নিজস্ব প্রতিবেদক:

মাদরাসার পাঠ্যবইয়ে লেখা হয়েছে মাজারে গিয়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। মাজারে বসবাসকারী ফকির মিসকিনদের সহায়তার জন্য মান্নত করায় কোনো ক্ষতি নেই।

আলিয়া মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পাঠ্যবইয়ের নাম ‘আকাইদ ও ফিকহ্’। এ বইয়ের ৮৯ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম ‘ওলিগণের মাজার শরিফ জেয়ারত’। এখানে লেখা হয়েছে ‘ওলিগণ যেহেতু দুনিয়া ও আখেরাতে সুসংবাদপ্রাপ্ত তাদের মাজার শরিফে গিয়ে তাদেরকে ওসিলা করে দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয়বন্ধুর সম্মানে দোয়া কবুল করেন।’

মাদরাসায় নবম-দশম শ্রেণীর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যবই হলো ‘আকাইদ ও ফিক্হ’। এ বইয়ের ২৩ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম হলো ‘ইসলামে মানতের বিধান’। এখানে লেখা হয়েছে ‘ওলিদের কবর ও মাজারে মান্নতের ব্যাপারে বিভিন্ন মত রয়েছে। শুদ্ধতম কথা হলো- ওই সব মান্নত দ্বারা যদি মাজারের আশপাশে বসবাসকারী ফকির মিসকিনদের প্রতি সহায়তার নিয়ত করা হয় তবে সে মান্নতে কোনো ক্ষতি নেই।

অষ্টম শ্রেণীর আকাইদ ও ফিকহ্ বইটিতে মাজারে গিয়ে দোয়া করার পক্ষে ইমাম শাফেয়ির নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এতে লেখা হয়েছে- আলি ইবনে মায়মুন বলেন, আমি ইমাম শাফেয়ি রহমাতুল্লাহি আলাইকে বলতে শুনেছি, ‘আমি ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির দ্বারা বরকত হাসিল করি। আমি প্রায়ই তার কবর জেয়ারতে যাই। আমার কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে আমি দুই রাকাত সালাত আদায় করে আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির কবরের কাছে এসে দোআ করি। এতে দ্রুত দোআ কবুল হয়।’ তারিখে বাগদাদ, খতিব বাগদাদি ১/২০৩।

বইটির ৮৮ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম হলো ‘ওলিগণের কারামত’। এখানে লেখা হয়েছে, ওলিগণের কারামতে বিশ্বাস করা ঈমানের অংশ।

অষ্টম শ্রেণীর আকাইদ ও ফিকহ্ বইয়ের ৩১ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম হলো ‘ইবাদতের ক্ষেত্রে ওসিলা গ্রহণ’। এখানে লেখা হয়েছে ‘হযরত ইমাম আ’যম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে বলেছেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনিতো সেই মহান ব্যক্তি, আদম আলাইহিস সালাম পদস্খলন থেকে আপনাকে ওসিলা করে সফল হয়েছেন অথচ তিনি আপনার আদি পিতা। আপনার ওসিলা নিয়ে ইব্রাহিম খলিল অগ্নিকুণ্ডে পড়ার সাথে সাথে আগুন ঠাণ্ডা হয়ে যায়, আপনার নূরের তাজাল্লিতে আগুন নিভে যায়।’ (কাসিদায়ে নো’মান)

এখানে আরো লেখা হয়েছে আল্লাহ তায়ালার নিয়মই হলো তিনি সরাসরি সবকিছু করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কোনো মাধ্যম ছাড়া কিছু দেন না। তাই নিজেই ওসিলা অন্বেষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

পাঠ্যবইয়ে ওসিলার স্বপক্ষে সূরা মায়েদার ৩৫ নম্বর আয়াতকে ব্যবহার করা হয়েছে। ৩৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং তার কাছে ওসিলা তালাশ কর।’

দাখিল অষ্টম শ্রেণী ও দাখিল নবম-দশম শ্রেণীর জন্য পাঠ্য আকাইদ ও ফিক্হ বই দু’টি বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রণীত এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবি কর্তৃক প্রকাশিত। বই দু’টি প্রথম প্রকাশ করা হয় ২০১৩ সালে। পাঠ্য করা হয় ২০১৪ সালে। ২০১৮ সালে পরিমার্জন করা হয়।

মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, পবিত্র কুরআনে ওসিলার ব্যাখ্যায় কোনো তাফসিরকারকই মাধ্যম বা মাধ্যম ধরা বোঝাননি। ওসিলা বলতে সব তাফসিরকারক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, নেক আমল, সৎকাজ তথা আমলে সালেহকে বুঝিয়েছেন।

দাখিল অষ্টম ও দাখিল নবম-দশম শ্রেণীর এ বই দুইটির রচয়িতা হিসেবে নাম লেখা রয়েছে অধ্যক্ষ ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান, অধ্যক্ষ ড. মাওলানা মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম আল মারুফ, উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক। বই দু’টি সম্পাদনা করেছেন মাওলানা রুহুল আমিন খান।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here