মনজুর কাদের

ফেরদৌসী রহমান

গতকাল সোমবার পথচলার ৬০ বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ফেরদৌসী রহমান এর গান দিয়েই শুরু হয় বিটিভির প্রথম গানের অনুষ্ঠান। এর এক দিন পর শুরু করেন ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানটি। ছয় দশকে বিটিভিকে কেমন দেখেছেন, তা জানতে গতকাল দুপুরে শিল্পীর সঙ্গে কথা বলল বিনোদন

চট করে অনেক কথা তো মনে আসে না। তবে অবশ্যই আনন্দের ও গর্বের। একজন শিল্পী হিসেবে দেশের রাষ্ট্রীয় চ্যানেলের সঙ্গে ৬০ বছর ধরে জড়িত থাকা অনেক বড় ব্যাপার। এটার জন্য আল্লাহর কাছে অবশ্যই শোকর জানাচ্ছি। আমার যে দর্শক, শ্রোতা ও ভক্তরা আছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বিটিভির ৬০ বছরে পদার্পণে আমাকেও অনেকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। তাদের অনেকর মতে, বিটিভির জন্মদিন অনেকটা আমারই জন্মদিনের মতো। হয়েছে কি, বিটিভির পথচলা শুরুর দুই দিন পর ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠান শুরু হয়। ওই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সবার কাছে আপা থেকে খালামণি হলাম। এই যেমন মায়ের খালামণি, বাচ্চার খালামণি, নাতি-নাতনিদের কাছেও খালামণি। অনেকটা জাতীয় খালামণি হয়ে গেছি। ওপার বাংলাতেও আমাকে সবাই খালামণি ডাকেন।

ফেরদৌসী রহমান বেশ কিছুদিন ধরে আত্মজীবনী লিখছেন। এখনো লেখার কাজ শেষ হয়নি।
ফেরদৌসী রহমান বেশ কিছুদিন ধরে আত্মজীবনী লিখছেন। এখনো লেখার কাজ শেষ হয়নি।ছবি: সংগৃহীত

 

প্রথম আলো : ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠান তো ভালোই প্রভাব ফেলেছে…

একদম তা–ই। আমার এক ছাত্র আছে আজাদ নামে, সে এখন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকে; ওখানে বাচ্চাদের গান শেখায়, ‘এসো গান শিখি’ নামে একটি স্কুল করেছে। কয়েক বছর আগে সে ঢাকায় এসে আমার সঙ্গে দেখা করেছে। শাড়ি উপহার দিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে বাঙালি বাচ্চারা তো বাংলাদেশের গান খুব একটা পায় না। ইংরেজি গান গায় ইংরেজ স্টাইলে। সেখানে ‘এসো গান শিখি’ নামে স্কুল করা, বাচ্চাদের বাংলা গান শেখানো অনেক বড় ব্যাপার। ব্যাপারটা আমি জানতাম না। আমার ভাতিজি নাশিদ কামাল গিয়েছিল, সে দেশে ফিরে এসে আমাকে বলেছে।

প্রথম আলো : ‘এসো গান শিখি’ তো বিটিভির যাত্রার দুই দিনের মাথায় শুরু হয়…

হ্যাঁ, ২৭ ডিসেম্বর। সে হিসাবে এটাও একটা মাইলফলক। একটা অনুষ্ঠান ৬০ বছর ধরে একটা চ্যানেলে চলছে। আমার তো মনে হয়, যদি আবেদন করা হয়, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও জায়গা পেতে পারে।

ফেরদৌসী রহমান

প্রথম আলো : বিটিভি তো তাহলে এ সুযোগ নিতে পারে!

এটা আসলে বিটিভির করা উচিত। ৬০ বছর ধরে চলতে থাকা একটা অনুষ্ঠানের মধ্যে মিঠু আর মন্টি নামে দুটি চরিত্র মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে, এটা তো কম কথা নয়। বিটিভিরই এটা কৃতিত্ব। এই অনুষ্ঠান ফিরোজা বেগম, খান আতাও কিছুদিন করেছেন। এরপর আবার আমার কাছে ফিরে এসেছে। আমি আবার আশির দশকের দিকে কিছুদিন অসুস্থ ছিলাম। মোস্তফা কামাল সৈয়দসহ আরও কয়েকজন দেখতে এসেছিলেন। আমি তখন বলেছিলাম, কামাল ভাই, অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে আছে, আঞ্জুমান আরাকে দিয়ে চালিয়ে নেন, যত দিন আমি সুস্থ না হই। তিনি একটা কথাই বললেন, ‘এসো গান শিখি করলে ফেরদৌসী রহমানই করবেন। আপনি সুস্থ হয়ে ওঠেন, তারপর আপনিই করবেন।’ এরপর আমি লন্ডন থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে এলাম। তারপর আবার অনুষ্ঠান শুরু করলাম। সম্পর্কে কিন্তু কামাল ভাইয়ের শ্যালিকা হন আঞ্জুমান আরা, তারপরও তিনি অনুষ্ঠান তাঁকে দিয়ে করাননি। আঞ্জুমান আরা মিষ্টি করে কথা বলেন, দেখতেও সুন্দর; আমি কিন্তু মন থেকে বলেছিলাম, খুশি করতে নয়, তারপরও তিনি হ্যাঁ বলেননি। তিনি আমাকে বলেন, ‘আপনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন, কিছুদিন এই অনুষ্ঠান বন্ধ থাকলে কোনো সমস্যা হবে না।’

প্রথম আলো : আপনি তো এখনো এই অনুষ্ঠান করছেন…

এখনো করছি। তবে কিছুদিন আগে বলে দিয়েছি, ‘এসো গান শিখি’ আমার পর নাশিদ কামাল করবে। বিটিভির মহাপরিচালককে বলেছি, তিনি খুশি হয়েছেন। আমাকে বলেছেন, ‘আপা, আপনি যাঁকে বলবেন, তিনিই করবেন এই অনুষ্ঠান। মিঠু আর মন্টি চরিত্রও থাকবে। যেমনটা আছে, সেভাবেই অনুষ্ঠানটা চলছে।’ আমি ভাবলাম, ঠিক আছে, নাশিদ আমার ভাতিজি, ও-ই করুক।

প্রকৌশলী স্বামী রেজাউর রহমানের সঙ্গে সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান
প্রকৌশলী স্বামী রেজাউর রহমানের সঙ্গে সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমানছবি : ফেরদৌসী রহমানের সৌজন্যে

 

প্রথম আলো : বিটিভির একটা অনুষ্ঠান এতটা প্রভাব বিস্তার করেছে, সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে আপনারই ছাত্র একই নামে স্কুল চালু করেছে। এ অনুষ্ঠানের প্রধান মানুষ হিসেবে এটা কতটা গর্বিত করে?

অবশ্যই অনেক গর্বের। এটা আমার জন্য যেমন গর্বের, তেমনি বিটিভির জন্যও। আজাদ আমার কাছে গান শিখেছে কিন্তু এই নামে না করে অন্য নামেও তো করতে পারত। কিন্তু এই নামই সে বেছে নিয়েছে ফেরদৌসী রহমান আর বিটিভির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। আমাকে অনুষ্ঠানের ট্রেলারও পাঠিয়েছিল। দেখে মুগ্ধ হয়েছি। গর্বিতও হয়েছি।

প্রথম আলো : সময়ের সঙ্গে দেশ–বিদেশের আরও অনেক টেলিভিশন চ্যানেল দেখছেন। বিটিভি সময়ের সঙ্গে কতটা এগিয়েছে বলে মনে করছেন?

অবশ্যই বিটিভি এগিয়েছে। আমি ওদের সঙ্গে জড়িত লাস্ট কয়েক মাস আগে পর্যন্ত ছিলাম। তবে ও রকমভাবে বলতে গেলে, উল্লেখ করার মতো এগিয়েছে, তা বলতে পারব না। তারপরও ঠিক আছে। যত ভালো প্রযোজক আসবে, ততই বিটিভি ভালো করার কথা। আমাদের সময় যে ধরনের অসাধারণ সব প্রযোজক পেয়েছিলাম, এখন সেই অর্থে অতটা নেই।

মা লুৎফুন্নেসা আব্বাসের সঙ্গে মেয়ে ফেরদৌসী রহমান
মা লুৎফুন্নেসা আব্বাসের সঙ্গে মেয়ে ফেরদৌসী রহমানছবি : সংগৃহীত

 

প্রথম আলো : এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে আসা যাক। কী করে সময় কাটে এখন?

আমি অনেক দিন ধরে একটা বই লিখছি। সেটার পুরো কাজ এখনো শেষ করতে পারিনি। বইটার কাজ শেষ করে যেতে পারলে বাঁচি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here