আমাদের বেঙ্গুরা পেইজ-এর সৌজন্যে
এলাকার সার্বিক উন্নয়নের একজন জীবন্ত কিংবদন্তী এবং রুপকার। বেঙ্গুরা গ্রামের জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত যেসব মহান পূণ্যাত্না, দেশপ্রেমিক এবং নিবেদিত প্রাণগণ এলাকায় বিভিন্নমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, পরিচালনা এবং বাস্তবায়ন করেছেন, আনু মিয়া পেশকার তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় বলা চলে।
গ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমৃদ্ধি এবং প্রতিষ্ঠা সবগুলোর সাথে উনার নাম গভীরভাবে সংযুক্ত । কিশোর বয়স থেকে মৃত্যু অবধি উনার পুরো জীবনটাই কেটেছে জনকল্যাণে । পড়ালেখায় ছিলেন খুবই মেধাবী আর পরিশ্রমী। তৎকালীন সময়ে কৃতিত্বের সাথে এনট্রান্স (বর্তমানে এস.এস.সি) পাশে করে এলাকায় সাড়া ফেলে দেন ।
কারণ তখনকার সময়ে একাডেমিক শিক্ষায়-দীক্ষায় এই অর্জন ছিল খুবই বিরল। পরবর্তীতে কর্মজীবন শুরু করেন আদালতের পেশকার হিসেবে । সেই থেকেই উনার জনসেবার সেই মহান কাজের যাত্রা শুরু ।
এলাকার মানুষদের সব ধরণের সহযোগীতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করে গেছেন। সমাজসেবায় উনার অবদানের স্মৃতি এলাকার প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে যুক্ত । কর্মজীবনেও উনি এলাকার উন্নয়নে ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আদালত ভবনে আগত মানুষদের উনি নানাভাবে সহায়তা করতেন। এলাকায় নিজ ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি হিসেবে ছিলো উনার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এবং পরে উনি সারোয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদের ৩বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ্ই সময়ে উনি এলাকার রাস্তাঘাট, বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজ, সামাজিক উন্নয়নসহ নানাবিধ প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেন।
আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবারগুলোকে ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ যথাসময়ে পৌঁছে দিতেন এবং নিজ দায়িত্বে তার তদারকি করতেন।
চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে উনার বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নমূলক কাজ জনমনে দারুণ স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছিল।
শিক্ষানুরাগী হিসেবে উনার অবদান বিশেষভাবে প্রশংসিত এবং অনস্বীকার্য । গ্রামে ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ৩৭ নং বেঙ্গুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বেঙ্গুরা কে.বে.কে আর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে যে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে দুইটারই প্রতিষ্ঠাতা উনি নিজে। এছাড়া এলাকায় নারী শিক্ষা উন্নয়নের পথিকৃৎ ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গুরা কে.বি.কে.আর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েরও প্রতিষ্ঠাতা উনি ।
বর্তমানে বেঙ্গুরা রেল স্টেশন নামে যেখানে রেলগাড়ি সকাল -বিকাল থামে একসময় সেখানে কোন স্টপেজ ছিলো না। উনি শহরে যাওয়ার জন্য বের হয়ে এলাকার মানুষজন নিয়ে রেল লাইনের উপর বসে থাকতেন, তখন রেলগাড়ি আসলে থামানোর পর এর কারন জানতে চাইলে বলতেন, আমার এলাকার উপর দিয়ে যাবে অথচ আমাকে/ আমাদেরকে নিবে না সেটা হবে না। পরবর্তীতে উনি নানামুখী চেষ্টা -তদবির করে বহু শ্রমের বিনিময়ে বেঙ্গুরা রেল স্টেশন করতে সক্ষম হন। এই রেল স্টেশনের কল্যাণে এলাকার এবং আশপাশের মানুষের কতটা কল্যাণ হয়েছে তা একমাত্র এর সুবিধোভোগীরা জানবেন।
নিজ পরিচিতি, গ্রহণযোগ্যতা এবং প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে তৎকালীন সময়ে কৃষি অধিদপ্তর এবং রেলওয়েতে এলাকার এবং এলাকার বাইরের অগণিত মানুষকে চাকরি দিয়েছেন । এর মূল উদ্দেশ্যই ছিল এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং বেকারত্ব হ্রাস। বিনিময়ে উনি কোন প্রতিদান আশা করেন নি।
বিশেষত একসময়কার জনপ্রিয় বলি খেলার আয়োজন করতেন । সবার কাছে যেটা আনু মিয়া পেশকারের বলি খেলা নামে পরিচিত । যেটা প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শুরুতে উদযাপন করা হতো। এর সাথে এলাকার মানুষেদের অনেক স্মৃতি এবং আবেগ জড়িত। অবশ্য বর্তমানে সেই বলি খেলার আয়োজন বন্ধ হয়ে গেছে।
নিজ পরিবারের সন্তানদেরকেও শিক্ষা-দীক্ষায় যথেষ্ট দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন । পরবর্তীতে উনার ছেলেরোও কর্মজীবনে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন ।
বর্তমানে উনার পরবর্তী উত্তরসূরীরা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় সুনাম এবং দক্ষতার সাথে কর্মজীবনে নিয়োজিত আছেন । সমাজ উন্নয়নের রুপকার, স্বপ্নদৃষ্টা কিংবা বাস্তবায়নকারী এই মহান মানুষটি আমৃত্যু উনার কর্তব্যকর্মে ছিলেন অটল। কখনও নিজের গ্রামকে আলাদা করে কোন চিন্তা-ভাবনা করেননি । নিজের প্রতিষ্ঠিত অবস্থানকে সবসময় এলাকার জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সময়ের পরিক্রমায় উনার স্মরণ কিংবা উনার পরিবারের অবস্থান এলাকায় হয়তোবা ফিকে হয়ে এসেছে। কিন্তু কর্মগুণে অনন্তকাল কৃতজ্ঞ মানুষদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী সম্মানের আসনে থাকবেন।
যে মহান পূন্যাত্নাগণকে ঘিরে সমাজের প্রকৃত ভিত্তি গড়ে উঠেছে এবং এখনো স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে তাদের অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এই অবদানের বিপরীতে উনাকে প্রতিদান দেয়ার মতো আমাদের এলাকাবাসীর কিছুই নেই কিংবা সম্ভবও না ।
যেই মানুষটি এলাকায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছেন, নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান ভূমিকা রেখেছেন,
কর্মক্ষম শিক্ষিত জনগোষ্টীকে সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ দিয়েছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন, গৌরবময় ইতিহাস–ঐতিহ্যের সূচনা করেছেন সর্বোপরি সমাজের উন্নয়নে সমৃদ্ধ সামগ্রিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেছেন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষাগত দক্ষতা কিংবা পদ্ধতি আমাদের জানা নেই ।
আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’আলার দরবারে ফরিয়াদ, এলাকার বৈপ্লবিক পবিবর্তনের এই মহান স্থপতি মরহুম জনাব আনু মিয়া পেশকার সাহেবকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন এবং উনার জীবনব্যাপী কর্মকাণ্ডের অর্জিত সওয়াবকে বহুগুণে বাড়িয়ে উনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং এলাকাবাসীকে অধিকতর কৃতজ্ঞচিত্তে এই মহান মানুষটিকে স্মরণ করার সৌভাগ্য নসীব করুন।