আহলা দরবার শরীফের সম্মুখস্থ দিঘীটি কুতুবে জমান জনাব কাজী আসাদ আলী সাহেব কেবলা (কঃ)’র ঐতিহাসিক কারামতের সাক্ষী
তৎকালীন সময়ে আহলা দরবার শরীফ এলাকা জ্বিন-পরীদের আখড়া হিসেবে পরিচিত ছিল। ঝোপজঙ্গলের অস্থিত্ব তখনো বিদ্যমান ছিল। কথিত আছে, শেখ মোহাম্মদ গৌরী (ক) এর দোয়ার ফলশ্রুতিতে প্রতি শুক্রবার উক্ত দিঘী থেকে বিভিন্ন মেটালের থালাবাসন ও বিভিন্ন দ্রব্যাদি ভাসত এবং লোকেরা নিজেদের বিয়ে শাদী বিভিন্ন আয়োজনে এসব ব্যবহার করতে পারত। কিন্তু শর্ত ছিল এসব পূনরায় দিঘীতে ফেরত দিতে হবে। একবার জনৈক ব্যক্তি একটি লবনদানী রেখে দিলে জ্বিনেরা (দানব) তাকে মেরেও ফেলে। যাই হোক সময়ের পরিক্রমায় উক্ত দিঘীটি ভয়ানক হয়ে উঠে। কিছু খারাপ দানবের আবাসস্থল হয়ে উঠে উক্ত দিঘীটি। পরিস্থিতি এমন হয়ে যায় যে, এলাকার লোকজন দিঘীর পার্শ্ব দিয়ে হাটতে পর্যন্ত ভয় পেত। সন্ধ্যার পর হলে তো কেউ চলাফেরায় করত না। তাই সকলে জনাব কেবলা (ক) এর করুণাপ্রত্যাশী হলেন। জনাব কেবলার (ক) আমলে অত অঞ্চলের সকল মানুষ জনাব কেবলা (ক) গুণগ্রাহী ছিল, উনাকে ভক্তি-তাযিম করত, কোন সমস্যায় উনার কাছেই ছুটে আসত। এই সমস্যা থেকে সমাধানের জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা জনাব কেবলার কাছে আরজ করলো। জনাব কেবলা উনাদের আরজি কবুল করলেন এবং উনাদের আশ্বস্ত করলেন। জনাব কেবলা (ক) একদিন জযবা হালতে অর্থাৎ ঐশী ভাবে তন্ময় অবস্থায় দিঘীকে নিরাপদ করার জন্য দিঘীতে নেমে পড়েন এবং ডুব দিয়ে গভীরে চলে যান। কয়েকমিনিট যায়, কয়েকঘন্টা যায় কিন্তু জনাব কেবলা (ক) আর উঠে আসেন না। এদিকে দিঘীর পাড়ে থাকা শতশত লোকজন হায়হায় করতে থাকেন, কেউ কেউ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অধিকাংশই এ ধারনায় আফসোস করতে থাকেন, বদজ্বিনেরা বুঝি উনাকে ঘায়েল করে ফেলেছেন। তিনি দীঘিতে অবস্থান কালে হঠাৎ এই দীঘির দক্ষিন পূর্ব পাড় ভেঙ্গে পড়ে যেতে দেখা যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে অনেকেই নিরাশ হয়ে ঘরে ফিরে যান। এভাবে তিনদিন-তিনরাত পর মতান্তরে সাতদিন-সাতরাত পর জনাব কেবলা (ক) দিঘী থেকে উঠে আসেন। সময় যেটায় হোক না কেন কেন, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে এতোক্ষণ পর্যন্ত পানির নিচে থাকা কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নই।
পুরো এলাকায় শোরগোল পড়ে গেল, লোকেরা দলে দলে দরবারে ভিড় করতে লাগল। জনাব কেবলা (ক) জানিয়ে দিলেন -আজ থেকে দিঘী নিরাপদ, বদ জ্বিনদের তাড়িয়ে বের করে দিয়েছি বলে দিঘীর দক্ষিন-পূর্ব কোণের দিকে ইশারা দিলেন। দেখা গেল ঐদিকে ভেঙ্গে মাটি সরে গেছে। অর্থাৎ উনি ঐ দিক দিয়েই ঐসব বদ জ্বিনদের তাড়িয়ে দিয়েছেন। আশ্চর্য ব্যপার হল, এখনো পর্যন্ত ঐ কোণটাই কোন মাটি থাকে না, ভেঙ্গে সরে যায়। যেনো আজো পর্যন্ত ওরা পালাতে আছে। আউলিয়াগণ কারামত প্রদর্শন করেই মানুষদেরকে দ্বীনের পথে পরিচালিত করেন, তাদের হেদায়াত দান করেন।
কেউ কেউ বলেন, আজকাল বহু ডুবিরি অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই অনেক সময় ধরে পানির নিচে অবস্থান করতে সক্ষম। তাহলে জনাব কেবলার কারামতে মাহাত্ম্য কোথায় ? আমরা এ ব্যাপারে বলবো, বর্তমানে যারা ওইভাবে পানির নিচে অবস্থান করতে সক্ষম, তারা বহুদিন যাবৎ অনুশীলন করেই তা সম্ভব করেছেন৷ পক্ষান্তরে, জনাব কেবলা বিনা অনুশীলনেই তা সম্ভব করেছেন। বিনা অনুশীলনে এ রকম করতে পারাটায় হলো কারামত।
দেও-দানব বিতারণের পরে আহলা দরবার শরীফের ঐতিহাসিক বিশাল দীঘিটি সর্বসাধারণের ব্যবহারপযোগ্য হয়। এই ঘটনার পরে জনাব কাজী ছাহেব কেবলা (ক) দিঘীতে কিছু চিনি ছিটিয়ে দিলেন এবং বলেনঃ যে কেউ, যে কোন নিয়তে এই দীঘির পানি পান করলে তার নেক মকসুদ পূরণ হবে। ওলির জবান আল্লাহর বিধান। আর আশ্চর্যের বিষয় হলো, দীঘির পানিতে কোন প্রকার ব্যাকটেরিয়া বা জীবানু নেই। কোন পানিবাহিত রোগেও আক্রান্ত হওয়ার নজির নেই। এ দিঘীর পানিকে সকলের জন্য নেয়ামত হিসেবে ঘোষনা করলেন (আলহামদুলিল্লাহ)
সংক্ষেপিত
আঞ্জুমানে আসাদীয়া নূরীয়া সেহাবীয়া কর্তৃক প্রকাশিত জনাব কেবলা জীবনী থেকে সংগ্রহীত