মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী

শিশু শ্রেণি থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত তানজিন সুন্নি পড়ালেখা করেছেন সিলেট শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। পড়াশোনার জন্য তাঁকে কখনোই শহরের বাইরে যেতে হয়নি।

নতুন অভিজ্ঞতা যোগ হয়েছে সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর। তানজিনের মতো এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়মিতই উচ্চশিক্ষার জন্য গ্রামে যেতে হয়!

এ বছর এপ্রিল মাস থেকে লিডিং ইউনিভার্সিটির সব শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম সিলেট শহরের উপকণ্ঠের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার রাগীবনগরে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর আগে শহরের মধুবন, রংমহল টাওয়ার ও সুরমা টাওয়ারে এই কার্যক্রম চলছিল।

প্রায় সব ছাত্রছাত্রী তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসে চড়ে শহর থেকে ক্যাম্পাসে যান। গ্রামীণ প্রকৃতি ও পরিবেশ দেখতে দেখতে প্রায় ৪০ মিনিটের যাত্রা বেশ উপভোগ করেন শিক্ষার্থীরা। গত সোম ও মঙ্গলবার আমরাও এই বাসের যাত্রী হলাম। গাইড হিসেবে সঙ্গে ছিলেন প্রথম বর্ষের তানজিন।

২০০১ সালে সিলেটে এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন শিল্পপতি সৈয়দ রাগীব আলী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. কাওছার হাওলাদার জানান, বর্তমানে এখানে চারটি অনুষদের অধীনে ১০টি বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।

প্রোগ্রামিংয়ে এগিয়ে: কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রোগ্রামিংয়ে বেশ ভালো করছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত মাসে অনুষ্ঠিত হলো এসিএম জাতীয় কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। সেখানে শীর্ষ দশে স্থান করে নিয়েছে লিডিং ইউনিভার্সিটি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) পরই ছিল তাদের অবস্থান। এর আগে ২০১৭ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়।

ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীরাও প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় সামনের সারিতে আছেন। গত বছর ন্যাশনাল গার্লস প্রোগ্রামিং কনটেস্টের (এনজিপিসি) শীর্ষ দশে ছিল সিএসই বিভাগের একটি দল।

বিভাগটির ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘প্রোগ্রামিং কনটেস্টে অংশগ্রহণের সম্পূর্ণ ব্যয় বহনসহ বিভিন্নভাবে আমরা ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করি। দক্ষ প্রোগ্রামার ক্যাম্পাসে আসেন, বিভিন্ন কর্মশালা পরিচালনা করেন। এ ছাড়া অন্তবিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় নিয়মিত।’

পড়ি, চাকরিও করি: সিলেট পর্যটনবান্ধব এলাকা হলেও এখানকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট’ বিভাগ ছিল না। বিষয়টি নজরে আসার পর উদ্যোগ নেয় লিডিং ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়েছে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ।

কথা হয় সদ্য সাবেক বিভাগীয় প্রধান মো. ওয়াহিদুজ্জামান খান, নতুন দায়িত্ব নেওয়া বিভাগীয় প্রধান মো. মাহবুবুর রহমানসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। জানা গেল, এই বিভাগের প্রায় ৫০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী চাকরি ও পড়াশোনা—দুটো একসঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন। কথা হয় চতুর্থ বর্ষের মামুনুর, রিয়াসাদ, নিরুপম, দ্বিতীয় বর্ষের ইশরাত, সৌমিক ও প্রথম বর্ষের মাহাদীর সঙ্গে।

চাকরির কারণে ক্লাস মিস হয় কি না, জানতে চাইলে বললেন, শিক্ষকেরাই তাঁদের চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাঁরা এমনভাবে ক্লাস রুটিন তৈরি করেছেন, যেন চাকরি করতে সমস্যা না হয়। অনেকেই চাকরির টাকায় টিউশন ফি দিয়ে বাড়তি টাকা সঞ্চয় করছেন, এটাও শিক্ষার্থীদের জন্য একটা বড় পাওয়া।

পরামর্শ বিনা মূল্যে: পড়াশোনা ও গবেষণার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে জনসাধারণের জন্য বিনা মূল্যে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেয় লিডিং ইউনিভার্সিটির দুটি বিভাগ—স্থাপত্য ও পুরকৌশল। দুই বিভাগের শিক্ষকদের একটি দল স্থাপনার নকশা ও নির্মাণ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে পরামর্শ দেয়।

প্রতি বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার পর যে কেউ চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বিনা মূল্যে এই সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। শিক্ষকদের করা নকশাতেই নির্মিত হয়েছে লিডিং ইউনিভার্সিটির ভবনগুলো। নকশা করেছেন স্থাপত্য বিভাগের উপদেষ্টা স্থপতি চৌধুরী মুশতাক আহমেদ ও বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজন দাশ।

ভবনের মাঝে রাখা হয়েছে আঙিনা। দেয়ালে ব্যবহার করা হয়েছে মুক্ত ইট ও ইটের জালি। দক্ষিণা বাতাস এসে যেন উত্তর দিকে প্রবাহিত হতে পারে, সে ব্যবস্থা রয়েছে। ভবনের আঙিনায় ক্লাসের আগে ও বিরতিতে শিক্ষার্থীরা আড্ডা দেন। এখানেই আয়োজন করা হয় পয়লা বৈশাখসহ নানা উৎসব। সারা বছর ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাব।

ক্যাফেটেরিয়ায় কথা হয় পুরকৌশল বিভাগের আমির হোসেন ও কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের মাহফুজুল হকের সঙ্গে। তাঁরা দুজনই ব্যান্ড কমিউনিটি ক্লাবের সদস্য। জানালেন, এখানকার সব কটি ক্লাবই বেশ সক্রিয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত অথচ মেধাবী, এমন শিক্ষার্থীরা যেন ঝরে না পড়ে, সেদিকে আমরা লক্ষ রাখি। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে, সেভাবেই আমরা তাদের গড়ে তুলতে চাই।

মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী, উপাচার্য, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট।
তথ্যসূত্র: প্রথমআলো ডটকম।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here