প্রতিটি মানুষ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য চায়। প্রতিটি দেশ উন্নতি চায়। আমরা সবাই দারিদ্র্যমুক্ত হতে চাই। উত্তমভাবে রুজি রোজগার করতে চাই। সংকীর্ণ জীবন কেউ আমরা পছন্দ করি না। সুন্দর-সুখী-সমৃদ্ধ জীবন আমরা সবাই কামনা করি। কিন্তু এরপরও আমাদের মাঝে দুঃখ-দারিদ্র্য আছে। সমাজে অভাব আছে। এত উন্নতির দাবি সত্ত্বেও দুনিয়ার বেশিরভাগ মানুষ এখনও দুইবেলা পেট পুরে খেতে পায় না। কোটি বনি আদম খাদ্যের অভাবে, চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। কিন্তু কেন? এর করণ প্রধানত চারটিÑ

আল্লাহর দেওয়া সম্পদ ঠিকমতো কাজে না লাগানো : এ পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় জীবিকার ব্যবস্থা করে রেখেছেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছেÑ ‘আর এতে জীবিকার উপকরণ সংগ্রহ করে দিয়েছি তোমাদের জন্য এবং সেসব (সৃষ্টির জন্য), যাদের রিজিকদাতা তোমরা নও।’ (সূরা হিজর : ২০)। এমনকি গোটা পৃথিবীর সম্পদই আল্লাহ মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেছেনÑ ‘তিনিই সে সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা বাকারা : ২৯)। আমাদের জন্য যে সম্পদের সৃষ্টি, তা যদি আমরা কাজে না লাগাই, বেকার ফেলে রাখি, তাহলে দারিদ্র্য দূর হবে না, সমৃদ্ধি আসবে না। এজন্য আল্লাহর নির্দেশÑ ‘অতঃপর তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করো।’ (সূরা জুমা : ১০)। অতএব সম্পদ সংগ্রহ ও যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমেই মানুষের দারিদ্র্য দূর হতে পারে, সমৃদ্ধি আসতে পারে।

অপচয় : পৃথিবীতে অভাবের অন্যতম কারণ হচ্ছে সম্পদের অপচয়। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পদ অপচয় হচ্ছে। দেশে দেশে অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর কাজে বিপুল সম্পদ বিনষ্ট করা হচ্ছে। এসব অপচয় রোধ করতে না পারলে পৃথিবীর সুখ-সমৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। তাই আল্লাহর স্পষ্ট নির্দেশÑ ‘আর খাও, পান করো, অপচয় করো না।’ (সূরা আরাফ : ৩১)। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় ভোগ ব্যবহার করো; কিন্তু অপচয় করো না। অথচ আজকের পৃথিবীতে একদিকে প্রয়োজনীয় খাওয়া-পরার জন্য সম্পদ পাওয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে অজস্র সম্পদ অহেতুক ভোগ-বিলাস ও ক্ষতিকর-অকল্যাণকর কাজে অপচয় হয়ে যাচ্ছে, বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বৈষম্য : পৃথিবীর অভাব, দারিদ্র্য ও অসচ্ছলতার অন্যতম কারণ সমাজে ধনবৈষম্য। সমাজের কিছু লোকের হাতে, দুনিয়ার কিছু দেশের কাছে পৃথিবীর বেশিরভাগ সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে আছে। এ ধনবৈষম্য দূর না করতে পারলে দারিদ্র্য দূর করা ও সবার জন্য সমৃদ্ধি সম্ভব নয়। তাই অর্থনীতির অন্যতম মূলনীতি হিসেবে ইসলাম ঘোষণা করেছেÑ যাতে সম্পদ যেন তোমাদের ধনীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয় (সূরা হাশর : ৭)। অর্থাৎ ধনসম্পদের সঠিক বণ্টন অপরিহার্য। কেউ খাবে আর কেউ খাবে নাÑ এমন অবস্থা গ্রহণযোগ্য নয়।

বঞ্চিত-বুভুক্ষু মানবতার প্রতি দায়িত্ব পালন না করা, তাদের অধিকার আদায় না করা : আজকের পৃথিবীতে দারিদ্র্য ও অভাব দূর না হওয়ার অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে সচ্ছল শ্রেণি অভাবী শ্রেণির প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করছে না। কারণ হচ্ছে সচ্ছল শ্রেণি অভাবী শ্রেণির যে অধিকার রয়েছে, তা মেনে নিচ্ছে না। অথচ ইসলাম ঘোষণা করেছেÑ ‘তাদের ধনসম্পদে প্রার্থী বঞ্চিত মানুষের অধিকার রয়েছে।’ (সূরা জারিয়া : ১৯)। অর্থাৎ সমাজের সচ্ছল শ্রেণি তাদের ধনসম্পদ শুধু নিজেদের জন্য ব্যবহার করলেই চলবে না, সমাজের অভাবী শ্রেণির প্রয়োজন মেটানোর জন্যও তাদের এগিয়ে আসতে হবে। বস্তুত সম্পদ ঠিকমতো সংগ্রহ ও যথাযথ ব্যবহার, অপচয় রোধ, সুষম ধনবণ্টন এবং বঞ্চিতের অধিকার আদায় ছাড়া অভাব দূর করা সম্ভব নয়, সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। আর প্রকৃতপক্ষে তা সম্ভব হতে পারে ইসলামি নীতি অনুসরণের মাধ্যমে। এজন্য আল্লাহ তায়ালা জানিয়েছেন, ইসলামের যথাযথ অনুসরণ করা হলে মানুষ সুন্দর জীবনযাপনের সুযোগ পাবে। আল্লাহ বলেছেনÑ ‘যে ব্যক্তি সৎকর্ম করবে, সে পুরুষ হোক আর নারী হোক, তাকে পবিত্র জীবনযাপন করাব।’ (সূরা নাহল : ৯৭)।

সমাজের লোকরা যদি ইসলাম বাস্তবায়িত করে, তাহলে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য-সমৃদ্ধির দুয়ার তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আল্লাহপাকের ঘোষণাÑ ‘জনপদের লোকরা যদি ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর বরকত উন্মুক্ত করে দিতাম।’ (সূরা আরাফ : ৯৬)। অর্থাৎ ইসলামই হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সুখের পথ, স্বাচ্ছন্দ্যের পথ, সমৃদ্ধির পথ। ইসলামেই রয়েছে মানবতার, বিশেষ করে মুসলমানদের উন্নতি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও সুখ। তাই সুখ-সমৃদ্ধি ও উন্নতি চাইলে ইসলামকে মেনে নিতে হবে। একে সমাজের সর্বস্তরে যথাযথভাবে কায়েম করতে হবে। অন্য সব তন্ত্র-মন্ত্র-আদর্শ-মতবাদ পরিহার করে ইসলামকেই আঁকড়ে ধরতে হবে। একে পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে।

সূত্র- অনলাইন, এবি/টিআর ২৯-৫-২০১৯

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here