ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভালো, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার আশীর্বাদ-অভিশাপ।

বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার ১০৯, আগা সাদেক রোডে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। ১৯৬৩ সালে রিসালপুর পিএএফ কলেজ থেকে পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন।

এরপর তিনি টি-৩৩ ও এফ-৮৬ জেট প্লেনের উপর কনভার্সন কোর্স সম্পন্ন করেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুর সময় তিনি বাংলদেশ অবস্থানকালে ভৈরবে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি ট্রেনিং ক্যাম্প খোলেন। এরপর মে মাসে কর্মস্থল থেকে জঙ্গিবিমান দখল এবং সেটা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের লক্ষে তিনি করাচি ফিরে যান।

সেখানে বিমানবাহিনীর সেফটি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় রশিদ মিনহাজ নামের একজন শিক্ষানবিশ পাইলটকে অজ্ঞান করে একটি টি-৩৩ জেট প্লেন ছিনতাই করে বাংলাদেশ অভিমুখে রওয়ানা দেন। বিপদবার্তা শত্রুদের কাছে পৌঁছালে আরও চারটা প্লেন মতিউর রহমানকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে মতিউরের সামনের আসনে বসে থাকা মিনহাজের জ্ঞান ফিরে এলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এর ফলে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের খুব কাছে প্লেনটি মিনহাজসহ বিধ্বস্ত হয়, আর নিজ আসন থেকে ছিটকে পড়ে শহীদ হন মতিউর রহমান।

বাংলাদেশ সরকার মতিউর রহমানকে তার সাহসী ভূমিকার জন্য বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে। পাকিস্তান সরকার মতিউর রহমানের মরদেহ করাচির মাসরুর বেসের চতুর্থ শ্রেণীর কবরস্থানে সমাহিত করেছিল।

পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ২৪ জুন মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাকে পূর্ণ মর্যাদায় ২৫ জুন শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে পুনরায় দাফন করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here