবং তাদের সন্তানদের উচ্ছনে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতেন।
কিন্তু আজ মুসলমান সমাজ দেওবন্দী-ক্বওমী ও সউদীপন্থী ওহাবী সালাফী লা-মাযহাবীদের প্ররোচনায় পড়ে ওলীআল্লাহ উনাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, যার ফলে মুসলিম বিশ্বে পূর্বের ন্যায় কোনো বিশ্বমানের কবি-সাহিত্যিক-বিজ্ঞানীর দেখা মেলে না। যাদের দেখা মিলছে, তাদের অধিকাংশই ইসলামবিরোধী গোষ্ঠীর ফাঁদে পড়ে উল্টো নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে, কারণ তাদের রাহবার নেই।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here