ড. মোহাম্মদ সাইফুল আলম
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হির ৩৭তম বংশধর হযরত সৈয়্যদ সদর শাহ রহমাতুল্লাহি আলায়হির ৪র্থ পুত্র আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে; বিশুদ্ধ মতে- ১৮৫৭ সালে পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে হাজারা জেলার সিরিকোট গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালে এ মহাপুরুষ পার্থিব জীবনের ইতি টানেন।
তাঁর পূর্বপুরুষ হযরত সৈয়্যদ গফুর শাহ প্রকাশ কাপুর শাহ সর্বপ্রথম দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে বর্তমান পাকিস্তানের সীমান্ত প্রদেশে সিরিকোট অঞ্চলে আসেন এবং বিজয় ও আবাদ করেন। এ জন্য তাঁকে ফাতিহে সিরিকোট বা সিরিকোট বিজেতা বলা হয়। তিনি ছিলেন হযরত সৈয়্যদ আহমদ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হির ঊর্ধ্বতন ১৪তম পূর্বপুরুষ।
অতি অল্প বয়সে তিনি পবিত্র কুরআন মুখস্থ করেন। অতঃপর স্বদেশে-বিদেশে দ্বীনি শিক্ষার বিভিন্ন সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম বিষয়ে অসাধারণ পান্ডিত্য অর্জন করেন এবং উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন। ১৮৮০ সালে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ‘ফাযিল’ সনদ লাভ করেন।
মহানবীর আর্দশ ছিল তাঁর স্বভাবজাত; তা তাঁর কর্মে অনায়সে ফুটে উঠত। আল্লামা সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর সহোদরদের সাথে সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকাতে ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন ও প্রতিষ্ঠিত হন। একই সাথে আফ্রিকার ক্যাপাটাউন, জাঞ্জিবা ও মোমবাসা শহরে সেখানকার জনগণের মাঝে দ্বীনী দাওয়াত পৌঁছান। এ সময় তিনি শিয়া সম্প্রদায়ের ভ্রান্ত মতবাদ হতে সাধারণ মুসলমানদের আক্বিদা-আমল সংশোধনে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং তাদেরকে সুন্নী-হানাফী মাযহাবে দীতি করেন। তিনি ছিলেন জন্মগতভাবে একজন অলি। তাই এ সকল কাজ ছিল তাঁর চিরাচরিত স্বভাবজাত। সেখানকার ইতিহাসের প্রামাণ্য গ্রন্থ হতে জানা যায় যে, তিনিই সেখানে সর্বপ্রথম মসজিদটি নির্মাণ করেন।
অতঃপর ১৯১২ সালে স্বদেশে ফিরে আসেন এবং হযরত আল্লামা আবদুর রহমান চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হির হাতে ক্বাদিরীয়া ত্বরীকায় বায়আত গ্রহণ করেন। এদিকে আপন পীর-মুরশীদের বাড়ীর সন্নিকটস্থ বাজারে ব্যবসা করতে থাকেন। একই সাথে সময় ও সুযোগ মত নিজ পীর-মুরশীদের খিদমতে নিজকে নিবেদিত করতে থাকেন। সেখানেও একটি মসজিদ নির্মাণে সাহায্য করেন । তাঁর দর্শন হল, কর্ম ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে পীর-মুরশীদের সদয়দৃষ্টি অর্জন করা, কিন্তু তিনি পীরের দরবারে তেমন কোন কাজ হাতে পেলেন না। তাই তিনি কাল বিলম্ব না করে জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করার মনস্থির করলেন। আঠার মাইল দূরের সিরিকোট পাহাড় হতে লাকড়ী সংগ্রহ করে নিজ কাঁধে করে পায়ে হেঁটে পীরের বাড়ীতে নিয়ে আসার খিদমতে তিনি আত্মনিয়োগ করেন। বংশ মর্যাদা, সামাজিক প্রতিপত্তি, যশ-খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠাকে তুচ্ছজ্ঞান করে এ আলিম-ই দ্বীন এবং ব্যবসায়ী নিজ আমিত্বকে বিলীন করে দেন। অথচ তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় পীর-মুরশীদ কখনও তাঁকে এ কাজ করার নির্দেশ দেননি; বরং জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে বারণও করে দেন। মাত্র ক’দিন যেতে না যেতে তাঁর কাঁধে আকস্মিক এক ফোঁড়া উঠল। আরোগ্য হতে লাগল নয় মাস। পরে তিনি একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও এ কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
আধ্যাত্মিক উৎর্কষতা সাধনে আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হির অদম্য স্পৃহা ও মনের ব্যাকুলতা দেখে তার পীর হযরত আল্লামা আবদুর রহমান চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁকে আশ্বস্ত করেন। তা বর্ণনা প্রদান করেন স্বয়ং আল্লামা সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি এভাবে, “একদা আমি হুযুর কিবলা আল্লামা আবদুর রহমান চৌহরভী রহমাতুল্লাহির হুযরা শরীফের সম্মুখস্থ বারান্দায় এ বিষয়ে চিন্তা মগ্ন ছিলাম। হঠাৎ হুযুর দরজা খুলে এসে আমাকে উদ্দেশ করে সম্মুখস্থ নবনির্মিত মসজিদের দিকে ইশারা করে বলতে লাগলেন- “দেখ! এই মসজিদের বাইরে চুনকাম করা হচ্ছে।” পরে দেখা গেল, আমি চৌহর শরীফে যাতায়তকালে যখনই কোন কিছুর দিকে দেখি না কেন; তা আমাকে সালাম দিতে থাকে আর আমিও সালামের উত্তর দিতে লাগলাম। পরে বুঝতে পারলাম যে, এ দ্বারা আমার সময় নষ্ট হচ্ছে তাই সে দিকে খেয়াল ছেড়ে দিলাম।”
অতঃপর পীরের নির্দেশে ১৯২০ সালে র্বামার উদ্দেশ্যে পুনরায় স্বদেশ ত্যাগ করেন এবং সেখানে প্রায় ষোল বছর অবস্থান করেন। সেখানকার বিভিন্ন মসজিদে তিনি ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং সাধারণ মুসলমানদেরকে ইসলামের সঠিক রূপরেখার দিক-নির্দেশনা দান করেন। ১৯২৩ সালে কিম্বা তৎপরবর্তী সময়ে তিনি তাঁর পীর কর্তৃক খিলাফত ও ইজাযত প্রাপ্ত হন। ফলে তাঁর ব্যক্তিত্বে এমন প্রবল আকর্ষণ হয় যে, তাঁর সান্নিধ্যে এসে মানুষ উদ্দীপ্ত হতে লাগল। প্রতিনিয়ত উম্মোচিত হতে লাগল তাঁর অসাধারণ খোদাপ্রাপ্ত শক্তি ও অলৌকিকত্ব। সে সময়ে রেঙ্গুনে সংঘটিত প্রসিদ্ধ অলৌকিক ঘটনাসমূহ হতে ক’টি নিচে প্রদত্ত হল-
১. আল্লামা সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি যখনই মসজিদে রুকু-সিজদা করতেন, তখন তাঁর সাথে সাথে মসজিদের মিনার কাত হয়ে যেত। এমনকি মসজিদের আশে-পাশের গাছ-গাছালিকেও সিজদায় অবনত হতে দেখা গেছে। তা দেখে সেখানকার খ্যাতনামা অলি আবদুল হামিদ প্রকাশ সুলতানুল আউলিয়া একদা শোরগোল করে উঠেন এবং বায়’আত হওয়ার অভিলাষ ব্যক্ত করলেন।
২. বাঙ্গালী মসজিদে তিনি প্রত্যহ আসরের নামাজের পর তাকরীর করতেন। সেখানে উপস্থিত মুসল্লীদের জন্য তিনি প্রতিদিন একপোয়া (২৫০ গ্রাম) ওজনের খাবার সংকুলান হয়, এমন ঢেক্সিতে তিনি হালুয়া রান্না করতেন এবং নিজ হাতে পরিবেশন করতেন। দেখা যেত- কোন কোন দিন ৪০ থেকে ৫০ জনও উপস্থিত থাকত। সবাই সমানভাবে খাবার গ্রহণ করতেন।
৩. উক্ত মসজিদের মুয়াজ্জিন বলেন, একদা আমি মাগরিবের সময় মসজিদ সাফ করে সংলগ্ন হাউযে গেলাম, তখন দেখি তিনি সেখানে অযু করতেছেন। ঐ সময় মসজিদের দোতলায় গিয়ে দেখি তিনি সেখানে মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে তাকরীর ফরমাচ্ছেন।
৪. ১৯২৮ সালে শা’বান মাসের ৩ তারিখ, বুধবার যোহরের সময় হুযূর কিবলা আল্লামা সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি’র প্রথম পুত্র আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সালিহ শাহ রহমাতুল্লাহি আলায়হি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সে দিন আসরের নামাযের পর আল্লামা সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি বার্মার রেঙ্গুনের বাঙ্গালী মসজিদ সংশ্লিষ্ট হুযরাতে দরজা বন্ধ করে ঢুকে পড়েন র্দীঘণ ধরে। ওদিকে ঐ সময়ে নিজবাড়ীর সন্নিকটস্থ জানাযার মাঠে তাঁকে ঐ সন্তানের নামায পড়াতে দেখা যায়।
ইত্যবসরে তিনি পীরের নির্দেশ মত ‘মাজমূ’আহ্ সালাওয়াতির (রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম)’ গ্রন্থটি ছাপানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ১৯৩৩ সালে প্রথমবারের মত এ বিস্ময়কর গ্রন্থটির মুদ্রিত কপি মুসলিম বিশ্বে তুলে ধরে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তা ছাড়াও পীরের একান্ত ইচ্ছাতে ১৯০২ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা “দারুল উলূম ইসলামিয়া রহমানিয়া’’র উন্নয়নে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দেন। পীরের ইন্তিকালের পর প্রায় চল্লিশ বছর ধরে তিনি নিজেই উক্ত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন ও প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। এভাবে তিনি স্বীয় পীরের অর্পিত সকল দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। বাস্তবিকপক্ষে তাঁর অলিত্ব ছিল মাতৃ গর্ভজাত; তাঁর কর্মময় জীবন আলোচনায় বলা যায়, এ সকল নিঃস্বার্থ সাধ্যাতীত কর্মের জন্যই আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সৃষ্টি করেছেন।
উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে যে সকল ওলামা- আউলিয়া এ উপমহাদেশে ইসলামের সঠিক রূপরেখার দিক-নির্দেশনা দানে ব্রত ছিলেন; তাঁদের জীবনীতে দেখা যায় যে, তাঁরা বক্তব্য-লেখনী ও তাসাউফ বা ত্বরীকতের অনুশীলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন। সে সময় তাঁদেরকে কেন্দ্র করে খানকাহ-মাদ্রাসা ইত্যাদি গড়ে উঠেছিল বটে; কিন্তু তাঁরা যতদিন দুনিয়াতে ছিলেন; ততদিন তা শিক্ষা-দীক্ষার কেন্দ্ররূপে প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাঁদের পরবর্তীকালের সুন্নী মুসলিম জনসাধারণের জন্য পৃথক কোন স্থায়ী মাদ্রাসা ছিল না; যেখানে গিয়ে গরীব- ইয়াতীমরা সত্যিকারের দ্বীনী শিক্ষা গ্রহন করবে, মুসলমানগণ একত্রিত হয়ে পূর্বসূরিদের রচিত গ্রন্থাবলী অধ্যয়ন করবে, পাঠ পর্যালোচনা করবে। অধিকন্তু ব্রিটিশ শাসক ও হিন্দু সমাজপতিদের ষড়যন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিত মুসলমানদের আর্থিক অবস্থাও ক্রমাগত অবনতি হতে থাকে। হযরত আল্লামা আবদুর রহমান চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি এহেন দুরবস্থা হতে পরিত্রাণের জন্য পৃথক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে যে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন, তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালে আল্লামা সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলায়হি চট্টগ্রামের ষোলশহরে “জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া”প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছর এ মাদ্রাসার সুষ্ঠ-সুন্দর পরিচালনার জন্য স্থানীয় বিত্তশালী ও শিক্ষানুরাগীকে নিয়ে একটি ট্রাস্টও গড়ে তুলেন। সেটির নাম রাখেন “আনজুমান-ই রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট”। পরবর্তীকালে এ ট্রাস্টের মাধ্যমে অসংখ্য মাদ্রাসা-মসজিদ, খানকাহ-এতিমখানা নির্মাণ ও সুষ্টু পরিচালন হয়ে আসছে। অধুনা এ সব প্রতিষ্ঠান কেবল আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আতের মতাদর্শের ভিত্তিতে ধর্মীয় ও আধুনিক জ্ঞানর্চচার কেন্দ্ররূপে সুপরিচিত।
হযরত আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলায়হি শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামর বংশধর ছিলেন তা নয়; বরং আশিক-ই রাসূলও ছিলেন। তাই নবীদ্রোহী, ধর্মদ্রোহী ও ইসলাম বিদ্বেষীদের ব্যাপারে ছিলেন আপোষহীন সিপাহশালার। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তিনি ছিলেন অকুতোভয় সৈনিক। হিন্দু পরিচালিত কংগ্রেসের বিপে ছিল তাঁর কঠোর অবস্থান। সালফ-ই সালিহীনের অনুসৃত পথ ও মতকে ধারণ করে তিনি এ দেশে হানাফী মাযহাব ও সুন্নিয়ত প্রতিষ্ঠায় ছিলেন অগ্রনায়ক। তাঁর প্রতিটি কার্যকলাপে সুন্নাতই প্রকাশ পেত। শতবছরে উপনীত এ মহাপুরুষ কখনও ফরয ইবাদত ত্যাগ করেননি। তাঁর নিকটে থেকে যাঁরা তাঁকে দেখেছেন; তাঁদের মতে, তাঁর নিদ্রাটাও ছিল সুন্নত উপায়ে। রাত্রের বেশীরভাগ সময় তিনি থাকতেন জাগ্রত। তাঁর মতে, সুন্নাতের উপর অটল থাকা-ই প্রকৃত কারামত।
মোটকথা, আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলায়হির জন্ম পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে হলেও তাঁর পদচারনা স্বদেশ ছাড়াও সুদূর আফ্রিকা, মায়ানমার (র্বামা), ভারত ও বাংলাদেশে বিদ্যমান। এ সব দেশে তাঁর অবদান রেখে যান তিনি।
আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রিযা খান রহমাতুল্লাহি আলায়হি সহ পূর্বেকার সকল সুন্নী ওলামা-মাশায়িখের রচনাসম্ভার মুসলমানদের হিদায়ত বা দিক-নির্দেশনার জন্য এ পর্যন্ত তিনি যথেষ্ট মনে করেছিলেন। কিন্তু ইসলামী প্রত্যয়ে যুগে যুগে সৃষ্ট মতবাদগুলোর নানা রকম বিভ্রান্তি ঐ সকল রচনাবলীর আলোকে যথাযথ বিচার-বিশেষণে যে উপযুক্ত আলিম-এ দ্বীন ও পরিবেশ দরকার এবং তজ্জন্য প্রতিষ্ঠানের যে শূন্যতা মুসলিম সমাজে বিরাজ করছিল; তুলনামূলকভাবে সুন্নী জনগণ যে অনেক পিছিয়ে পড়েছিল, তা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রতিষ্ঠান বির্নিমানে গঠনমূলক কর্ম প্রয়াস পান আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলায়হি। একই সাথে সাধারণ মানুষের কর্মব্যস্ততা বিচার পূর্বক তিনি তাদের দোর গোড়ায় ধর্মকর্ম ও ক্বাদিরীয়া ত্বরীকাকে অতি সহজে পালনযোগ্য করে পৌঁছে দেন। তাঁর প্রচারিত ক্বাদিরীয়া ত্বরীকার এ ধারাটি নিখাদ-নিটোল হওয়ার কারণে আপন মহিমায় ভাস্বর। এ ত্বরীকা বা কোন শায়খের ব্যাপারে কারোর দ্বিমত বা আপত্তি নেই। ত্বরীকার মাঝে যেমন বিচ্ছিন্নতা নেই, তেমনি কোন শায়খ-ই ভ্রান্ত দলের সাথে সম্পৃক্ত নন; বরং প্রত্যেকে স্ব স্ব যুগে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আতের উপর প্রতিষ্ঠিত অলি-এ কামিল। এ ত্বরীকার প্রতিটি কর্মাচরন কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত। তাই তাসাউফ অস্বীকারকারীদের জন্য এ ত্বরীকা বিরাট চ্যালেঞ্জ আর ত্বরীকতপন্থীদের জন্য আদর্শ মডেলও। আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলায়হি’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে হাজার হাজার বিধর্মী ইসলাম গ্রহণ করেন এবং লক্ষ লক্ষ মুসলমান সঠিক পথের সন্ধান লাভ করে। মূলত তিনি স্বীয় পীর-মুরশিদের ইচ্ছার বাস্তব রূপদানের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট ছিলেন।