মো.তাজুল ইসলাম রাজু
প্রকাশ-২০/০১/২০২১

এবার অন্যরকম ৭মাঘ। একদিকে স্রষ্টার আরাধনায় পরম প্রাপ্তিতে মুর্শিদ বন্দনা, অন্যদিকে ওফাত শতবার্ষিকীকে পরম তৃপ্তিতে গ্রহণ করা। রয়েছে বৈশ্বিক মহামারী করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আর জন সমাগম এড়িয়ে চলা। তাই এবারের ৭মাঘ সকল নবী অলি প্রেমিকদের এক অন্যরকম উৎসব হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এবারের ৭মাঘ। কারণ ৭মাঘ মানে চরণদ্বীপ এলাকায় ঈদের আমেজ, খুশির আমেজ এবং ¯্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির নেয়ামতের শোকরিয়া আদায়ের আমেজ।

বোয়ালখালীর একটি আলোকিত এলাকা চরণদ্বীপ। কর্ণফুলীর কোলে প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অপূর্ব চিত্র এই এলাকাকে ঘিরে রেখেছে নান্দনিকভাবে। এদিন চরণদ্বীপ দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা শাহসুফি শেখ অছিয়র রহমান ফারুকী (ক.) এর জন্মদিন ও বেলায়ত বার্ষিকী।

এ গ্রামেই আজ থেকে ১৬৯বছর পূর্বে ১২৭০ হিজরী মােতাবেক ১২৫৯ বাংলার ৭মাঘ ১৮৫২ ইংরেজীর ২১ জানুয়ারী বুধবার শুভ জন্মগ্রহণ করেন জন্মগ্রহণ করেন মহান সৃষ্টার মহিমান্বিত পরশে সৃষ্টিজন হযরত শেখ অছিয়র রহমান ফারুকী (ক.)। তাঁর শ্রদ্ধাস্পদ পিতার নাম শেখ মােহাম্মদ মাজম ফারুকী এবং স্নেহময়ী মাতার নাম মােছাম্মৎ জয়নাব বিবি। বংশগত শজরা মােতাবেক তিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রা)-এর বংশধারার উত্তরসূরি। এদিনটি চরণদ্বীপবাসী সহ সমগ্র বোয়ালখালীর ইতিহাস ঐতিহ্যকে করেছে সমৃদ্ধ।

একদা তিনি স্বপ্নাদিত হয়ে মাইজভাণ্ডার শরীফ হযরত গাউসুল আযম মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর নিকট গমনপূর্বক গাউসে পাকের খেদমতে শ্রদ্ধাবনত হয়ে নিজকে পরিপূর্ণভাবে সমর্পন করে দেন। মুর্শিদ কেবলার আলমের নির্দেশে তিনি দু’বৎসরকাল সীমাহীন প্রেমপূর্ণ এবাদত ও রেয়াজতের মাধ্যমে পবিত্রতা ও যােগ্যতা হাসিল করে ১৩০০ হিজরী সনে স্বীয় মুর্শিদ সমীপে উপস্থিত হলে তিনি একখানা চাঁদর মােবারক তাঁর আপাদমস্তকে পরায়ে দিয়ে তাঁকে প্রথম খলিফা হিসেবে দায়িত্ব ভার অর্পণ করেন।

মাওলানা শাহ চরণদ্বীপির (ক.) কামালিয়াত সম্পর্কে হযরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী বিভিন্ন মূল্যবান বাণী প্রকাশ বলেন- “তুমি হলে আমার ছিদ্দিকে আকবর। তুমি আমার তরিকার ও গাউসিয়াত ক্ষমতায় সর্ব প্রথম বিশ্বাস স্থাপন করে হযরত আবু বকর ছিদ্দিকের (রাদি) আসন লাভ করেছ।”

আবার হযরত গাউসুল আযম মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভা-ারী (ক.) তাঁর অধিকাংশ খলিফা ও ভক্ত-অনুরক্তদেরকে প্রায়শঃ বলতেন, “আমি মাইজভাণ্ডারে ডুব দিয়ে কর্ণফুলী (কাইছা) নদীর দক্ষিণ তীরে চরণদ্বীপ গ্রামে উঠেছি এবং তথায় একখানা মসজিদ নির্মাণ করেছি। আমার মসজিদে নামাজ পড়লে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে।”

আজ থেকে ১২৯ বছর আগে শাহ চরণদ্বীপি (ক.) তাঁর জন্ম ও বেলায়ত বার্ষিকী উদযাপন শুরু করেন। সে দিন থেকে চরণদ্বীপ এলাকায় আশেক- ভক্ত প্রেমিকের আধ্যাত্মিক মিলন মেলা ঘটে। থাকে ব্যাপক আয়োজনে গ্রামীণ কুটির শিল্প মেলা। যা থেকে স্থানীয়রা সারা বছরের প্রয়োজনীয় গৃহসামগ্রী সংগ্রহ করেন। এতে আশেক ভক্তগণ মাজার জেয়ারত, মিলাদ-মাহফিল, জিকির – আজকারের মাধ্যমে সৃষ্টি হবে ত্বরিকত পন্থিদের অপুর্ব মহাসম্মিলন।

পবিত্র ইসলাম ও ত্বরিকতের গুরুদায়িত্ব পালন ও মানবতার অশেষ কল্যাণ সাধনে সফলকাম হয়ে ১৩২৭ বাংলার ১২ ভাদ্র, ১৯২০ খ্রীষ্টাব্দে ২৯ আগস্ট, ১৩৩৮ হিজরীর ১২ জিলহজ্ব কুতুবুল আকতাব, বিল বেরাছতে গাউসুল আজম মাওলানা শাহসূফী শেখ অছিয়র রহমান আল ফারুকী (ক) ইহ জাগতিক লীলা সংবরণ করে মহান স্রষ্টা আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন করেন।

সে মোতাবেক ২০২০ খ্রীষ্টাব্দ হলো হযরত মাওলানা শাহসুফি শেখ অছিয়র রহমান ফারুকী (রহ.) এর ওফাত শতবার্ষিকীর বছর। এটি উপলক্ষ করে একবছর ধরে ধর্মীয় ভাব গাম্ভির্যে চলে নানা আয়োজন। বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারনে ব্যাপক জনসমাগম করতে না পারার বেশ কিছু কার্যক্রমকে সংকোচন করা হলেও কমতি ছিল না আশেক-ভক্তদের মহান আল্লাহর এ নেয়ামতের শোকরিয়া আদায়ের ক্ষেত্রে। অনেক অনুষ্ঠানই সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আশেকগণ তাঁদের প্রিয় মুনিবকে স্ব-স্ব ভাবে নিজ-নিজ অবস্থান থেকে স্মরণ করে মহান স্রষ্টার নিকট আরাধনায় লিপ্ত ছিল সারা বছর ধরে। আগামী ১২ভাদ্র তাঁর পরিপূর্ণতার অপেক্ষার প্রহরে আছেন আশেক ভক্তগণ।

বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্যরকম জৌলশপূর্ণ অবস্থায় পালিত হবে এবারের ১২৯তম বেলায়ত বার্ষিকী। এ যে শতবর্ষকে আরো নতুন করে পাওয়া এবং স্রষ্টার আরাধনাকে পরম তৃপ্তিতে গ্রহণ করা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here