অনলাইন ডেস্ক

আপাদমস্তক স্বপ্নবাজ মানুষ ছিলেন এ পি জে আবদুল কালাম। ভালোবাসতেন স্বপ্ন দেখতে, আর সেই স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যেতে। স্বপ্ন শুধু নিজে দেখেই ক্ষান্ত হতেন না, ছড়িয়ে দিতেন আগামী প্রজন্মের কাছে। গতকাল সোমবার শিক্ষার্থীদের কাছে স্বপ্নের কথা বলতে বলতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। এই ছবিটি ২০০৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের ম্যানিলায় তোলা। ছবি: এএফপিজনসাধারণের রাষ্ট্রপতি ছিলেন এ পি জে আবদুল কালাম। তাঁর মৃত্যুর খবর তাই নাড়া দিয়েছে ভারতের সাধারণ জনসাধারণকেও। মুম্বাইয়ে এক ট্যাক্সি চালক পত্রিকায় সদ্য প্রয়াত সাবেক এই রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর সংবাদ পড়ছেন। সাধারণের রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বরাবরই অনেক বেশি। তাঁর মৃত্যুর খবরও ভারতের সাধারণ মানুষ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছেন। আজ ভারতের বেশির ভাগ পত্রিকার শিরোনামে ওঠে এসেছে ‘মিসাইলম্যান’খ্যাত সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালামের মৃত্যু সংবাদ।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করতেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও খ্যাতিমান পরমাণুবিজ্ঞানী আবুল পাকির জয়নাল আবেদিন আবদুল কালাম। তাঁদের মনে আলো জ্বালাতে চাইতেন তিনি। জীবনে অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়েছেন এপিজে আবদুল কালাম। জীবন তাঁকে শিখিয়েছে অনেক কিছু। জীবন থেকে নেওয়া সেসব শিক্ষার কথা খুব সহজ করে বলতেন তিনি। কেবল বিজ্ঞান নয়, শিক্ষা, সাহিত্য, স্বাস্থ্য, বিচারব্যবস্থা জীবনের সবকিছু নিয়েই তিনি কথা বলতেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। আর এসব টুকরো টুকরো কথা থেকেই পাওয়া যেত অনেক বড় বড় দর্শন। যা কাজে লাগাতে পারলে জীবনটা বদলানো সম্ভব।

নানা সময় বলা এপিজে আবদুল কালামের এমনই কিছু উক্তি তুলে ধরা হলো এখানে।

নিজেকে একা মনে হলে আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। পৃথিবীটা আমাদের বন্ধু। যারা কাজ করে ও স্বপ্ন দেখে প্রকৃতি তাঁদের সাহায্য করে।

যদি সূর্য হতে চাও তবে সূর্যের মতো নিজেকে পোড়াও।

মানুষের জীবনে প্রতিবন্ধকতা থাকা দরকার। বাধা না থাকলে সফলতা উপভোগ করা যায় না।

জীবন এক কঠিন খেলা। সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠতে পারলেই এ খেলায় জেতা যায়।

তিনজনই পারেন একটি দেশ বা জাতিকে বদলাতে। তাঁরা হলেন, বাবা, মা ও শিক্ষক।

কেউ যখন অসাধারণ হওয়ার জন্য জ্ঞান অর্জন করে তখন সে আসলে আর সবার মতোই সাধারণ হয়ে যায়।

নেতা সমস্যায় ভয় পাবেন না। বরং সমস্যার মোকাবিলা করতে জানবেন। তাঁকে কাজ করতে হবে সততার সঙ্গে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সম্মতি দেওয়া। আমি মনে করি পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে মানুষ অপরাধ করে। অপরাধের জন্য দায়ী সমাজ বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। কিন্তু সেই ব্যবস্থাকে আমরা শাস্তি দিতে পারি না। শাস্তি দিই ব্যবস্থার শিকার মানুষদের।

স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখে যেতে হবে। স্বপ্ন না দেখলে কাজ করা যায় না।

যারা পরিশ্রম করেন সৃষ্টিকর্তা তাঁদের সাহায্য করেন।

স্বপ্নবাজরাই সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারেন।

উন্নত ও নিরাপদ ভারত রেখে যেতে পারলেই পরের প্রজন্ম আমাদের মনে রাখবে।

মন থেকে যারা কাজ করে না তাঁদের জীবন ফাঁপা। সাফল্যের স্বাদ তাঁরা পায় না।

সত্যি হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে যেতে হবে।

কেবল বিশেষ সময়ে নয় সবসময় নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে যেতে হবে।

তরুণদের নতুন চিন্তা করতে হবে, নতুন কিছু ভাবতে হবে, অসম্ভবকে সম্ভব করতে হবে। তবেই তারুণ্যের জয় হবে।

উদার ব্যক্তিরা ধর্মকে ব্যবহার করে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান। কিন্তু সংকীর্ণমনস্করা ধর্মকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

এখন বিজ্ঞান জানতে ইংরেজি জানা দরকার। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি দুই দশকের মধ্যে আমাদের ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা শুরু হবে। আর তখন আমরা জ্ঞানবিজ্ঞানে জাপানিদের মতো এগিয়ে যাব।

সেই ভালো শিক্ষার্থী যে প্রশ্ন করে। প্রশ্ন না করলে কেউ শিখতে পারে না। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে।

যদি আমরা স্বাধীন হতে না পারি কেউ আমাদের শ্রদ্ধা করবে না।

গভীর দুঃখে বা প্রচণ্ড আনন্দে মানুষ কবিতা লেখে

বিজ্ঞান মানুষের জন্য উপহার। ধ্বংসের জন্য বিজ্ঞান নয়।

স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন। স্বপ্ন কাজের অনুপ্রেরণা জোগায়।

আমি সুপুরুষ নই। কিন্তু যখন কেউ বিপদে পড়েন আমি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই। সৌন্দর্য থাকে মানুষের মনে। চেহারায় নয়। এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে।

এবি/টিআর ২৭-৭-২০১৯

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here