আবুল ফজল সাইফুল্লাহ
আপত্তি নং ১-
এ গানটি শরীয়ত বিরোধক, তাই এটি বর্জনিয়।
জবাবঃ- কালামটির উপর আপত্তি তোলার আগে রচয়িতার মর্মে জানা আবশ্যক। তিনি মুফতিয়ে আযম রূমিয়ে বাংগাল আল্লামা বজলুল করিম মান্দাকিনি রহঃ। তিনি হযরত আকদস গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী শাহসূফী সৈয়দ আহমদুল্লাহ হযরত আকদাসের কুঃ এর খলিফা। তিনি আপন পীর প্রেমে এত বেশী ফ’না বা বিলীন ছিলেন, তাঁর তুলনাটা ছিল শামছ তাবরিজীর ন্যায় উচ্ছাসিত এশক্ চর্চা। যেমন
★ শামছ তাবরিজ রহঃ বলেনঃ
مراحق ازمی عشق آفریدست
ھمان عشقم اگر مرگم بساید
منم مستی واصل من می عشق
بگوازمی بجز مستی چہ آید
অর্থঃ-
আল্লাহ আমাকে প্রেম সুরা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন
আমার মৃত্যু ও ঐ রকম প্রেম সুরা সৃষ্টি করবে।
আমি একজন পাগল আমার আসল হচ্ছে প্রেম শরাব।
বলতো শরাব হতে মাতলামি ছাড়া কি আসতে পারে!
এ ধারাবাহিকতায় শামছ বলেছেন, আমি এশকে হাকিকীর অনলে বিদগ্ধ, তাই আমার মৃত্যুর পর আমার কবরের মাটিতে উদগত গম দিয়ে যদি রুটি তৈরী করা হয়, আর ঐ রুটির কারিগর আর সুবাস গ্রহণকারী পর্যন্ত এ এশকে হাকীকির প্রভাবে প্রভাবিত হবে। কাজেই হে ইশকের সন্ধানী,,! তুমি যদি আমার কবর জিয়ারতে আস, আমি কূহেতুরের ন্যায় আল্লাহর নুরের দর্শন লাভকারী হেতু ঢোলবাদ্য নিয়ে নিত্য রত হয়ে আসবে। কারন কূহেতুর পাহাড়ের জন্য আল্লাহর নূর দর্শন লাভের মূহুর্তটি অতি মূল্যবান ছিল, তাই তার আনন্দে পাহাড় নৃত্যরত ছিল।
زخاک من اگر گندم براید
ازآن گر نان پزی مستی فزاید
خمیر ونانبا دیوانہ گردد
تنورش یبت مستانہ سراید
اگربر گور من آبی زیارت
تراخر پشتمام رقصان نماید
میاب دف بگور من برادر
کہ در بزم خدا غمگیں نشاید
অর্থঃ-
“আমার কবরের মাটিতে যদি গম উদগত হয়
ওটা দিয়ে যদি রুটি তৈরী করে তাহলে ওটাতে পাগলামি পাকিয়ে উঠবে।
খামির ও রুটি তৈরি কারক দিওয়ানা হয়ে যাবে।
তুমি যদি আমার কবর যিয়ারতে আস,
আমি হাতজড়ো করে অনুরোধ করছি তুমি নৃত্য করতে থেকো।
আমার কবরে তোমরা ঢোল ছাড়া আসিওনা।”
★হযরত খাজা কুতবুদ্দিন বখতিয়ার কাকী রঃ এর ইন্তেকালের বর্ণনা মর্মে বর্নিত আছে যে, হযরত রঃ ভাবাম্বিত হয়ে পূর্নোচ্চাসে নৃত্যরত হলেন। প্রতি লাফে দশহাত উর্দ্ধগামী হয়ে নিম্নাবতরন করছেন।রাতব্যাপি এমন হালে সামায় বিভোর ছিলেন, নামাজের সময় নামাজ সমাপনান্তে পুনরায় সামায় মশগুল হতেন। তিনদিন পর্যন্ত এ অবস্থায় ছিলেন ।তাঁর প্রতি লোমকূপ হতে আল্লাহর ইসমেজাতের জিকির শুনা যায় এবং লোমকূপ হতে রক্ত বিগলিত হতে শুরু হলো। প্রত্যেক রক্তের ফোটা মাটিতে পড়ে আল্লাহর নাম নকসা হতে লাগলো এবং সে নক্সা হতে হৃদয় বিদারক মহামম্বিত আল্লাহু ধ্বনি উঠতে লাগলো। ২য় দিন প্রত্যেক লোমকূপ হতে সোবহানাল্লাহ ধ্বনি কর্ণগোচর হলো এমনকি প্রতি ফোটা রক্ত থেকে এ আওয়াজ আসতে লাগলো। এ অবস্থায় নামাজ তরক হয়নি। দিবারাত সামায় লিপ্ত ছিলেন, গায়ক প্রগোক্ত ( বর্ণনায়) গানটির প্রথমাংশ গাইল হযরত পূনজীবিত হয়ে উঠলেন,
وقت چاشت چھاردھم ماہ ربیع الاول منہ جمس ثلثین وستماٸہ کہ قوالا نرا از خواندن مصرع ثانی ان باشارتے منع فرمود نعرہ بزد وجان عزیز بجانان تسلیم نمودار
সন ৬৩৫ হিজরী ১৪ রবিঃআউঃ চাস্তের সময় গায়কগণকে গানের দ্বিতীয় লাইন পাঠ করতে ইশারায় নিষেধ করে প্রেমোচ্ছাসের একটি শ্লোগান দিয়ে নিজ প্রাণ প্রাণেশ্বরের কাছে হাওলা করলেন। ইন্নালিল্লাহে,,,
সিয়ারুল আকতাব গ্রন্থের ১৫৯/১৬০ পৃ
মওলানা মান্দাকিনি রহঃ এর এমন অভিব্যক্তি যা বর্নিত আদিম সুফীদের ন্যায় ইশকে হাকিকির দৃষ্টান্ত।কারন এমন প্রেমিক গনের উপর হড়কহস্থ যুগে যুগে জুলুম বলে সাব্যস্ত ছিল। আশেকদের এমন মিল্লাত মাজহাবের সাথে প্রচলিত মোল্লাবাদীর কোন সম্পর্ক নেই।তাই মওলানা রুমি বলেন,
ملت عشق ازہمہ ملت جداست
عاشقان را ملت و مذھب خداست
প্রেমের ধর্ম সকল ধর্ম হতে পৃথক, খোদা তায়ালাই প্রেমিকের ধর্ম।
এরপরও যদি কেউ না বুজে তা হাফেজ সিরাজির ভাষায় বলবো,
زاھد ظاھر پرست از حالف ما آگاہ نیست
স্থুল জ্ঞানের অধিকারীরা আমার অবস্থামর্মে অবগত নন
মানুষের বাহ্যিক ইন্দিয় সমুহ দুর্ভল হেতু স্থুল জ্ঞান নেহাত অসম্পূর্ণ ও অগভীর। তাদের উপলব্ধি ক্ষমতা তুলনার ক্ষেত্র ও পাত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কাজেই এসব বিচারের সুযোগ নেই। মওলানা রূমী রহঃ বলেন,
چونکہ ظاھر ھا گرفتند احمقاں
آں در دقاٸق شد ازیشاں بس نھاں
“আহমকের দল যেহেতু বাহ্যিক ও স্থুলকে আকড়ে রয়েছে, তাই অসংখ্য সূক্ষ বাস্তব তথ্য তাদের সন্মু অনাবিষ্কৃত রয়েছে”
তাই উল্লেখিত কালাম ” আমার মরণ কালে ঢোল বেলা বাজাইও ” বিষয়টি সর্বসাধারনের জন্য প্রযোজ্য নাহলে ও তা এক শতাংশ ও গলদ নয়। এটি কুফুরী বলে ফতোয়া হাঁকা নিতান্ত অজ্ঞতা ও জুলুম।
আপত্তি নং ২-“
বিশেষ মুহুর্তে কতেক সূফীগনের সা’মা আসক্তি শরীয়ত বর্জিত “
জবাবঃ-তাসাউফে ইসলামি শরীয়তের মৌলনীতি। তাই এ রীতির অনুসারীগণ অবস্থার প্রেক্ষিতে যেখানে যেভাবে ত্যাগের প্রয়োজন, সেভাবে আত্মত্যাগ করে দ্বীনকে হেফাজত করেছেন। যেখানে যুদ্ধের প্রয়োজন সেখানে জিহাদ করেছেন, যেখানে শাহাদতের প্রয়োজন সেখানে শাহাদত হয়েছেন। শুধু মাত্র খানকা দায়রায় কখনো নিজকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। ধর্ম মূলধারা আজ অবধি জারি আজে সূফীয়াকেরাম গণের অবদানে।হযরত খাজা গরীব নেওয়াজ, শাহ জালাল, শাহ পরান সহ বার আউলিয়া রাদ্বিঃ গণ তারই প্রমান।
প্রিয় নবী সঃ এর সময় কাল থেকে প্রকৃতিগত ভাবে সূফীদের মধ্যে দুটি ধারা বিদ্যমান ছিল। যদিও পরবর্তীতে আওলিয়ায়ে কেরামগণ স্তরগত ভাবে বিভিন্ন প্রকার পরিলক্ষিত। তা হলো সালেক বা যারা সূলুকিয়াত বা স্বভাবিক শান্ত শরীয়ত আদৃষ্ট, অপরটি হল জ্জজবপন্থি ভাববিভোর শরাশরীয়তের শৃংখল মুক্ত। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে পাকের মধ্যে এর বিশদ বর্ণনা রয়েছে।
এ প্রকারদ্বয়ের মধ্যে জ্জজব বা ভাববিভোর চিত্তের মজ্জুব গণ শরাশৃংখল মুক্ত। যেহেতু মজ্জুব গণ আল্লাহর বিধান অনুমোদিত সৃষ্টিভুক্ত , তাই শরাশরীয়তের শিকলে তাদের হস্তপদ বন্ধি করণ রীতিতে তাঁদের উপর খড়কহস্থ চরম অন্যায় ও সীমালঙ্ঘন। এমন দৃষ্টান্ত সূফীবাদে ইতিহাসে অসংখ্য।পবিত্র কুরানে সূরাঃ আল-মাআরিজ [70:23]
ٱلَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَاتِهِمْ دَآئِمُونَ
আল্লাযীনা হুম ‘আলা-সালা-তিহিম দাইমূন।
যারা তাদের নামাযে সার্বক্ষণিক কায়েম থাকে।
এমন আয়াত সমূহের আলোকে একশ্রেণীর আওলিয়া সূফী গন রছমি ইবাদত নয়, দায়েমী(সার্বক্ষণিক) নামাজ রোজায় থাকেন। অবস্থা পরিদৃষ্টে এরা খেলাফে শরা মনে হলেও তাঁরা আছলি শরার বিরোধী নন। পবিত্র কুরআনের বাণী انزل من السماءماء فسالت اودیة بقدرها
প্রত্যেক নবী রাসুল অলী আবদাল গণ পাত্রের আপন যোগ্যতানুসারে মারফত ধারন করতে সামর্থ্য হন।ইবাদত হলো রূহের আহার্যসামগ্রী। কতেক আউলিয়া ইবাদতে মাশরুয়াহ এর ইবাদত বন্দেগীতে (নামাজ রোজা) যখন পরিতিপ্ত নন, তখন এ প্রকার সূফীগণ সা’মার প্রতি আসক্ত হন। কারন সামা হলো আল্লাহর প্রেমের আগুন, জজবাহ্, আত্মার আহার্য সামগ্রী, কতেক সূফীগণের আত্মার পরিতিপ্তির জন্য অপরাপর ইবাদের চেয়ে সা’মায় পরিতুষ্ট। এমর্মে বিশ্ব বিখ্যাত সুফী আওলিয়া, দরবেশ গণের করেকটি তাত্মিক উক্তি
বিজ্ঞ পাঠক মহলের খেদমতে পেশকরা হলোঃ-
হযরত পিরানপীর দস্তগির মাহবুবে সোবহানী গাউসুল আযম দস্তগীর রহঃ রিসালায়ে গাউসিয়ার মধ্য বলেন,
میں نے تمام ارواح کو دیکھا کہ اپنے اپنے قالبوں میں الست بربکم سن کر وجد کر رہی ہیں
আমি রূহ জগতে সকল রূহ সমূহকে দেখেছি যখন বান্দাহ আল্লাহকে অংগিকার দেয়ার সময় আল্লাহ বলেছিলেন, আমি কী তোমার প্রভু নই,,! একথা শুনা মাত্র সকল রূহ নৃত্যরত হয়।
# হযরত মীর আব্দুল ওয়াহিদ বালগিরামী রহঃ বলেন,,,,,,,,
السّماع جذبة من جذبات الحقِّ سمّاع
সামা হলো আল্লাহর প্রেমের জ্জজবা সমুহের একটি জ্জজবা,,,
সূত্রঃ সবায়্ সানাবিল পৃঃ ৩৬৪
তিনি আরো বলেন,
ক্ষেত্রবিশেষে সা’মা (কখনো নফল) নামাজ থেকে ও উত্তম।
সূত্রঃ-সাবয়া সানাবিল পৃঃ৩৬৪
#হযরত খাজা ওসমান হাুরুনি রহ বলেন,
سماعت سریست از اسرار الھی
“অর্থঃ-“সামা আল্লাহ তায়ালার রহস্যাদির একটি রহস্য মাত্র”
সূত্রঃ সিয়ারুল আকতাব,পৃঃ ৯২
সা’মা শ্রবণ কখনো (সূফীদের জন্য নফল) নামাজ থেকে উত্তম,,,
#হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রঃ বলেন,
السماع فی اوقات السرور تاکیداللسرور و تهیجا له وهو مباح إن کان ذالک السرور مباحا کان الغناء فی ایام العید وفی العرس وفی وقت وقت قدوم الغاٸب ٖٖالخ …..
অর্থঃ-আনন্দ উৎসব সমূহে সামা আনন্দ উৎসাহকে বর্ধিত করে।যদি আনন্দ উৎসব মোবাহ হয় তবে সামা ও মোবাহ হবে।যথা ঈদের দিন,উরছে ও বাড়ীতে বহুদিন পর শুভাগমনের দিন,,,
সূত্রঃএহইয়ায়ুল উলুম ২খন্ডপৃ ২৪৫
# সা’মা আল্লাহ তায়ালার তাজাল্লি মর্মে হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ বলেন,
السماع من احب الله وعشقه واشتاق الی لقاٸه فلا ینظر الی شٸ الاّ راه فیه سبحانه ولا یقدع سمعه قارع الاّ سمعه منه او فیه فالسماع فی حقه مهیّج لشوقه و مٶکد لعشقه وحبه ومورّ زناد قلبه ومستخرج منه احوالا من المکاشفات الخ …..
ঐ সকল প্রেমিকগনের সামা, যারা আল্লাহ তায়ালার উপর আশেক হয়েছেন,এবং তাঁর দিদারের নিমিত্তে আকাঙ্খিত আল্লাহর নূরে তাজাল্লিয়াত ব্যতীত কোন কোন বস্তুতে কিছুই দেখেনা।আল্লাহ ও তাঁর বিষয়াবলীর আওয়াজ ব্যতীত অন্যকিছু শুনেনা। ছামা তাদের উৎসাহদাতা ও তাঁদের প্রেম বৃদ্ধিকারী এবং ইহা তাঁদের আত্নার আলোকরশ্মি,ইহাতে মুকাশাফা দিব্যদৃষ্টি ও আল্লাহর অনুগ্রহ প্রকাশ পায়।
সূত্রঃ এহইয়ায়ুল উলুম ২ খন্ড২৪৬পৃ
সা’মা সম্পর্কিয় আকাবের বড় বড় আওলিয়া কেরাম সূফীগণে এমন অনুভুতির শুনে বিষয়টি গুরুত্বটা সহজে অনুমেয়।
সা’মা শ্রবণ একটি উচ্ছ মার্গের তাজ্জালি সূফীগণ আস্বাদন করেন,সে ক্ষেত্রে দেখাদেখি কিছু রছমি ইবাদতের প্রতি তাঁরা আকর্ষন হারিয়ে, শরা শরীয়তে সীমাবদ্ধতা উপেক্ষা করে লাহুতি হাহুতি চরম আকর্ষন অনুভব করেন। তখন নাসুতি নীতিবিধান গুরুত্ববহটা কমে যায়। তাই কে কি বলবে তা ভ্রূক্ষেপর ফুরসত তাদের হয়না। সূফীদের এমন একটি অবস্থা ফনা বকার মাধ্যমে “কুরবাত” “মা’য়ইয়াত” এ তাদের আবাস।এ ক্ষেত্রে তাদেরকে শরীয়তের হুট লাগিয়ে নিম্নদিক টেনে ধরলে হযরত হুসাইন ইবনে মানসুর খাল্লাজ রহঃ এর ন্যায় শাহাদতের পর তাদের অগ্নি দগ্ধ করলেও দগ্ধিত ছাই থেকে “আনাল হক্ক আনাল হক্ক” এর ধ্বনি উচ্ছারিত হয়। এমন মাজ্জুবকে শরীয়তে কাটগড়ায় দাঁড় করনো আল্লাহর বিধানে বিরোধী অবস্থানের নামান্তর ও আল্লাহর দোষমনে অন্তর্ভুক্ত হওয়া। কারন হাদিস শরীফের বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর অলির সাথে দোষমনি পোষণ করে আল্লাহ তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।(বুখারী শরীফ)
এমন নিরেট আল্লাহ প্রেমের আকর্ষনের নাম সা’মা। এমন অবস্থা বিরাজন মজ্জুবগন দুনিয়া বিমুখ সাহেবুল কাশফ জীর্ণশীর্ন লেবাসে মুসতাজিব্বুদ্ দাওয়াত হন। এমন কতেক ভাববিভোর মজ্জুবগণের এশকে ইলাহীর প্রতি চরম আকর্ষণের মুহুর্তকে শরীয়ত বর্জনের টানাপোড়নে অন্তভুক্তি করণ মোল্লামুন্সির জন্য দূর্ভাগ্যের কারণ।
আপত্তিঃ-৩”
“কলেমা কালাম ভাই,এসব কিছুর দরকার নাই,গাওছ ধনের গুনগীতি গাইও”
এ পংক্তিতে কলেমাকে অস্বীকার ও পীরের নাম কলেমার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেনা, কাজেই অগ্রহণীয়।
জবাবঃ- বিজ্ঞ পাঠক!
কলেমাকে অস্বিকারের অভিযোগটি এখানে অবান্তর, কারন পংক্তির শেষার্ধে তিনি “গাউস ধনের গুণগীতি গাইও” অংশে তা তিনি কলেমার হাকীকতকে অবশ্য স্বীকার করেছেন।
এখানে কলমা দ্বারা যা বুঝিয়েছেন তা হলো, আমাদের দেশে রীতিগত একটি প্রথা হলো, মানুষ যখন ছাকরাত বা মৃত্যু কষ্ট আরম্ভ হয়, তখন পরিবার আত্মীয় স্বজন মূমুর্ষের পাশে দাড়িয়ে হৈ হোল্লা করে। কেউ বলে এমন কর, তেমন কর, কেউ বলে উচ্ছস্বরে কলেমা তালকিন কর, এমন অনেক কথা প্রচলিত দেখা যায়। এমন একটি পরিস্থিতি একজন মূমুর্ষের জন্য খুবই কষ্টকর। যদি মূমুর্ষ ব্যক্তি মুমিন হন তাহলে এহেন মুহুর্ত তিনি আপন পীর মুর্শীদের তাছাব্বুরে শাইখের মাধ্যমে প্রিয় মাহবুব নবী সঃ এর দর্শনকে মুশাহাদা করেন। এ পর্যায়ের একজন মুমিনের ইন্তেকালের মূমুর্ষ সময়ে যদি কেউ তাঁকে কলেমা শিখানোর নামে কর্ণকুহরে শোরগোলে লিপ্ত হয়, অবশ্যই সেটি সে ব্যক্তি ধ্যান ভংগ ও মুশাহাদা ব্যাহত হওয়ার কারণ। কারন হাদিস শরীফের বর্ণনায় এসেছে, মুমিমের প্রাণ হননের যন্ত্রনা মর্মে নবীজি সঃ মালেকুলমউত আঃ কে জিজ্ঞেস করলে মালেকুলমউত হযরত আজরাইল আঃ বলেছেন যে, আপনার উম্মতের রূহ কবজ করা হবে এভাবে, যেভাবে ঘুমন্ত শিশুর মূখ থেকে মায়ের স্তনের বোটা নেয়ার সময় শিশুর কোন অনুভুতির থাকেনা, সেভাবেই আপনার মুমিন উম্মতের রূহ কে কবজ করা হবে। তাই মুমিনের ইন্তেকালের মরজে মওতে হই হোল্লা না করাই শ্রেয়, এতে সে ব্যক্তির মুশাহাদার ব্যাঘাত হয়।
গাউস ধনের নাম ও কলেমার হাকীক প্রসংগঃ-
মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী,,,
সূরাঃ আল-আহযাব [33:21]
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ ٱللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
“তাদের জন্যে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে”
এ আয়াত মর্মে উম্মুহাতুল মুমিনিন আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেনঃ,,,کان قرانا یمشی بین الناس
“মানুষের মধ্যে চলমান কোরান”
বলে তা স্পষ্ট করেন যে,উসওাতু হাসনা ইনসানে কামেলের বৈশিষ্ট্য।
প্রিয় নবী সঃ ইনসানে কামেল এর মডেল। তাঁর অনুসরনে কালের পরিক্রমায় ইনসানে কামেলগণ বিবর্তিত।
(সূত্রঃ আল ইনসানুল কালেম ভুমিকা দ্রঃ পৃঃ ৫)
গাউসে পাক শাইখ আব্দুল কাদের জিলানী রঃ কসিদায়ে খামরিয়ার মধ্যে বলেন,
وسّری فی العلی بنور محمد
فکنّا سر الله قبل النبوة
انا کنت فی العلی بنور محمد
وفی قاب قوسین اجتمع الا حبیة
অর্থঃ-আমার রহস্যালোক সৃষ্টিপূর্বে নুরে মুহাম্মদির সাথে ছিল, আল্লার গুপ্ত রহস্য আমি নবুয়তের পূর্বে অবস্থান করেছি। কাবা কাউসাইনের মিলনে ছিলাম
সূত্রঃ মাজহারে জামালে মোস্তফা
শাইখ আব্দুল করিম জিলী রঃ বলেন,হাকিকতে মুহাম্মাদী সঃ ইনসানে কামেলের মৌল সত্বা। ইহার উপর ভিত্তি কর সৃষ্টির আদি অন্ত প্রাণবন্ত। ইহা যুগে কালে অভিন্ন সত্বাই হন। এ সত্বাকে কেউ কুতুবে জামান, কুতুবে দাওর বা গাউসুল আযম ইত্যাদি বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করেন। উলুল আযম নবী আঃ গণ যেমনি হাকিকতে হাকিকতে মুহাম্মদী সঃ এর ধারক হওয়া সত্ত্বেও মর্যদাগত তারতম্যে বিভিন্ন মর্যাদার আধিকারী, অনুরূপ পোষাকের ভিন্নতার কারণে তাঁরা ভিন্ন পরিচয়ে পরিচিত হন। কিন্তু সকল পরিচয় হলো হকীকতে মুহাম্মদি (সঃ)। তাঁর আসল পরিচয়ে শাইখ জিলী রহঃ বলেন, তাঁর নাম মুহাম্মদ কুনিয়াত আবুল কাশেম, তাঁর ওয়াসফ হলো আব্দুল্লাহ লকব শামছুদ্দিন। শাইখ জিলী রঃ বলেন…
فقد اجتمعت به صلی الله علیه وسلم وهو فی صورة شیخی الشیخ شرف الدین اسماعیل الجبروتی ولست اعلم أنه النبی صلی الله علیه وسلم وکنت اعلم انه الشیخ ؛
আমি নবী সঃ এর সাক্ষাত পেয়েছি তাঁকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে বটে, তবে আমার পীর শামফুদ্দিন ইসমাইল জাবরুতির এর পোষাকে বা সুরাতে।আমি জানিনা তিনি নবী সঃ, তবে আমি জানতাম তিনি আমার শাইখ বা পীর।
সূত্রঃআল ইনসানুল কামিল ২খ,পৃ ২২৯
শাইখ জিলী রঃ এরূপ আরেকটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে বলেন…
الاؔ تراه صلی الله علیه وسلم لما ظهر فی صورة الشبلی رضی الله عنه قال الشبلی لتلمیذه أشهد أنی رسول الله وکان التلمیذ صاحب کشف فعرفه ؛ فقال؛أشهد انک رسول الله؛
তুমি কী নবীব সঃ কে হযরত শাইখ শিবলীর অবয়বে দেখনি,,! যখন শাইখ শিবলী রঃ তাঁর এক মুরিদকে বলেছিলেন, সাক্ষী দাও! আমি রাসুলাল্লাহ। আর এ শির্ষ্য ছিল দিব্য দৃষ্টি সম্পন্ন। তিনি তাকে চিনতে পেরে সাক্ষী দিলেন, নিশ্চয় আপনি রাসুলাল্লাহ।
সূত্রঃ আল ইনসানুল কামিল ২খ:পৃ ২২৯
হযরত মীর সৈয়দ আব্দুল ওয়াহেদ বলগেরামী রঃ এরকম একটি ঘটনা বর্ণনা করেন,
ایک شخص بیعت کے ارادے سےایا۔ خواجہ کےقدمو پر اپنا سر رکھا اور عرض کیا کہ بیعت کے لیے خاضر ہوا ھوں ۔ خواجہ پر کیفیت طاری تھی فرمایا کہ اگر تم کھو لاء الہ الا اللہ چشتی رسول اللہ تو میں تمھیں مرید کر لوں الخ۔۔۔۔
এক ব্যক্তি বাইয়াত গ্রহণের মানসে আসলো, খাজা রহ কদমে মাথানত করে তাকে বাইয়াত দানের আরজ করলো। এমন অবস্থায় খাজা রঃ বিশেষ হালে বিরাজিতকালিন বল্লেন, তুমি যদি আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই, চিশতি আল্লাহর রাসুল “এমন কলেমাটি পড়তে পারো আমি তোমাকে বাইয়াত দিতে পারি। ঐ ব্যক্তির অধ্যবসা ছিল বিধায় তাড়িৎ সে কলেমটা পড়ে নেন। এবং খাজা তাকে বাইয়াত প্রদানে হস্ত সম্প্রসারণ করেন।
সূত্রঃ সাবয়ে সানাবিল পৃ-২২৬
বাহরুল উলুম সৈয়দ আব্দুল গনি কাঞ্চনপুরী রহ. বলেন; হাকিকতে নুরে মুহাম্মদি সঃ যা নবী সঃ হতে গাউসুল ওয়াক্তের নিকট স্থানান্তরিত হয়। যা পর্যায়ক্রমে ইনসানে কামেল রূপি কুতুবে দাওর, গাউসুল ওয়াক্ত বা কুতুবুল আক্তাব ও গাউসুল আযমের এর মাধ্যমে জগতের অলীয়ূল্লাহ গণ তা অর্জনে সমর্থ হন।
(সূত্রঃ আয়নায়ে বারী – ৩৭ পৃ)
হযরত মওলানা বজলুল করিম মন্দাকিনি রহঃ এর শাইখ গাউসুল আযম শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ হযরত আকদাস মাইজভাণ্ডারী ক. কয়েকটি বাণীতে এরকম হাকীকতে মুহাম্মদীর ওয়াজুদের ইংগিত বহ,যেমন,
★রাসুলাল্লাহ এর সাথে বেয়াদবি করায় তাড়িয়ে দিয়েছি
★রাসুলাল্লাহর নাতীদ্বয় হাসনাইনের সাথে আদব কর
★ আমি হাশরের দিন প্রথম বলিব লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু… ইত্যাদি
সূত্রঃ বেলায়তে মোতলাকাহ পৃ ৯৯/৯৭
সাতগাছিয়া দরবার শরীফের এক মজ্জুবে সালেক সৈয়দ আবুল ফদ্বল মুহাম্মদ ইউনুস বাবা সুলতানপুরী রঃ কখনো হাল জজ্জবা গালেব পূর্ণ অবস্থায় ” আমি মুরসাল নবী,
★আবার কখনো নিজের নামে কলেমা শরীফ পাঠ করতেন এভাবে
لا اله الاّ احدی محمد یونس رسول احد
সূত্র – ইতিহাস ও জীবনি গ্রন্থ, সাতগাছিয়া দরবার শরীফ।
উপরোল্লিখিত বাণী ও ঘটনা সমুহের সত্যতা ইমাম রাগেব ইস্পাহানী রহঃ এর “কুতুবিয়াতে কুবরা”এর সংজ্ঞায় সুস্পষ্ট। তিনি বলেন,
وهو باطن نبوة محمد علیه السلام
“কুতুবিয়াত হলো নবী সঃ এর গোপনরূপ”
সূত্রঃ কিতাবুত তারিফাত ১৭৮ পৃ
বিজ্ঞ পাঠক !
অতএব যে বিষয়টি আমি এখানে ফোকাচ করতে চেয়েছি তাহলো, ইনসানে কামেল গণ হাকিকত হলো হাকীকতে মুহাম্মদি সঃ এর ধারক বাহক ওয়াজুদে মুহাম্মদী সঃ। কাজেই আপন পীরমুর্শীদ যখন হাকীকতে মুহাম্মদির ধারক হয়, তখন কলেমার মুল বিষয়টি পীর মুর্শীদের নামেই বিরাজমান। কাজেই গান রচয়িতা মুফতি বজলুল করিম মান্দাকিনি রঃ এর পীরমুর্শীদ হযরত আকদস একজন হাকীকতে মুহাম্মদির ধারক ইনসানে কামেল। তিনি স্বীয় পীররে সুরতে হাকীকতে মুহাম্মদি দর্শনে নবী সঃ এর জাতে পেয়েছেন। তাই গাউসে ধনের গুণগান গাইও বলে কলেমার হাকিকত পীরমুর্শীদ এর স্মরণে পেয়েছেন। তাই শ্রী রমেশ সরকার বলেন,”দমে দমে তোমার নাম, রমেশ কয় কলমার কাম, জান্নাতে কি জাহান্নাম তুমি করাইও”।
বুঝার জন্য বড় আলখেল্লার মোল্লা লাগেনা, দয়া হলে শ্রী রমেশের মত ভিন্ন ধর্মী হয়েও বুঝতে পারে।
ওমা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।
মায়াস সালাম।
লেখক- শাহজাদা, সাতগাছিয়া দরবার শরীফ, পটিয়া ,চট্টগ্রাম।